ফ্রান্সের ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের হৃদয়খ্যাত বিখ্যাত নটর ডেম ক্যাথেড্রালটি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ায় দুঃখে ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েছে দেশটির ধর্মপ্রাণ ও শিল্প-সংস্কৃতিপ্রিয় মানুষ। দেশটির সংস্কৃতি ও ইতিহাসের প্রতীক হয়ে ওঠা সাড়ে ৮০০ বছরের প্রাচীন গির্জাটি পুড়ে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ তারা। তবে প্রিয় প্রতিষ্ঠানটিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে অভূত অর্থ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ধনকুবের ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যেই শতকোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ইউনেসকোসহ দেশি-বিদেশি নানা প্রতিষ্ঠান। প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁও এর পুনর্নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
রাজধানী প্যারিসে অবস্থিত নটর ডেম গির্জার আগুন গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পুরোপুরি নেভাবে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস। এর আগে সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে আগুন লাগে। ১৫ ঘণ্টার চেষ্টায় চার শতাধিক ফায়ার সার্ভিসকর্মী আগুন নেভাতে সক্ষম হন। কিন্তু এর আগেই আগুনে ঐতিহাসিক গির্জাটির ছাদ ধসে যায়, মিনার ভেঙে পড়ে, অভ্যন্তরীণ কারুকার্য (ইন্টেরিওর ডিজাইন) পুড়ে ছাই হয়ে যায়। তবে শিল্প-সংস্কৃতিপ্রিয় ফরাসিদের এই গির্জার অমূল্য শিল্পকর্মগুলো ঠিকই রক্ষা করতে পেরেছেন অগ্নিনির্বাপককর্মীরা। রক্ষা পায় গির্জাটির ঐতিহাসিক পাথরের কাঠামোটি। আগুন নেভাতে গিয়ে একজন ফায়ারকর্মী আহত হয়েছেন। পুরো ঘটনায় এটাই একমাত্র হতাহতের ঘটনা।
অগ্নিকাণ্ডের কারণ এখনো নির্ণয় করতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা। তবে প্যারিসের পাবলিক প্রসিকিউটর রেমি হেইজ বলেন, তাঁর দপ্তর ‘দুর্ঘটনা তত্ত্বকেই’ গুরুত্ব দিতে চায়। তবে এই ঘটনার দীর্ঘমেয়াদি ও জটিল তদন্তে ৫০ ব্যক্তিকে নিয়োগ করা হয়েছে। তবে অন্যান্য দপ্তরের কর্মকর্তারা মনে করেন, ১১ শতকে নির্মিত এই গির্জায় চলমান সংস্কারকাজের সঙ্গে অগ্নিকাণ্ডের যোগসূত্র রয়েছে। আর এ নিয়েই ক্ষুব্ধ প্যারিসের মানুষ।
কয়েক দশক ধরেই গির্জাটিকে ফ্রান্সে ক্যাথলিক জীবনের হৃদ্যন্ত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বের নানা প্রান্তের ভ্রমণপ্রিয় ও পুণ্যার্থীরা একনজর দেখতে গির্জাটিতে ভিড় করত।
অগ্নিকাণ্ডে ঘটনায় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ ঐতিহাসিক স্থাপনাটি সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়ছেন। এর মধ্যেই আলোচনায় এসেছে ফ্রান্সের দুই বিজনেস ম্যাগনেটের এগিয়ে আসা। এরই মধ্যে ইউরোপীয় কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য দেশগুলোকে এর পুনর্নির্মাণে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
ফ্রান্সের বিখ্যাত গুচি ব্র্যান্ড ও ইয়াভেস সেন্ট লরেন্ট ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী কেরিং গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও হেনরি পিনল্ট এরই মধ্যে ১০ কোটি ইউরো প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ ছাড়া বিজনেস সম্রাট এলভিএমএইচ কম্পানি ও এর মালিক বার্নার্ড আরনল্টস পরিবার ২০ কোটি ইউরো প্রদান করবে বলে ঘোষণা দেয়ছে। ফরাসি গ্যাস কম্পানি টোটাল দেবে ১০ কোটি ইউরো। ফ্রান্স চ্যারিটি ফাউন্ডেশন বিশ্বজুড়ে তহবিল সংগ্রহের ডাক দিয়েছে। আরো অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছে।
গির্জাটিতে অগ্নিকাণ্ডে ফ্রান্সের মানুষের মনে কতটা ধাক্কা লেগেছে তা বোঝা যায় দেশটির ধর্মীয় ইতিহাস বিশেষজ্ঞ ও লেখক বার্নার্ড লিকোমতির বক্তব্যে। তিনি বলেন, ‘আইফেল টাওয়ার যদি প্যারিস হয়, তাহলে নটর ডেম হচ্ছে ফ্রান্স। এর শিল্পকর্মে পুরো ফ্রান্সের ইতিহাস ও সংস্কৃতি স্থান পেয়েছে। সূত্র : বিবিসি, এএফপি।