ফেরেশতা কুকুর ও শূকর ছাড়া যেকোনো আকৃতি ধারণ করতে পারেন বা করেন। মহান আল্লাহ তায়ালার পবিত্র বানী তাঁর হাবিব, রাসূল বা নবীদের কাছে পৌঁছে দিতে গুরু দায়িত্ব পালন করতেন ফেরেশতাকূলের সর্দার হযরত জিবরাইল (আ.)। জিবরাইল (আ.) এর উপাধি হলো রুহুল আমিন, তথা বিশ্বস্ত আত্মা। তিনি হলেন আকাশের আমিন। জমিনের আমিন হলেন বিশ্বনবী (সা.)। আকাশের আমিন জিবরাইল (আ.) জমিনের আমিনের কাছে ওহি নিয়ে আসতেন। কোনো কোনো সময় সবার অলক্ষ্যে ওহি নাজিল করে চলে যেতেন। আবার কোনো কোনো সময় মানব আকৃতিতে আগমন করতেন। তিনি প্রায় সময় দাহিয়াতুল কালবি (রা.)-এর আকৃতি ধারণ করে আসতেন।
একবার জিবরাইল (আ.) ধবধবে সাদা পোশাকে এবং নিকষ কালো কেশবিশিষ্ট অবস্থায় ছদ্মবেশে মহানবী (সা.)-এর দরবারে এসে হাজির হন। হাদিস বিশারদদের মতে, দশম হিজরিতে বিদায় হজের কিছুকাল আগে জিবরাইল (আ.) সাহাবায়ে কেরামদের দ্বিন শিক্ষা দেওয়ার জন্য এসেছিলেন। তাঁর মধ্যে সফরের কোনো চিহ্ন পরিলক্ষিত হয়নি। মহানবী (সা.) তখন সাহাবায়ে কেরাম দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিলেন। ওমর (রা.) বলেন, আমাদের কেউ তাঁকে চিনতে পারেনি।
কোনো কোনো হাদিস বিশারদের মতে প্রথমে মহানবী (সা.)ও চিনতে পারেননি। অবশেষে লোকটি মহানবী (সা.)-এর সামনে এসে এবং স্বীয় হাঁটুদ্বয় মহানবী (সা.)-এর পবিত্র হাঁটুদ্বয়ের সঙ্গে মিলিয়ে বসে পড়েন। অতঃপর স্বীয় হস্তদ্বয় তাঁর পবিত্র ঊরুদ্বয়ের ওপর রাখেন। সাহাবায়ে কেরাম অবাক হয়ে তাঁর কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করেন। সুবহানআল্লাহ।
কে ছিলেন এই দাহিয়াতুল কালবি (রা.)-
আরব অন্ধকার যুগে তথা আইয়ামে জাহিলিয়াহ বিরাজমান অবস্থায় মেয়ে সন্তানকে জীবন্ত কবর দেওয়া নিয়ম ছিল। সে জীবন্ত মেয়ে সন্তানের কবর দেওয়া দলের প্রধান ছিলেন হযরত দাহিয়াতুল কালবি রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহন করে আইয়ামে জাহেলিয়ার হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য তাকে ইসলামের দীক্ষায় দীক্ষিত হতে হাত দু’টি বাড়িয়ে দিলেন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিকে। রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাত ধরবেন এমন সময় তিনি আবার হাত দু’টি গুটিয়ে নিলেন এবং বললেন- হুযূর আমি আরবের বুকে মেয়ে সন্তানকে জীবিত কবর দেওয়া দলের প্রধান। তাছাড়া আমার স্ত্রী আমার অজান্তে একটি মেয়ে সন্তানকে লালন পালন করছিল, ১০/১২ বৎসর বয়সে তা আমার চোখে ধরা পড়ে। মেয়েটির রূপ চেহারায় আমিও পিতৃস্নেহে অভিভূত হয়ে গেলাম। জাহেলিয়ার নীতি আমাকে বার বার তাড়া করতে লাগলো, তুমি আরবের বুকে মেয়ে সন্তান জীবন্ত কবর দেওয়া দলের সর্দার হয়ে পিতৃস্নেহের কাছে হেরে গেলে? পরিশেষে বাধ্য হয়ে মিথ্যে ছলনায় স্ত্রীকে বললাম, মেয়েকে সুন্দর ও পরিপাটি করে সাজিয়ে দাও। তাকে নিয়ে বেড়াতে যাব। মেয়েটিকে নিয়ে মরুময় পথ ধরে অনেক দূরে চলছি। মরুময়পথে আমি ও আমার সন্তানই যাত্রী। মেয়েটির রূপ, লাবণ্যময়ী চেহারা আমাকে উন্মাদ করে তুলছিল। কিন্তু কি করব? জাহিলিয়ার নীতির কাছে হেরে গেলাম। মেয়েটি বললো, আব্বা আমাকে একটু পানি দেন। বললাম, মা একটু অপেক্ষা কর, এ সুযোগেই আমার কবর দেওয়ার লুকাইত যন্ত্রপাতি বের করে মাটি খুঁড়তে শুরু করলাম। অনেক গভীর করে উপরে উঠে এলাম। মেয়েটি তৃষ্ণার্ত নয়নে আমার পানে তাকিয়ে দেখছিল। মেয়েকে বললাম, দেখতো মা, পানি উঠছে কিনা? মেয়েটি অধীর আগ্রহে তাকাতেই দু’চোখ বন্ধ করে মেয়েকে কুপের মধ্যে ফেলে দিয়ে মাটি দিতে শুরু করি। হুযূর! মেয়েটির সে কান্না আর আমাকে আব্বা আব্বা বলে ডাকার শব্দ আমার কানে আজও ভেসে উঠে। বলুন হুযূর, এমন পাপাত্মা পিতা, মেয়ে সন্তানদের জীবিত কবর দেওয়ার যে পাপ আমি করেছি, এমন পাপ নিয়ে ইসলাম কি আমাকে গ্রহন করবে?
হযরত দাহিয়াতুল কালবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুউনার কথা শুনে দয়াল নবী উনার দু’চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠলো। তাকিয়ে থাকলেন তার মুখ পানে। ওহি না আসা পর্যন্ত আল্লাহ পাকের রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন কথা বলেন না। তিনি চুপ করে থাকলেন, এমন সময় হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম আগমন করেন এবং বলেন, হে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনি দীপ্ত কন্ঠে ঘোষণা করুন, “আল ইসলামু ইয়াহদিমু মাক্বানা ক্বাবলাহু” অর্থঃ “ইসলাম বিগত জীবনের সমস্ত পাপরাশিকে ক্ষমা করে দেয়। এ ঘোষণার পর হযরত দাহিয়াতুল কালবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ইসলামে দাখিল হলেন। তিনি এমন সুন্দর ও সুদর্শন ছিলেন যে, মানব সুরতের অধিকাংশ সময়ই হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম উনার আকৃতিতে ওহী নিয়ে আসতেন। এমন সুমহান ধর্মে আছি বলে সত্যিই স্বার্থক আমাদের জীবন।