ডিএমপি নিউজঃ গত ১১ এপ্রিল ২০২২ নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গলাচিপা থেকে পটুয়াখালী শহরে বাসায় ফেরার পথে রাত সাড়ে আটটার দিকে ড্রাইভার মিরাজসহ নিখোঁজ হন পটুয়াখালীর ধনাঢ্য ব্যবসায়ী শিবু লাল দাস। পরের দিন পটুয়াখালী জেলা পুলিশ ভিকটিমকে উদ্ধার করলেও অধরা রয়ে যায় অপরাধীরা।
আজ বুধবার (২০ এপ্রিল ২০২২) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের সামনে অপরাধের বিস্তারিত তুলে ধরেন ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার, বিপিএম (বার)।
গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, “পটুয়াখালীর বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নিখোঁজের ঘটনায় জেলা পুলিশ ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের সহায়তা চেয়ে একটি রিকুইজিশন পাঠায়। সে অনুযায়ী কাজ করতে থাকে গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান”।
তিনি বলেন, “১৯ এপ্রিল ২০২২ দুপুর থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত মিরপুর, ভাটারা এবং গুলিস্তান এলাকায় ডিবি গুলশান বিভাগের একাধিক টিম ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করে চক্রের মাস্টার মাইন্ড ল্যাংড়া মামুন ওরফে মুফতি মামুন, পিচ্চি রানা, আশিকুর রহমান ও বিআরটিসির ড্রাইভার জসীমউদ্দীনকে”।
এ সময় তাদের হেফাজত থেকে মুক্তিপণ আদায়ে ব্যবহৃত প্রাইভেটকার, মোবাইল ফোন, গামছা এবং ৪০০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয় বলে উল্লেখ করেন গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে ডিবির এ কর্মকর্তা বলেন, “অপহরণের পূর্বে তারা পটুয়াখালীর লঞ্চঘাটে ল্যাংড়া মামুনের অফিসে অপহরণের পরিকল্পনা করে। এ জন্য ঢাকা থেকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে এক সপ্তাহের জন্য একটি গাড়িও ভাড়া করে। নিজেদের আড়ালে রাখতে ক্রয় করে পাঁচটি বাটন ফোন ও অন্যের নামে নিবন্ধিত সিম। সেই সাথে একটি খেলনা পিস্তল, দুইটি সুইচ গিয়ার, তিনটি চাপাতি এবং একটি বড় ছুরি। পরিকল্পনানুযায়ী ১১ এপ্রিল দুপুরে পটুয়াখালী এয়ারপোর্টে মিলিত হয়ে কার কী দায়িত্ব তা নির্ধারণ করা হয়। প্ল্যান মোতাবেক মামুন ও রানা মোটরসাইকেল নিয়ে ভিকটিমের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। এদিকে পটুয়াখালী-গলাচিপা হাইওয়ে রোডের শাঁখারিয়া নামক নির্জন স্থানে অবস্থান নেয় অন্যরা। রাত সাড়ে আটটার দিকে ভিকটিমের গাড়িটি ওই স্থানে পৌঁছলে প্রাইভেটকার ও ট্রলি দিয়ে তাদের আটকিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় এইচডি রোডের ল্যাংড়া মামুনের মেশিনঘরে। এরপর সেখান থেকে নেওয়া হয় এসপি কমপ্লেক্স সুপার মার্কেটের আন্ডারগ্রাউন্ডের অস্থায়ী টর্চার সেলে। রাত পৌনে দুইটার দিকে তারা ভিকটিমের মোবাইল থেকে তার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে ২০ কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবী করে। মুক্তিপণ না দিলে এবং বিষয়টি পুলিশকে জানালে শিবু লালকে হত্যা করে সাগরে ভাসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় তারা”।
এই অপহরণের উদ্দেশ্য সম্পর্কে ডিবি কর্মকর্তা বলেন, “ল্যাংড়া মামুনের পিতা একজন মুফতি মাওলানা হওয়ায় সেও হাফেজী এবং নূরানী লাইনে পড়াশোনা করেছে কিন্তু বড় হয়ে জড়িয়ে পড়ে অপরাধ জগতে। ইতোপূর্বে অপরাধ করতে গিয়ে মোটর সাইকেল দুর্রটনায় তার ডান পা উরু পর্যন্ত কাটা পড়ে। কৃত্রিম এই পায়ের ফোকরে সে ইয়াবা বহন করতো। মুক্তিপণের এই টাকা দিয়ে সে দক্ষিণবঙ্গে গার্মেন্টসের ব্যবসা শুরু করতে চেয়েছিলো। বিআরটিসির ড্রাইভার জসিম উদ্দিন মৃধা ভেবেছিল অপরের গাড়ি না চালিয়ে নিজস্ব বাস কিনে ঢাকা পটুয়াখালী রুটে চালাবে। আশিক চেয়েছিলো নিজের রেন্ট-এ কারের বিজনেস আরো বাড়াতে”।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে মারামারি, মাদক এবং অপহরণের একাধিক মামলা রয়েছে এবং ভাটারা থানায় রুজুকৃত মাদক মামলায় তাদের বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানান গোয়েন্দা এই পুলিশ কর্মকর্তা।