ডিএমপি নিউজ: আজ (২৭ অক্টোবর, ২০১৮) হোটেল লেকশোর এ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ’র কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট ‘তারুণ্যের শক্তিই রুখতে পারে উগ্রবাদ’ শীর্ষক ওয়ার্কশপের আয়োজন করে। উক্ত ওয়ার্কশপে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া বিপিএম (বার), পিপিএম। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কাউন্টার টেরোরিজমের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো মনিরুল ইসলাম বিপিএম-বার, পিপিএম-বার ও ডিএমপি’র উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষার্থীরা।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে কমিশনার বলেন, জঙ্গিবাদ শুধু আমাদের একার সমস্যা নয়। এটি বৈশ্বিক সমস্যা। বিভিন্ন কারণে এটির উদ্ভব হয়েছে। বিশেষ করে আফগানিস্তান এবং মধ্যপ্রাচ্যে যে রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তন ঘটেছে সেগুলোর কারনেই এই ধরনের উগ্রবাগ, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদের জন্ম হয়েছে। এতো ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
তিনি বলেন, ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে এক ধরনের ধর্ম ব্যবসায়ীরা আজকে এই সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদকে উসকে দিচ্ছে। এর পিছনে রয়েছে সুগভীর আন্তর্জাতিক চক্রান্ত। যার প্রভাব আমাদের বাংলাদেশেও পড়েছে।
ডিএমপি প্রধান বলেন, ২০০৪ সালে ৬৩ জেলায় একসাথে বোমা হামলা হয়েছিল। এটা দূর্ভাগ্যজনক। আমাদের বাঙালির হাজার বছরের সংস্কৃতি অসাম্প্রদায়িক চেতনা। এখানে বামপন্থি বা ডানপন্থি কোনটাই শেষ পর্যন্ত টেকসই হয়নি। কারণ বাঙালি সমাজ ব্যবস্থায় এমন উগ্রবাদের কোন স্থান নেই।
কমিশনার বলেন, ১ লা জুলাই, ১৬ হলি আর্টিসানে জঙ্গি হামলার পর আমরা নিরাপত্তা নিয়ে শংকিত হয়ে পড়ি, গণতন্ত্র, সমাজ ব্যবস্থা, দেশের উন্নয়ন নিয়ে শংকিত হয়ে পড়ি। এটি ছিল আমাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উগ্রবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির ফলে সেই সময় সমাজের প্রত্যেকটি দায়িত্বশীল, পেশাজীবী সবাই মিলে একটি নাগরিক ঐক্য গড়ে উঠেছিল। আমরা সেই পরিস্থিতি সামাল দিয়েছি।
তিনি বলেন, আমরা বলতে পারি সন্ত্রাসীদের নেটওয়ার্ককে আমরা ভেঙে দিতে পেরেছি। তবে আশংকা এখনও দূর হয়নি। নীরবে, নিভৃতে এখনো তাদের কার্যক্রম চলছে। এটি এক ধরণের ক্যান্সার, এক ধরনের মানসিক বিকৃতি। এক শ্রেণির ধর্ম ব্যবসায়ীরা আমাদের মেধাবী তরুণ ছাত্রদের মগজ ধোলাইয়ের মাধ্যমে তাদের বিভ্রান্ত করে ফেলে। আজকে আমরা যদি সতর্ক না হই, তরুণরা যদি সতর্ক না হোন, তাহলে আরও অনেক তরুণ বিপথে চলে যেতে পারে।
তরুণদের উদ্দেশ্যে কমিশনার বলেন, তরুণরাই পারে একটি পরিবর্তন আনতে। কারণ মুক্তিযুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছে তরুণরা। তেমনি জঙ্গিবাদকে যদি আজ দমন করতে হয়, বাংলাদেশকে যদি সোনার বাংলা, সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে গড়তে চাই, ক্ষুধা দারিদ্র মুক্ত করতে চাই তবে এটা তরুণদেরই করতে হবে। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা সব জায়গায় তরুণদের দায়িত্ব নিতে হবে। পরিবারকে দায়িত্ব নিতে হবে, সন্তান কি করছে, কোন সাইট ব্রাউজ করছে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ কোন না কোন ভাবে এরা মগজ ধোলাইয়ের শিকার হয়ে যায়, এদের পরিবর্তন হয়। এটি ছাড়া আমরা কিন্তু এর থেকে পরিত্রাণ পাব না। এই ব্যাধি, জঙ্গিবাদ , সন্ত্রাসবাদ থেকে জাতিকে বাঁচাতে তরুণদেরই দায়িত্ব নিতে হবে। আমাদের সম্ভাবনাময় বাংলাদেমের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্থ করতে পারে এই উগ্রবাদ, সন্ত্রাসবাদ। মুক্তিযুদ্ধ করে ৩০ লক্ষ শহীদ আমাদের একটি ভূ-খন্ড দিয়ে গেছেন। এটা ধরে রাখার দায়িত্ব তরুণদের।
এ সময় সিটিটিসি প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন-সন্ত্রাসবাদ, টেরোরিজম, উগ্রবাদ মোকাবেলার যে কৌশল এটি একটি জটিল ও দীর্ঘ মেয়াদী প্রক্রিয়া। সন্ত্রাসবাদের যেমন একটি নির্দিষ্ট কারণ নেই, তেমনি এটি মোকাবেলা করতে বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করতে হয়। শুধু ‘ল’ এনফোর্সমেন্ট বা জুডিশিয়াল এপ্রোচ দিয়ে জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। এটি একটি আংশিক প্রক্রিয়া।
তিনি বলেন-হুট করে একটি মানুষ সন্ত্রাসবাদে আসে না। ধীরে ধীরে মগজ ধোলাইয়ের মাধ্যমে তারা এই পথে চলে আসে। বাংলাদেশে যারা জঙ্গিবাদের লিডার, তারা সবসময় দেশের তরুণদের টার্গেট করেছে। তাই আমরাও তরুণদের টার্গেট করতে চাই। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তরুণরা যদি সচেতন হয়, সংঘবদ্ধ হয় তবে যে কাজটা হবে তাহলো ওদের রিক্রুটমেন্ট প্রসেসটা বন্ধ হয়ে যাবে এবং এই তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগিয়েই বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদ মুক্ত করা সম্ভব হবে।