মনুষ্যসৃষ্ট কারণ, প্রতিকূল পরিবেশসহ নানাবিধ কারণে আশঙ্কা করা হচ্ছে, শিগগিরই পৃথিবী থেকে মুছে যাবে হাজার প্রজাতির প্রাণী।
পৃথিবীতে যেভাবে প্রাণীর সংখ্যা ব্যাপক হারে কমছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে জীবজগতের আরো একটি গণবিলুপ্তি অপেক্ষা করছে। বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়েছে ১৪ প্রজাতির প্রাণী এবং ৩০ প্রজাতির পাখি।
প্রাণী বিজ্ঞানীরা প্রাণীকুলের এই মহাদুর্যোগের নাম দিয়েছেন, ‘সিক্সথ মেস এক্সটিঙ্কশান এরা অব বায়োলজিক্যাল এনিহিলেশান’ বা ‘ষষ্ঠ গণবিলুপ্তি’। নিউইয়র্কের ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের একটি গবেষণায় সম্প্রতি এমন তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত পাঁচটি গণবিলুপ্তির ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানে আমরা ষষ্ঠ বিলুপ্তির পথে হাঁটছি বলে দাবি করা হয়েছে ওই গবেষণাপত্রে। তবে এর মধ্যে পার্থক্য হলো, এর আগের পাঁচটি গণবিলুপ্তি প্রাকৃতিক কারণে ঘটেছিল, এবারের গণবিলুপ্তি সত্যিই ঘটলে, তা হবে মানুষের তৈরি কারণে।
এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, যেভাবে বন্যপ্রাণীদের বসবাসের জায়গা দখল করে নিচ্ছে মানুষ এবং যেভাবে দূষণের মাত্রা বাড়ছে, তাতে জীবজগতের গণবিলুপ্তি সময়ের অপেক্ষা বলে মনে করা হচ্ছে।
গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, স্তন্যপায়ী, পাখি ও সরীসৃপদের বসবাসের ৩০ শতাংশ জায়গা দখল করে নিয়েছে মানুষ। তারা বলছেন, বিলুপ্তির পথে পৃথিবীর হাজারের ওপর প্রজাতি। ছোট্ট চড়ুই পাখি থেকে রাজকীয় জিরাফ, শিগগিরই হারিয়ে যাবে এরকম বহু প্রাণী। ঠিক যেভাবে গণবিলুপ্তি ঘটেছিল ডাইনোসরদের, সেভাবেই পৃথিবী থেকে মুছে যাবে আমাদের চেনাজানা বহু প্রাণী।
সবচেয়ে চিন্তার বিষয় হলো, স্তন্যপায়ী প্রাণীর সংখ্যা কমেছে প্রায় ৭০ শতাংশ। যেসব প্রাণীকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে চিতা, আফ্রিকান সিংহ, প্যাঙ্গোলিন এবং জিরাফ। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, গত ১০০ বছরে অন্তত ২০০টি প্রজাতির প্রাণী ইতিমধ্যেই পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছে। এখনই সতর্ক না হলে ডাইনোসরদের মতোই এই পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাবে চিতা, সিংহ, জিরাফও।
বন বিভাগের তথ্যমতে, গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য ১৪টি প্রাণীর প্রজাতি বিলুপ্ত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- ডোরাকাটা হায়েনা, গ্রে উল্ফ (ধূসর নেকড়ে), বারাশিঙা বা কাদা হরিণ, ব্ল্যাকবাক (হরিণ জাতীয়), নীলগাই, গাওর, বানটেং (এক ধরনের বুনো মোষ), বন্য জলমহিষ, সুমাত্রান গণ্ডার, জাভান গণ্ডার, ভারতীয় গণ্ডার, দেশি ময়ূর, পিঙ্ক হেডেড ডাক (পাখি) ও মিঠা পানির কুমির।