ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ত্যাগ তথা ব্রেক্সিট ইস্যুতে মতানৈক্যের জেরে নিজ দলের মধ্য থেকে প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মের পদত্যাগের দাবি উঠেছে। তাঁর প্রস্তাবিত ব্রেক্সিট চুক্তি কোনোভাবেই পার্লামেন্টে পাস হতে না দেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন দলের পার্লামেন্ট সদস্যরা (এমপি)। অন্যদিকে সব পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী মে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মের প্রস্তাবিত ব্রেক্সিট চুক্তির বিষয়ে এরই মধ্যে ইইউর সঙ্গে তাঁর মতৈক্য হয়। গত বুধবার পাঁচ ঘণ্টার বৈঠকে তিনি তাঁর মন্ত্রিসভার সম্মতি আদায় করতে পেরেছেন, এমন কথাও জানান। কিন্তু এ খসড়া চুক্তির বিরোধিতা করে গত বৃহস্পতিবার দুই মন্ত্রী পদত্যাগ করেন। তাঁরা হচ্ছেন উত্তর আয়ারল্যান্ডবিষয়ক মন্ত্রী শেইলেশ ভারা ও অন্যজন ব্রেক্সিটমন্ত্রী ডমিনিক রাব। ব্রেক্সিট বিতর্কের জেরে দুই মন্ত্রীর পদত্যাগের মধ্য দিয়ে অস্থিতিশীলতা শুরুর ২৪ ঘণ্টার মাথায় গতকাল শুক্রবার মের পদত্যাগের দাবি উঠল। কনজারভেটিভ পার্টির এমপি জ্যাকব রিস-মগ এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী মের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে চিঠি লিখেছেন। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটের আয়োজন করতে হলে কমপক্ষে ৪৮ জন এমপির চিঠি প্রয়োজন। এরপর ৩১৫ সদস্যের আইনসভায় ভোটাভুটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ এমপি তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকাশ করলে তবেই মের অপসারণ নিশ্চিত হবে।
মের বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটের আশঙ্কা এখনো পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। তবে তাঁর নিজ দলের এমপিরা জানিয়েছেন দিয়েছেন, প্রস্তাবিত ব্রেক্সিট চুক্তি পাস করার জন্য তাঁরা কোনো সমর্থন দেবেন না। এ ছাড়া ক্ষমতাসীন জোটের সঙ্গে থাকা এবং পার্লামেন্টে ১০টি আসন অধিকার করে রাখা উত্তর আয়ারল্যান্ডের ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টি (ডিইউপি) জানিয়েছে, তারাও খসড়া ব্রেক্সিট চুক্তিতে সমর্থন দেবে না। ডিইউপি নেতা আরলিন ফস্টারের বরাত দিয়ে দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, মে প্রধানমন্ত্রিত্ব না ছাড়লে কনজারভেটিভদের সঙ্গে সম্পর্কও রাখবে না তাঁর দল।
কনজারভেটিভ এমপি ও জোটসঙ্গীদের এমন অবস্থানের বিপরীতে মে নিজের অনড় অবস্থান জানান দেন এবং পদত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, ‘আমি কি এসবের মুখোমুখি হব? হ্যাঁ।’ এ সংকট কাটাতে খসড়া ব্রেক্সিট চুক্তির বিষয়ে গণভোট করার কথা বলছেন বিরোধীদলীয় রাজনীতিক জন ম্যাকডোনেল। ২০১৬ সালে গণভোটের রায়ে ব্রিটেন ব্রেক্সিটের পথে এসেছে, সেটা উল্লেখ করে লেবার পার্টির এ নেতা বলেন, ‘আমরা যদি (গণভোটকে) সম্মান দেখানোর মতো একটা চুক্তি করতে না পারি এবং সেই সঙ্গে কর্মসংস্থান ও অর্থনীতিকে সুরক্ষা দিতে না পারি তবে সাধারণ নির্বাচনকে আমরা প্রাধান্য দেব। কিন্তু আমরা যদি সেটা করতে না পারি, তবে হ্যাঁ, গণভোটের বিষয়টিই সামনে আনা হবে।’
ব্রেক্সিটমন্ত্রিত্ব নেবেন না পরিবেশমন্ত্রী গভ : ব্রিটেনের বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম গতকাল শুক্রবার জানিয়েছে, মতানৈক্যের জেরে ডমিনিক রাব ব্রেক্সিটমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর এ দপ্তরের দায়িত্ব নিতে পরিবেশমন্ত্রী মাইকেল গভকে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মে। তবে গভ ওই দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করেছেন।
খসড়া ব্রেক্সিট চুক্তির ব্যাপারে শুধু মের নিজ দলের এমপিরাই বিরোধিতা করছেন, তেমনটা নয়। সমালোচকরাও মনে করেন, খসড়া চুক্তিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোয় অনেক বেশি ছাড় দিয়ে ফেলেছেন। এর মধ্যে উত্তর আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে ব্রিটেনের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক ও সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের বিষয়ও রয়েছে। গত জুলাইয়ে ব্রেক্সিটমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেওয়া ডেভিড ডেভিস গতকাল বিবিসি রেডিওকে বলেন, ‘এ চুক্তিতে সম্মতি দেওয়া আমাদের উচিত হবে না।’ খসড়া চুক্তিটিকে তিনি ‘ভয়ংকর প্রস্তাব’ অ্যাখ্যা দেন।
ব্রেক্সিট বিতর্ক নিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের পাশাপাশি আলোচনা চলছে ইউরোপের অন্যান্য দেশের সংবাদমাধ্যমেও। ফ্রান্সের দৈনিক লে ফিগারো লিখেছে, মের ব্রেক্সিট ‘তারে ঝুলে আছে’। ইতালির সম্প্রচারমাধ্যম রাই বলেছে, মে তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বের ‘দীর্ঘতম ও কঠিনতম সংকট’ পার করছেন। জার্মানির সংবাদপত্র ডাই ওয়েলত লিখেছে, ব্রিটেন ‘গভীর রাজনৈতিক সংকটে’ ডুবে আছে এবং ‘টেরেসা মে ও ব্রেক্সিটের ভাগ্য সুতায় ঝুলছে’। সূত্র : এএফপি, ইনডিপেনডেন্ট।