ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে গতকাল সোমবার পার্লামেন্টে নতুন ব্রেক্সিট পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছেন। এমপিদের ভোটে বাতিল হয়ে যাওয়া ব্রেক্সিট চুক্তিটির চেয়ে নতুন পরিকল্পনায় (প্ল্যান বি) বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হচ্ছে না বলে জানা গেছে। তবে ব্রেক্সিট অচলাবস্থার সবচেয়ে বড় যে কারণ, সেই আয়ারল্যান্ড সীমান্ত নীতি (ব্রেক্সিট ব্যাকস্টপ) নিয়ে নতুন পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে চাইছেন তিনি। ব্রেক্সিট প্রক্রিয়ার নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাত থেকে ছিনিয়ে নিতে এমপিদের অন্তত দুটি পক্ষের ‘চক্রান্ত’ নিয়ে সরকারের চরম উদ্বেগের মধ্যেই নতুন পরিকল্পনা উপস্থাপন করলেন টেরেসা মে।
লন্ডন ও ব্রাসেলস গত দুই বছর ধরে তাদের বিচ্ছেদপ্রক্রিয়া নিয়ে একটি চুক্তি চূড়ান্ত করে, যা ব্রিটেন ও ইইউর পার্লামেন্টে অনুমোদন হলেই কেবল কার্যকর হওয়ার কথা। কিন্তু গত সপ্তাহে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্যরা চুক্তিটি প্রত্যাখ্যান করেন। ফলে আগামী ২৯ মার্চ ‘নো-ডিল ব্রেক্সিট’ বা চুক্তিহীন প্রস্থানের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, যদি না এই সময়ের মধ্যে এমপিরা এই সময়সীমা পিছিয়ে দিতে সরকারকে বাধ্য করেন অথবা সরকারের বিকল্প পরিকল্পনায় একমত হন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইইউ থেকে ব্রিটেনের প্রস্থান (ব্রেক্সিট) চুক্তিহীন হলে দুই পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ এত দিন একক বাজার (সিঙ্গেল মার্কেট) থাকায় সীমান্তে পণ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতো না, আলাদা শুল্কনীতিও ছিল না। কিন্তু ‘নো-ডিল ব্রেক্সিট’ ঘটলে দুই পক্ষের বন্দরগুলোতে পণ্যের স্তূপ জমবে, যা এড়ানোর জন্য চুক্তি অনিবার্য। আর ব্রেক্সিট-পরবর্তী এই সমস্যা বেশি তৈরি হবে আয়ারল্যান্ড সীমান্তে, যেটাকে ব্রেক্সিট অচলাবস্থার মূল কারণ বা ‘ব্রেক্সিট ব্যাকস্টপ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।
গতকাল পার্লামেন্টে টেরেসা মে নতুন পরিকল্পনা উপস্থাপনের আগেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, তাঁরাও চুক্তিতে পরিবর্তন আনতে পারেন যদি মে তাঁর আলোচনার ‘রেডলাইন’ থেকে কিছুটা সরে আসেন। কিন্তু ব্রিটিশ মিডিয়া বলছে, তিনি বিদ্যমান চুক্তিকে কিছু সংশোধনী বিষয়ে এমপিদের বাগে আনার চেষ্টা করবেন।
ইইউর অবস্থানের বিষয়ে স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোসেপ বোরেল বলেন, ‘আমি মনে করি না নতুন পরিকল্পনাটি বিদ্যমান পরিকল্পনারই সামান্য সমন্বয়। আমি মনে করি, তিনি একই জিনিস উপস্থাপন করবেন, যাতে খামচি মারা হয়েছিল। সুতরাং মৌলিকভাবেই তাঁকে ভিন্ন কিছু উপস্থাপন করতে হবে।’ এ ব্যাপারে স্লোভাকিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিরোস্লাভ লাজাক বলেন, ইইউ যুক্তরাজ্যের চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে চায় না।
দুই বছরের আলোচনা-পর্যালোচনা এবং সর্বশেষ কয়েক মাসের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার পর গত নভেম্বরে ব্রিটেন ও ইইউ তাদের বিচ্ছেদ চুক্তি চূড়ান্ত করে। কিন্তু গত মঙ্গললবার এক ভোটাভুটিতেই তা বাতিল করে দেয় ব্রিটিশ পার্লামেন্ট। ব্রেক্সিটপন্থী এমপিরা চাচ্ছেন স্বতন্ত্র বাণিজ্যনীতি। কিন্তু ব্রেক্সিটবিরোধী এমপিদের যুক্তি, ব্রিটেন ইইউ সদস্য হিসেবে যে মর্যাদা পেত, ব্রেক্সিট হলে তারা অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়বে। সূত্র : এএফপি, এপি।