কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের যাতায়াত সুবিধার্থে চলতি বছরের নভেম্বর থেকেই শুরু হচ্ছে দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুনধুম রেলপথ নির্মাণকাজ। প্রাথমিকভাবে দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার পর্যন্ত ১৪০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হবে। এ প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজারে নির্মাণ করা হবে ঝিনুক আদলে আন্তর্জাতিক মানের রেলস্টেশন। প্রকল্প নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ঋণ দিচ্ছেন ১৩ হাজার ১১৫ কোটি টাকা। বাকী ৪ হাজার ৯১৯ কোটি সরকারের ফান্ড থেকে ব্যয় করা হবে। প্রকল্পটি নির্মাণে মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০১০ সালে ১ জুলাই থেকে ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত।
প্রকল্পটি নির্মাণে শনিবার রেল ভবনে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন রেলওয়ে। প্রকল্পটি নির্মাণে ২ অংশে ভাগ করে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতে দোহাজারী থেকে চকরিয়া পর্যন্ত প্রথম অংশে যৌথভাবে কাজ পেয়েছেন চায়নার সিআরইসি ও বাংলাদেশের তমা কনষ্টাকশন কোম্পানি। এছাড়া চকরিয়া থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত দ্বিতীয় অংশের যৌথভাবে কাজ পেয়েছেন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চায়নার সিসিইসিসি ও বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্টাক্সার লিমিটেড।
চুক্তিতে দু’টি অংশে রেলওয়ে পক্ষে স্বাক্ষর করেন প্রকল্প পরিচালক মোঃ মফিজুর রহমান ও ১ম লটে চায়নার সিআরইসি এর প্রতিনিধি জং গ্রাংজু ও দ্বিতীয় লটের সিসিইসিসি এর প্রেসিডেন্ট জাও ডাইনলং চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এ সময় রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. মোফাজ্জল হোসেন, রেলওয়ের মহাপরিচালক মোঃ আমজাদ হোসেন সহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে রেলমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার রেল খাতের প্রতি অধিক গুরুত্ব দিয়েছে। এ জন্যই বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধি পেয়েছে। তার ফলে আমরা নতুন প্রকল্প গ্রহন করতে পারছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বড় বড় প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার নতুন ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মান প্রকল্পটি একটি মেগা প্রকল্প। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাসরি হস্তক্ষেপ করছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে হবে। তাই চীনা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সাথে বাংলাদেশের তমা ও ম্যাক্সকে নিযুক্ত করা হয়েছে। যাতে প্রকল্পটি দ্রুত শেষ করা যায়।
প্রকল্প সূত্র জানায়, দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার রেল প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজারে নির্মাণ করা হবে ঝিনুক আদলে আন্তর্জাতিক মানের রেলস্টেশন। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বিশে^র বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটন আকর্ষণ করার জন্য এই আইকনিক ইন্টারন্যাশনাল টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১৪০ কিলোমিটার নতুন রেল লাইনে দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগড়া, হারবাং, চকরিয়া, ডুলাহাজরা, ইসলামাবাদ, রামু ও কক্সবাজারসহ ৯টি স্টেশন নির্মাণ করা হবে এই প্রকল্পে। এর মধ্যে কক্সবাজার বাস টার্মিনালের বিপরীত পাশে কয়েক শত একর জায়গার উপর নির্মাণ করা হবে আন্তর্জাতিক মানের এই রেলস্টেশন। সমুদ্র সৈতক থেকে ৩০০ মিটার দূরেই এই রেলস্টেশন নির্মাণ করা হবে। পুরো এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ১০২ কিলোমিটা নতুন ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মান করা হবে। এতে ১৮৪ টি ছোট বড় সেতু, ৯ টি স্টেশন বিল্ডিং, প্লাটফরম ও সেড নির্মান করা হবে রেলওয়ে সূত্র জানায়।