রাজধানীতে ব্যবসায়ীকে ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে আটক করে পরে ডাকাতি করার ঘটনায় ডিবি’র পরিচয়দানকারী ৮জন ডাকাতকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই ঢাকা মেট্রোর একটি বিশেষ টিম।
গ্রেফতারকৃত ডাকাতরা হলো- (ডাকাত দলের প্রধান-ডিবির এসি পরিচয়দানকারী) একেএম রানা (৩৮), মোঃ দেলোয়ার হোসেন (৫০), মোঃ সোহাগ খন্দকার (৩১), মোঃ জাবেদ আহমেদ @ বাবু (৩৭), মোঃ বুলবুল আহমেদ (৩২), মোঃ নাজমুল হোসেন (২৪), মোঃ আসাদুজ্জামান (৩৫) ও মোঃ হারুন @ হিরা (৩২)।
১৯ নভেম্বর ২০১৮ সন্ধ্যা ৬.১৫ টায় সূত্রাপুর থানাধীন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপরীতে ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে হতে পিবিআই ঢাকা মেট্রোর একটি বিশেষ টিম অভিযান করে তাদেরকে গ্রেফতার করে। এ সময় তাদের হেফাজত হতে ৪ টি মটর সাইকেল, ৩ টি ওয়ার্লেস সেট, হ্যান্ডকাফ ১ জোড়া, খেলনা পিস্তল ২ টি, চাপাতি ১ টি ও চাকু ১ টি উদ্ধার করে জব্দ করা হয়।
ঘটনায় প্রকাশ যে, জনৈক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান (২৮) ঢাকা অভিযোগ করেন যে, ২৫ অক্টোবর ২০১৮ বিকাল অনুমান ৩.০০ টায় পল্টন হতে খিলক্ষেত বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে তিনি এবং তার বন্ধু মোঃ পলাশ (২৫) সুপ্রভাত গাড়িতে উঠেন। বাসটি নর্দ্দা আসার পর কয়েকজন ব্যক্তি বাসটির সামনে ২ টি মোটর সাইকেল দ্বারা ব্যারিকেড দিয়ে বাস থামিয়ে বাসের ভিতর উঠে। তাদের ১ জনের কাছে ওয়ার্লেস সেট ও ২ জনের পরনে ডিবি লেখা জ্যাকেট ছিল। উক্ত ব্যক্তিরা তাকে ও তার বন্ধুকে বলে “আমরা ডিবির লোক, আমাদের কাছে তথ্য আছে তোরা ইয়াবা খাস, তোদের কাছে ইয়াবা আছে”। এই বলে ভিকটিম মোস্তাফিজুর রহমান এবং তার বন্ধুকে জোরপূর্বক বাস থেকে নামায়। প্রতারকরা ভিকটিম ও তার বন্ধুকে চড়-থাপ্পর, কিল-ঘুষি মারতে থাকে এবং ভিকটিমের পকেটে থাকা নগদ ৪২,০০০/-টাকা ও ২টি মোবাইল ফোন, সিঙ্গাপুরের ওয়ার্ক পারমিট কার্ড এবং ভিকটিমের বন্ধুর কাছে থাকা নগদ ১৫,০০০/-টাকা ও ১টি মোবাইল ফোন জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়। ভিকটিমের বন্ধুর কাছে ইয়াবা আছে বলে তার বন্ধুকে সার্চ করে কিছু না পেয়ে তাকে ছেড়ে দেয়। পরে ভিকটিমের ব্যাগে ইয়াবা আছে বলে তাকে জোর করে মোটর সাইকেলে উঠায় এবং আরো কয়েকটি মটর সাইকেল পিছনে পিছনে অনুসরন করতে থাকে। ভিকটিম বলে “আমাকে কোথায় নিয়ে যাবেন”। ওদের মধ্যে যার হাতে ওয়ার্লেস ছিল সে বলে “তোকে থানায় নিয়ে সার্চ করে মামলা দিয়ে দিব”। এই বলে ভিকটিমকে নিয়ে নর্দ্দা বাসষ্ট্যান্ড হতে গুলশান, বাড্ডা, হাতিরঝিল এলাকায় ঘুরতে থাকে। পথিমধ্যে ভিকটিম আবারও উক্ত ব্যক্তিদের বলে “আমাকে কোন থানায় নিয়া যাবেন”। তখন তারা বলে “এইতো সামনে”। এই বলে ভিকটিমকে মোটর সাইকেল দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরায় এবং ফাঁকা জায়গা দেখে মোটর সাইকেল থামানোর চেষ্টা করে। যখন দেখে মানুষজন আছে তখন আর মোটর সাইকেল থামায় না। পরবর্তীতে ৩.