দক্ষিণ পশ্চিম ইউরোপের দেশ মন্টেনেগ্রো যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট নেটোতে যোগ দিয়েছে।
সোমবার তারা আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৪৯ সালে গঠিত সামরিক জোটটির সদস্য হয় বলে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়।
মন্টেনেগ্রোকে নিয়ে নেটোর সদস্যসংখ্যা এখন ২৯ হলো।
এক সময় যুগোস্লোভিয়ার অংশ থাকা মন্টেনেগ্রোর এই যোগদানের মাধ্যমে বলকান অঞ্চলে নেটোর প্রভাব আরও বাড়বে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি চাপ বাড়লো রাশিয়ার উপর।
মন্টেনেগ্রোর যোগদান নিয়ে এরইমধ্যে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে রাশিয়া। ক্রেমলিন বলেছে, নেটোতে যোগদানের মধ্য দিয়ে মন্টেনেগ্রো ‘শত্রুতাপূর্ণ পথ’ বেছে নিয়েছে; দেশটি ‘রাশিয়াবিরোধী হিস্টিরিয়ায়’ ভুগছে বলেও অভিযোগ করেছে মস্কো।
“মন্টেনেগ্রোর কর্তৃপক্ষ যে শত্রুতাপূর্ণ পথ বেছে নিয়েছে, তার পাল্টায় প্রতিক্রিয়ামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার রয়েছে রাশিয়ার। রাজনীতিতেও পদার্থবিজ্ঞানের মতো ‘প্রত্যেক ক্রিয়ার জন্য বিপরীত প্রতিক্রিয়ার’ সুযোগ রয়েছে”, এক বিবৃতিতে এমনটাই বলেছে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এদিকে রাশিয়ার ধারাবাহিক চাপ সত্ত্বেও নেটো জোটে যোগ দেওয়ায় মন্টেনেগ্রোকে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
“বিদেশি চাপের পরও মন্টেনেগ্রো যে তার সার্বভৌমত্বের অধিকার খাটিয়ে পক্ষ বেছে নিতে পেরেছে সেজন্য তাদের সাধুবাদ,” বলেন যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি থমাস শ্যানন।
মন্টেনেগ্রোর নেটোতে যোগদান উপলক্ষে সোমবার ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করে; যাতে মন্টেনেগ্রোর প্রধানমন্ত্রী দুস্কো মার্কোভিচও উপস্থিত ছিলেন।
মার্কোভিচ পরে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের সঙ্গে হোয়াইট হাউজে সাক্ষাৎ করেন।
নেটোতে আনুষ্ঠানিক যোগ দেওয়ায় মন্টেনেগ্রোকে স্বাগত জানিয়েছেন নেটোর সেক্রেটারি জেনারেল জেনস স্টলটেনবার্গ।
তিনি বলেন, মন্টেনেগ্রোর যোগদান আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ভালো ভূমিকা রাখবে।
মন্টেনেগ্রো একসময় যুগোস্লাভিয়ার মধ্যে ছিল। সোভিয়েত বলয়ে থাকা কমিউনিস্ট যুগোস্লাভিয়া গত শতকের নব্বইয়ের দশকে ভেঙ্গে ছোট ছোট বেশ কয়েকটি দেশে বিভক্ত হয়।
এর মধ্যে মন্টেনেগ্রো ২০০৩ সালে সার্বিয়ার সাথে মিলে বানায় সার্বিয়া অ্যান্ড মন্টেনেগ্রো। তিনবছর পর স্বাধীনতা পেয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হয় তারা।
এরপর থেকেই ধীরে ধীরে ইউরোপ ও পশ্চিমাদের মিত্র হয়ে ওঠে সাত লাখ জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত উচ্চ-মধ্য আয়ের এই দেশটি; দূরত্ব বাড়ে এক সময়ের মিত্র রাশিয়ার সঙ্গে।
গত অক্টোবরে দেশটির ক্ষমতাসীন দল রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা ও দেশটির রাশিয়াপন্থী বিরোধী দলের বিপক্ষে ষড়যন্ত্র ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মিলো জুকোভিচকে হত্যার অভিযোগ তোলে।
ক্রেমলিন এই অভিযোগকে ‘অবাস্তব’ অ্যাখ্যা দেয়।
গত সপ্তাহে মন্টেনেগ্রোর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেশটির ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক পার্টি অব সোস্যালিস্টের একজন নেতাকে মস্কো বিমানবন্দরে আটকে রাখা হয়েছে অভিযোগ তুলে রাশিয়ার কূটনীতিকের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ পাঠায়।
সেসময়ই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মার্কোভিচ অভিযোগ করেন, রাশিয়ায় ‘প্রবেশ নিষিদ্ধ’ করে মন্টেনেগ্রো কর্মকর্তাদের গোপন তালিকা করেছে ক্রেমলিন।