রাজধানীতে ভুয়া পুলিশ ভেরিফিকেশনসহ বিভিন্ন জালিয়াতির মাধ্যমে খুব সহজেই ড্রাইভিং লাইসেন্স পাইয়ে দেয়ার রমরমা ব্যবসার সাথে জড়িত দালালচক্রের ১০ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এর গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগ। যারা নিজেদের পরিচয় দিত বাংলাদেশ রোড এন্ড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) এর কর্মকর্তা হিসেবে।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- মোঃ লিটন পাইক, সুজন পাইক, মোঃ হাসান শেখ ওরফে আকচান, মোহাম্মদ আলী ওরফে মিস্টার, মোঃ আব্দুল খালেক, মোঃ আব্দুল্লাহ রনি, মোঃ সোহেল রানা, মোঃ সোহাগ, মোঃ নুরনবী ও মোঃ হুমায়ুন কবির। এসময় তাদের হেফাজত থেকে বিপুল পরিমাণ ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন ফাইল, শিক্ষানবীস ড্রাইভিং লাইসেন্স এর আবেদন ফরম, ডোপ টেস্ট ফাইল, ০২ টি মনিটর, ০২ টি সিপিইউ, ০২ টি কিবোর্ড, ০১ টি কালার প্রিন্টার, লেমিলেটিং মেশিন ০১ টি, ভিজিএ কেবল ০২ টি ,পাওয়ার কর্ড ০২ টি, ০২ টি নোকিয়া মোবাইল, ০২টি Samsung Duos, ০১ টি ওয়ালটন L6i ও VMAX মোবাইল, ০৬ টি সীল, ০৪ টি নোকিয়া কি-প্যাড মোবাইল, বিভিন্ন মডেলের ৪টি স্মার্ট ফোট উদ্ধারমূলে জব্দ করা হয়।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখ থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা তাদের গ্রেফতার করে গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিম।
আজ বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২) দুপুর ১১:০০ টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার, বিপিএম (বার)।
তিনি বলেন, দেশে বেশ কয়েকটি মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটে। যেখানে বেরিয়ে আসে চালকদের অদক্ষতা, অসাধু উপায়ে খুব সহজেই ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার বিষয়গুলো। এরপর বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নামে গোয়েন্দা পুলিশ। মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনাগুলোর তদন্ত করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। এরই ধারাবাহিকতায় রাজধানীতে বাংলাদেশ রোড এন্ড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) এর ভুয়া অফিস পরিচালনাকারী একটি চক্রের সন্ধান পায় গোয়েন্দা পুলিশ। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ দিবাগত রাতে দারুসসালাম থানার মিরপুর মাজার রোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন ফাইলসহ লিটন, সুজন ও হাসানকে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি আরো বলেন, গোয়েন্দা পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে জব্দকৃত ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন ফাইল পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রতিবেদনটি পরীক্ষা করে দেখে। পুলিশ ভেরিফিকেশন বিপি (বাংলাদেশ পুলিশ) নম্বর দেখে গোয়েন্দা পুলিশ বুঝতে পারে বাংলাদেশ পুলিশের বিপি নম্বরের সাথে এর কোন প্রকার সামঞ্জস্যতা নেই। তখন বিষয়টি গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসা করলে তারা স্বীকার করে তাদের অন্যান্য সহযোগীদের সহযোগিতায় বিআরটিএ’র কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে আবেদন ফাইলগুলো অফিসের বাহিরে নিয়ে আসা হয়। অতঃপর তারা জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া সিল মোহর যুক্ত স্বাক্ষরিত পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট তৈরি করে গ্রাহকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স বানিয়ে দেয়। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্য মতে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ রাজধানীর মিরপুরে দিয়াবাড়ী বিআরটিএ অফিস ও এর আশে পাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই জালিয়াতি চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, নিয়মকে অনিয়মে পরিণত করে এই দালাল চক্র। বিআরটিএ এর কিছু অসাধু কর্মকতার সাথে যোগসাজস করে কোন প্রকার প্রশিক্ষণ ছাড়াই অদক্ষ ড্রাইভারদের ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরী করে দিতো। এর ফলে লাইসেন্স পাচ্ছে অদক্ষ ড্রাইভার, দিন দিন বাড়ছে দূর্ঘটনার সংখ্যা।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে দারুসসালাম থানায় মামলা রুজু হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এর গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার রাজীব আল মাসুদ, বিপিএম এর দিক নির্দেশনায়, অতিঃ উপ-পুলিশ কমিশনার হাসান আরাফাত, বিপিএম, পিপিএম এর তত্ত্বাবধানে এবং সহকারী পুলিশ কমিশনার মধুসূদন দাস এর নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিম বিশেষ অভিযানটি পরিচালনা করে।