৪৫ টায় ভিকটিমকে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানাধীন বিএসটিআই মোড়স্থ ফাকা জায়গায় নিয়ে আসে। ভিকটিমকে বলে “তোকে আজকের মত ছেড়ে দিলাম। তুই আর ইয়াবা খাবি না”। এই বলে ভিকটিমের কাছ থেকে টানাটানি করে তার ব্যাগটি নেয়ার চেষ্টা করে। উল্লেখ্য যে, ভিকটিমের ব্যাগে ১৩,০০,০০০/-(তের লক্ষ) টাকা ছিল। ভিকটিম দিতে অস্বীকার করলে উক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে থেকে একজন বলে “ওকে শেষ করে দে”। এই কথা বলা মাত্রই তাদের একজন ভিকটিমের গলায় চাকু ধরে এলোপাতারি কিল-ঘুষি, চড়-থাপ্পর মারতে থাকে। তখন ভিকটিম বুঝতে পারেন তারা পুলিশ না, তারা জোরপূর্বক ভিকটিমকে অপহরণ করেছে। ভিকটিম তখন ডাকাত ডাকাত বলে ডাক-চিৎকার করতে থাকেন। ভিকটিমের ডাক-চিৎকারে আশেপাশের লোকজন ছুটে আসে। তখন আসামীরা ভিকটিমের ব্যাগটি ছেড়ে দিয়ে মোটর সাইকেল যোগে দ্রুত পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় ভিকটিম মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটি পিবিআই ঢাকা মেট্রো তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা হতে অধিগ্রহণ করে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে।
আসামীদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে তারা উক্ত ঘটনার বিষয়টি স্বীকার করে এবং তারা দীর্ঘদিন থেকে ঢাকা শহরে ব্যবসায়ীদের আটক করে ডাকাতি করেছে সংক্রান্তে বেশ কিছু তথ্য প্রদান করে। ভিকটিম (বাদী) মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান আসামীদের সনাক্ত করে।
আটককৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে পিবিআই জানতে পারে, আটক আসামীরা ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করে থাকে। উক্ত ডাকাত চক্র তাদের নিয়োজিত সোর্সের মাধ্যমে ঢাকা শহরের ব্যবসা কেন্দ্র তাতী বাজার, শাখারী বাজার, ইসলামপুরসহ বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীদের বড় অংকের নগদ টাকার লেনদেন সর্ম্পকে তথ্য সংগ্রহ করে টাকা পয়সা নিয়ে যাওয়ার সময় অনুসরন করে। পথিমধ্যে উক্ত ব্যবসায়ীদের কাছে নিজেদেরকে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে তাদের কাছে অবৈধ জিনিস আছে বলে আটক করে এবং মটর সাইকেল করে কখনোবা তাদের নির্ধারিত মাইক্রোবাসে করে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে নিরিবিলি ও সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মারধর করে ব্যবসায়ীদের কাছে থাকা টাকা পয়সা, মোবাইলসহ মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যায়। ডাকাত দলের নিয়োজিত সোর্সকে লুন্ঠিত টাকার ৪০% ভাগ দিয়ে দেয়।
ঘটনায় জড়িত পলাতক ও সহযোগি অন্যান্য ডাকাতদের গ্রেফতারের প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে এবং ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাসসহ ডিবি পুলিশ লেখা জ্যাকেট উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।