ডিএমপি নিউজঃ উগ্রবাদের বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক ও সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে যদি বাঙালি সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ করতে পারি এবং তরুণদের মধ্যে সংস্কৃতি বোধটা গড়ে তুলতে পারলে আমার মনে হয় বাংলাদেশে উগ্রবাদ কখনও মাথাচড়া দিয়ে উঠতে পারবে না বলে জানান ডিএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মোঃ মনিরুল ইসলাম বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)।
আজ (২৬ জুন) সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর বাংলামটরে রূপায়ন সেন্টারে ওয়াটারফল রেস্টুরেন্টে ‘উগ্রবাদ প্রতিরোধে সংস্কৃতিকর্মীদের করণীয়’ বিষয়ে মতবিনিময় সভায় একথা বলেন তিনি। মতবিনিময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, এমপি। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অভিনয় শিল্পী সংঘের সভাপতি শহীদুজ্জামান সেলিমসহ চলচ্চিত্র ও নাটকের পরিচালক, অভিনয় শিল্পী, কন্ঠশিল্পী এবং ডিএমপি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
উগ্রবাদ প্রতিরোধে মতবিনিময় সভায় সকলকে স্বাগত জানিয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন, যারা সরাসরি সন্ত্রাসবাদের সাথে যুক্ত হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা কার্যক্রমগুলো চালিয়ে আসছি। এটি আপাতত নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সন্ত্রাসবাদ একটি মতাদর্শিক বিষয়। সন্ত্রাসবাদ আদর্শকে কেন্দ্র করে মানুষের মননে বাসা বাঁধে। ফলে এটি শুধু জেল জরিমানা করে বা সরাসরি কাউন্টার করে দমন করতে বা নির্মূল করতে পারব না। কারণ যে বীজটি মাথায় রোপন করা হয়েছে সেটি সরকার বা আইন শৃংখলা এজেন্সির মাধ্যমে সরাসরি উৎখাত করা সম্ভব না। এজন্য দরকার কাউন্সিলিং ও সচেতনতা। কেউ সন্ত্রাসী হয়ে গেলে তাদের দমন করার দায়িত্ব আমাদের। উগ্রবাদী হওয়ার একক কোন কারণ নাই। কোন কোন ক্ষেত্রে শিল্পীরাও উগ্রবাদে জড়িয়েছে যা আপনারা প্রেজেন্টেশনে দেখেছেন। আগে গ্রামে গ্রামে যাত্রা, জারিগান ও পালাগান হতো এখন নানা কারণে এগুলো হারিয়ে গেছে। এ কারণে তাদের ঐ সাংস্কৃতিক মনন গড়ে উঠেনি। যা উগ্রবাদে জড়ানো অন্যতম কারণ। আমাদের সবচেয়ে বড় পাঠশালা পরিবার। আমরা পরিবারের সাথে বসেছি। যারা উগ্রবাদের কারণে মারা গিয়েছে তাদের পরিবারের সাথে কথা বলে কারণগুলো খুঁজে বের করতে চেষ্টা করেছি। পরিবারের সদস্যরাই প্রথমত উগ্রবাদের বিষয়টি টের পান। তারাই পারেন প্রথম অবস্থায় বিপথগামীদের ফিরিয়ে আনতে।
তিনি বলেন, আমাদের বার্তা যাতে সকল তরুণদের কাছে পৌঁছে যায় সে লক্ষ্যে আমরা কাজটি করছি। মসজিদের ঈমামগণ জুম্মার খুৎবায় সহিংস উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিপক্ষে বললে এবং ইসলামের সাথে এর কোন সম্পর্ক নাই, তাহলে এই কথাগুলো যুবসমাজসহ সকলে শুনবেন ও মানবেন। যারা বিপথে গিয়েছে তাদের ফিরিয়ে আনা এবং আর যাতে না যেতে পারে সেদিকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে আমরা কাজ করছি। উগ্রবাদে না ঝুঁকতে এন্টিবডি তৈরি করা জরুরী। সংস্কৃতিমনা, দেশপ্রেম, দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ ও দেশের মানুষকে ভালোবাসার মাধ্যমে সকলের মধ্যে উগ্রবাদের বিরুদ্ধে এন্টিবডি তৈরি করতে হবে।