বিশ্বের এক দিকে পরমাণুশক্তির হুংকার, শক্তি প্রদর্শন, আর অন্য দিকে সম্পূর্ণ স্রোতের উল্টো মুখে হাঁটার নজির স্থাপন করল জার্মানি। পরমাণুশক্তি উৎপাদন ও তার ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ করল তারা। চালু থাকা শেষ তিনটি পরমাণু চুল্লি গত কাল রবিবারই নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে তীব্র জ্বালানি-সংকটে রয়েছে জার্মানি-সহ গোটা ইউরোপ। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারও ধীরে ধীরে বন্ধ করে দিচ্ছে তারা। এই অবস্থাতেও পরমাণু শক্তির ব্যবহার বন্ধের সিদ্ধান্ত নিল তারা। রীতিমতো সাহসী সিদ্ধান্ত। যে সিদ্ধান্তে খুশি জার্মানির অগণিত মানুষ। পরিবেশ মন্ত্রী স্টেফি লেমকে বলেন- পরমাণু শক্তির ঝুঁকি এতই বেশি যে, তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা শেষ পর্যন্ত বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
২০০২ সাল থেকে পরমাণু শক্তির ব্যবহার বন্ধের কথা ভাবতে শুরু করেছিল জার্মানি। জাপানে ফুকুশিমা-দাইচি পরমাণু বিপর্যয়ের পরে বিষয়টি সম্পর্কে আরও চিন্তা ভাবনা করা হয়। সেই মতো পদক্ষেপ করতে শুরু করেন তৎকালীন চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মর্কেল। হয়তো গত বছরই বন্ধ করে দেওয়া হত। যুদ্ধের জেরে রুশ গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হয়। তাই পিছিয়ে যায় এই প্রক্রিয়াটি। অবশেষে ২০২৩ সালে সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হল পরমাণু চুল্লি।
অর্থনীতি মন্ত্রী রবার্ট হাবেক জানিয়েছেন, একদিন-না-একদিন চুল্লিগুলি নষ্ট করে দিতে হতই। দেশের জ্বালানি পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। গ্যাস স্টোরগুলিতে জ্বালানি মজুত আছে। রুশ জ্বালানি সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় যে পরিস্থিতি হয়েছিল, সেটাও সামলানো গিয়েছে।
পরমাণু শক্তির ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ হওয়ার খবরে জার্মানির বিভিন্ন প্রান্তে আনন্দের জোয়ার। পরমাণু শক্তি-বিরোধী আন্দোলনের মূল হোতা ‘গ্রিনপিস’ বার্লিনে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এ ছাড়াও জার্মানির বেশ কয়েকটি শহরে মিছিল করেন সাধারণ মানুষ, উদ্যাপন করা হয় দিনটি।
কিন্তু বিকল্প কী ভাবল জার্মানি?
জার্মানির সরকার জানিয়েছে, তারা শক্তির প্রয়োজনীয়তা ও তার পূরণে একটি লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। তারা ঠিক করেছে, ২০৩০ সালের মধ্যে প্রয়োজনীয় জ্বালানির ৮০ শতাংশই তারা পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তি থেকে উৎপাদন করবে। গত এক বছরে ৫৫১টি উইন্ড টারবাইন বসানো হয়েছে জার্মানিতে। পরমাণু শক্তির পাশাপাশি জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধের চেষ্টাও করছে জ্বালানি।- জি নিউজ