স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন প্রধান অতিথি হিসেবে আজ রোববার সকাল ১০টায় সোনারগাঁও হোটেলে সম্মেলন উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব জনাব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ, ইন্টারপোল মহাসচিব Jurgen STOCK । স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল এ কে এম শহীদুল হক বিপিএম, পিপিএম। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মোঃ মোখলেসুর রহমান। অনুষ্ঠানে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাবৃন্দ এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।
সম্মেলনে আফগানিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, ভুটান, ব্রুনাই, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, নেপাল, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলংকা, ভিয়েতনাম এ ১৪টি দেশের পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করছেন। এছাড়া ইন্টারপোল, ফেসবুক, ইন্টারপোল গ্লোবাল কমপ্লেক্স ফর ইনোভেশন (আইজিসিআই), যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই), আসিয়ানাপোল (ASEANAPOL), ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ট্রেনিং অ্যাসিসট্যান্স প্রোগাম (আইসিআইটিএপি)সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন।
বাংলাদেশের পুলিশ প্রধান ছাড়াও আফগানিস্তানের সিনিয়র ডেপুটি মিনিস্টার ফর সিকিউরিটি আবদুল রহমান, মালয়েশিয়ার ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ খালিদ আবু বকর, মিয়ানমার পুলিশের বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মাইও সি উইন (Myo Swe win) এবং শ্রীলংকার ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ পুজিৎ সেনাদি বান্দর জয়াসুন্দারা (Pujith Senadhi Bandara Jayasundara) সহ ৫৮ জন বিদেশী অতিথি সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন।
তিন দিনের এ সম্মেলনে ১৪টি কর্ম অধিবেশনে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা বিষয় ভিত্তিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন। জঙ্গিবাদ দমন, মানব পাচার, অর্থনৈতিক অপরাধ এবং সন্ত্রাসী অর্থায়ন, মাদক দ্রব্য পাচার রোধ, অবৈধ অস্ত্র চোরাচালান প্রতিরোধ, গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়, সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি বিষয় আলোচনায় স্থান পাবে। সম্মেলনের শেষ দিন ১৪ মার্চ জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনসহ আন্তঃদেশীয় অপরাধ দমনে ‘যৌথ ঘোষণা’ স্বাক্ষর হবে।
সম্মেলন উদ্বোধনের পর ২টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম ‘Resurgence of Terrorism in Bangladesh’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। সিঙ্গাপুরের নানিয়াং টেকনোলজিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর পলিটিক্যাল ভয়োলেন্স এন্ড টেররিজম রিসার্চ (আইসিপিভিটিআর) এর অধ্যাপক ড. রোহান গুনারত্ন (Dr. Rohan Gunaratne) ‘Deradicalization of Militants : An Approach for Disengagement and Reintegration into Society’ শীর্ষক অপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ও প্রাক্তন অতিরিক্ত আইজিপি এন বি কে ত্রিপুরা এ অধিবেশনে মডারেটর ছিলেন।
মোঃ মনিরুল ইসলাম তার প্রবন্ধে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ উত্থানের বিভিন্ন দিক এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার তথা পুলিশ বাহিনীর কঠোর অবস্থানের কথা তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ সরকার সর্বদাই জঙ্গিবাদ নির্মূলের ক্ষেত্রে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করে আসছে। তিনি বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থানকে দুটি ভাগে ভাগ করেন। প্রথমত: বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে উগ্রপন্থী অর্থাৎ বামপন্থীদের উত্থান এবং দ্বিতীয়ত: সমসাময়িককালে বিপথগামী ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের দ্বারা সৃষ্ট জঙ্গিবাদ।
তিনি ২০১৩ সালে ব্লগার হত্যাসহ ২০১৬ সালে ‘হলি আর্টিজান’ হামলাকে ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের দ্বারা সৃষ্ট জঙ্গিবাদের উত্থান বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ পুলিশ ও নবগঠিত ‘কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম’ ইউনিট কার্যকর ভূমিকা রাখছে। এ ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ব্যপক সচেতনামূলক কর্মসূচি নেয়াসহ জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।
প্রফেসর রোহান গুনারত্ন তার আলোচনায় উল্লেখ করেন, সমগ্র পৃথিবীতে বর্তমানে তিন ধরনের হুমকি বিরাজমান। প্রথমত, বিদ্রোহী গোষ্ঠীর হুমকী; দ্বিতীয়ত, সন্ত্রাসবাদীদের হুমকী এবং তৃতীয়ত, ভাবার্দশগত উগ্রপন্থীদের হুমকী। তিনি বলেন, বর্তমানে সন্ত্রাসবাদের হুমকি বহুজাতিকভাবে দেখা হচ্ছে। যেমন- ইসলামিক স্টেট (আইএস) এবং তার সহযোগী দলগুলো ইসলামী উগ্রপন্থী সন্ত্রাসবাদী গ্রুপ এর আদলে কাজ করছে। এর ফলে এশিয়া প্যাসিফিক এলাকাগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।