নান্দনিক শহর গড়ার লক্ষ্য নিয়ে এবার সিটি করপোরেশন সিলেটের ঐতিহ্যবাহী ক্বীন ব্রিজকে আলোকিত করার কাজ শেষ করেছে। সাড়ে ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে। এলইডি বাল্ব ব্যবহারের মাধ্যমে এরই মধ্যে ব্রিজ ও এর আশ-পাশ এলাকা রাতেরবেলা আলো ঝলমল করছে। সুরমা নদীর পানিতে আলোর প্রতিবিম্ব আরো মোহনীয় হয়ে উঠে। পর্যটন এই শহরকে নতুনভাবে আকর্ষণীয় করার এই উদ্যোগকে অনেকেই স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, আমরা চাই সিলেট নগরী সত্যিকার অর্থেই যেন পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়।
ক্বীন ব্রিজটির ইতিহাস অনেক পুরাতন। ব্রিটিশ আমল থেকে এই ব্রিজটি অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার নীরব সাক্ষী। সিলেট সার্কিট হাউজের পাশে বলে দৃষ্টিনন্দন এই ব্রিজের গুরুত্বও অনেক। এই ব্রিজের ওপর থেকেই তৎকালীন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আয়ূব খানকে জুতা ছুঁড়ে মেরে ছাত্র জনতা তাকে প্রত্যাখ্যান করেন।
জানা যায়, ১৯৩৬ সালে আসামের গভর্নর মাইকেল ক্বীনের নামে শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত সুরমা নদীর উপর এই ব্রিজটি নির্মিত হয়। দৃষ্টিনন্দন লোহার পিঞ্জিরার ওপর লাল রং দেওয়া ব্রিজটির অবকাঠামো দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। দিনের আলোয় ব্রিজটি দৃষ্টি কাড়লেও রাতের আঁধারে থাকতো। অনেকটাই লোকচক্ষুর আড়ালে। তাছাড়া রাতের বেলা ব্রিজের উপর ছিনতাইয়ের শিকার হত পথচারীরা। এ অবস্থার নিরসন ও পর্যটন শহর সিলেটের আকর্ষণ আরো বাড়িয়ে দিতেই ঐতিহাসিক এই ব্রিজটিকে আলো-ঝলমলে রূপ দেওয়ার উদ্যোগ নেয় সিটি করপোরেশন।
স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষে সিলেট শহর থেকে পাক সেনারা পালিয়ে যাওয়ার সময় ঐতিহাসিক ক্বীন ব্রিজে মাইন বিস্ফোরণ ঘটালে এর একাংশ ধসে যায়। পরে সরকার এটি পুনর্নির্মাণ করে।
এদিকে ব্রিজটির মেয়াদও বেশ কয়েক বছর আগে উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। তাই ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে হালকা যান ও পায়ে হেঁটে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ব্রিজ পার হয়। তাই সিটি করপোরেশন, ব্রিজ সংলগ্ন সুরমা নদীর উভয় তীরে ‘নগর বিউটিফিকেশনে’র আওতায় ওয়াকিংওয়েসহ মিনি পার্ক গড়ে তুলেছে। প্রতিদিন বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত নগরবাসী এখানে ভিড় করেন। শহরের ভিতরে এই স্থানটি বিনোদনের জন্য অনেকটাই নিরাপদ।
ক্বীন ব্রিজের উপর নতুনভাবে স্থাপন করা হয়েছে ২০টি পুল। পুরনো ৩২টি পুলসহ ৫৬টি এলইডি বাল্ব লাগানো হচ্ছে।
করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবিব জানান, প্রতিদিন শত শত মানুষ ঐতিহ্যবাহী ক্বীন ব্রিজ দেখতে ও সুরমার তীরে নির্মল হাওয়া ভোগ করতে আসেন। কিন্তু রাতে ক্বীন ব্রিজ এলাকায় আলো কম থাকায় এর সৌন্দর্য যেমন উপভোগ করা যায় না, তেমনি নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে ক্বীন ব্রিজ এলাকার সৌন্দর্য বর্ধনের অংশ হিসেবে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এখন রাতের বেলাতেও আলো ঝলমলে ক্বীন ব্রিজের কাছে নির্মল হাওয়া উপভোগ করবেন নগরবাসী। তিনি আরো জানান, পরবর্তীতে নদী তীর এলাকায় আরও সৌন্দর্যবর্ধন ও বিনোদনের ব্যবস্থা করা হবে।