ফাইভজি প্রযুক্তিতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রভাব এড়াতে নিজস্ব জিপিএস সিস্টেম ব্যবহার করে কার্যক্রম চালানোর মতো একটি ফ্ল্যাগশিপ ফোন উন্মোচন করেছে হুয়াওয়ে। সম্প্রতি চীনা প্রযুক্তি জায়ান্টটি জানায়, ‘দ্য মেইট ৫০’ সিরিজের ফোনটির ব্যবহারকারীরা বাইদু নেভিগেশন স্যাটেলাইট সিস্টেমের মাধ্যমে মেসেজ পাঠাতে সক্ষম হবে এখন থেকে। বাইদু নেভিগেশন সিস্টেম হলো বহুল ব্যবহূত চীনা জিপিএস সিস্টেম। প্রথমবারের মতো হুয়াওয়ে এ ফিচার সামনে আনল।
সামরিক ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন প্রয়োগের ইতিহাস বেশ লম্বা। গভীর বন, উন্মুক্ত মরুভূমি ও বিশাল সমুদ্রেও পথ খুঁজে দিতে পারে সহজে। প্রচলিত যোগাযোগ যেখানে নেই বললেই চলে, এমন সব অঞ্চলেও স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন দাপুটে। এখানে ওয়্যারলেস মোবাইল ইন্টারনেট ফোন কল ও তথ্য সরবরাহের জন্য পার্শ্ববর্তী স্টেশনের ওপর নির্ভর করে। হুয়াওয়ের নতুন ফোনটিতে কোয়ালকমের ফোরজি স্ন্যাপড্রাগন ৮ জেন ১ মোবাইল চিপসেট ব্যবহার করা হবে।
বাইদু নেটওয়ার্ক ২০২০ সালেই বিশ্বব্যাপী কাভারেজ লাভ করে। বেইজিং অনেক দিন ধরেই চাচ্ছিল ভবিষ্যৎ যোগাযোগ এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণায় নিজস্ব জিপিএস সিস্টেম উদ্ভাবন করতে। এর আগে রাশিয়ার গ্লোনাস, ইউরোপী ইউনিয়নের গ্যালিলি এবং ভারতের আইআরএনএসএস প্রোগ্রাম নেভিগেশন সিস্টেম হিসেবে ব্যবহূত হয়েছে।
২০১৮ সাল থেকেই হুয়াওয়ে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কাঁধে বয়ে চলছে। এখনো প্রিমিয়াম ফাইভজি মোবাইল প্রযুক্তিতে প্রবেশের সবুজ সংকেত পায়নি। অথচ তার ফোনগুলো অ্যাপল, স্যামসাং ও শাওমির মান নিয়েই বাজারে আছে।
ইন্টারন্যাশনাল ডাটা করপোরেশনের (আইডিসি) পরিসংখ্যান অনুসারে ২০১৯ সালে হুয়াওয়ে ছিল বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্মার্টফোন সরবরাহকারী কোম্পানি। স্যামসাং ছিল তালিকার প্রথমে। তখন হুয়াওয়ের সরবরাহ ছিল ২৪ কোটি ৬ লাখ ইউনিট। অথচ নিষেধাজ্ঞার পর ২০২১ সালে হুয়াওয়ের স্মার্টফোন বিক্রি কমে দাঁড়ায় ৩ কোটি ৭৫ লাখ ইউনিট।
হাই তং ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটিজের বিশ্লেষক জেফ পু বলেন, হুয়াওয়ে স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন ফিচারটিকে সামনে আনতে বিশেষ ধরনের চিপ ব্যবহার করেছে। ইলেকট্রনিক ডিভাইসে এমন প্রযুক্তি ব্যবহারের পদক্ষেপ বাণিজ্যে নতুন দুয়ার উন্মোচন করবে। অবশ্য বর্তমানে কেবল চীনা চিপ নির্মাতারাই শুধু বাইদুর সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার অনুমতি পায়। আর এ প্রযুক্তি একমাত্র চীনা কোম্পানিগুলোর জন্যই।
আইডিসির বিশ্লেষক জোয়ি ইয়েন বলেন, প্রযুক্তির আধিপত্য নিয়ে চলমান বৈশ্বিক যুদ্ধে হুয়াওয়ের এ পদক্ষেপ নতুন ফ্রন্ট খুলে দিল। প্রযুক্তির রণাঙ্গন ফাইভজি আর এআইকে ছাপিয়ে বিস্তৃত হলো মহাকাশ ও নেভিগেশন প্রযুক্তিতে।
পশ্চিমা চাপের মুখে ২০২০ সালের শেষের দিকে নিজেদের বাজেট ফোন সেগমেন্ট অনর বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয় হুয়াওয়ে। সম্প্রতি আইএফএ বার্লিন ইলেকট্রনিকস ফেয়ারে বেশ কয়েকটি স্মার্টফোন, ট্যাবলেট পিসি ও ল্যাপটপ উন্মোচনের মাধ্যমে বিশ্ববাজারে নিজেদের অবস্থান জানান দেয়ার চেষ্টা করছে অনর।সূত্র:বনিকবার্তা