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, সিটিটিসি’র পক্ষ থেকে আমরা সহিংস উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ বিরোধী নাটক, ছোট ছোট কনটেন্ট ও গান আপনাদের সাথে নিয়ে করব। সবকিছু মিলিয়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই সহিংস উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমন করা বা নির্মূল করা সম্ভব হবে। না হলে আমরা এগোতো পারব না। বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাংলাদেশে যেভাবে এগিয়ে গেছে তা অব্যহত রাখতে দরকার নিরাপত্তা। আর নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হলো সন্ত্রাসবাদ। ফলে এটিকে যদি আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি তাহলে আমাদের অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে পারব না। আমরা সবাই মিলে একসাথে কাজ করলে আমি মনে করি এই সেমিনার সফল হবে।
এছাড়াও তিনি বলেন, এই সেমিনারে আপনাদের অনেক কথা আমরা শুনেছি, অনেকের কথা শুনার সময় হয়নি। পরবর্তীতে আমরা শুনব, এটি আমাদের শুরু। আগামীতে সাংস্কৃতি যেসমস্ত শাখা রয়েছে তাদের নিয়ে ভিন্নভিন্নভাবে আমরা বসবো ও তাদের মতামত শুনবে। এখানে অংশগ্রহণ করার জন্য সকলকে ধন্যবাদ।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নুর এমপি বলেন, বর্তমান কোন বাবা-মা তার সন্তানকে নাচ, গান ও অন্য সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে ভর্তি করেন না। যেখানে নম্বর ও জিপিএ-৫ নেই সেখানে বাবা-মা সন্তাকে ভর্তি করে না। স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে শুরু করে বাংলাদেশের যেকোন আন্দোলনে শিল্পী সমাজ অংশ নিয়েছে। আমরা যেখানে যে পেশায় আছি সেখান থেকে কাজ ছোট হলেও বড় করে করা যায়। উগ্রবাদীরা যেভাবে অন্ধ হয়ে মরণ নেশায় নেমেছে, তাদেরকে কিভাবে চোখে আলো দেখাবেন? শিক্ষা ও সংস্কৃতি চর্চা অনেকাংশে বাড়াতে হবে। আমাদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সেভাবে কাজ করতে হবে। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ও আমাদের সংস্কৃতিকর্মীদের নিয়ে একটি সেল গঠন করুন। চলেন আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গ্রাম গঞ্জে গিয়ে মানুষকে সহিংস উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদের কুফল সম্পর্কে বুঝাই। বাংলাদেশ ও সাংস্কৃতিক অঙ্গন টিকিয়ে রাখতে হলে নিজ থেকে আমাদের কাজ করতে হবে।
শহীদুজ্জামান সেলিম বলেন, উগ্রবাদ প্রতিরোধে সাংস্কৃতিকর্মীদের অনেক কিছু করার আছে। সহিংস উগ্রবাদ সম্পর্কে সকলকে সচেতন করতে প্রত্যেকটি টেলিভিশনে প্রতিমাসে সন্ত্রাস বিরোধী নাটক প্রচারে বাধ্য করা, তারকা শিল্পীদের নিয়ে দেশের বিভিন্নস্থানে জনগণের সাথে কথা বলে তাদেরকে সহিংস উগ্রবাদ সম্পর্কে ধারণা দেয়া ও বছরে ২-৩টি সহিংস উগ্রবাদ বিরোধী মঞ্চ নাটক মঞ্চায়িত করতে বাধ্যতামূলক করা। চলচ্চিত্রে সহিংস উগ্রবাদ বা জঙ্গিবাদ নিয়ে সিনেমা প্রচার হলেও নাটকে এর উপস্থিতি নেই। স্যোশাল কমিটমেন্টের আওতায় আমরা শিল্পীদের বিভিন্ন জায়গায় প্রেরণ করব। আমরা চাই উগ্রবাদ নয়, সম্প্রীতি।
বাংলাদেশ পুলিশের সন্ত্রাস দমন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ প্রতিরোধ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ডিএমপি’র কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট ‘উগ্রবাদ প্রতিরোধে সংস্কৃতিকর্মীদের করণীয়’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে।