পাহাড়ধসের ঘটনায় রাঙামাটিসহ পার্বত্য এলাকার তিন জেলায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৫১ মেট্রিক টন চাল, ৮৮ লাখ টাকা এবং ৫’শ বান্ডিল টিন দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের আবাসনের জন্য ঘর তৈরি করে দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে তিনি এ তথ্য জানান। এ সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহকামাল এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় মন্ত্রী বলেন, তিন পার্বত্য জেলায় পাহাড় ধসের ঘটনায় সামরিক বাহিনী সদস্যসহ মোট ১৬৬ জন বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন। পাহাড় ধসের পর সেখানে রাস্তাঘাট চালু হচ্ছে, বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হচ্ছে। আমাদের খাদ্যের কোনো অভাব নেই। ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর তৈরি করে দেয়া হবে। জেলা প্রশাসকের চাহিদা অনুযায়ী এসব করা হবে। সামনে ঈদ, বৃষ্টিও হচ্ছে। এ অবস্থায় আবারও পাহাড় ধস হলে অসহায় মানুষরা আরও দুর্ভোগে পড়বে। এ জন্য ১৫ জুলাই পর্যন্ত আশ্রয় কেন্দ্রগুলো চালু থাকবে। যারা আশ্রয় নিয়েছেন তারা সেখানেই থাকবেন। এখানে তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও খাবার সরবরাহ করা হবে।
মন্ত্রী বলেন, পাহাড় ধসের ঘটনা এড়াতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। পাহাড় কাঁটা, বালি উত্তোলন ও হাউজিং কর্মকান্ড বন্ধ করা হবে। ভূমি ধসের জরিপ ও ম্যাপ তৈরি করা হবে। পাহাড় ধস প্রতিরোধে বনায়নসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়াসহ ৪৭টি আশ্রয় কেন্দ্রের ৮ হাজার মানুষকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত খাদ্য সহায়তা দেয়া হবে। পাহাড় ধসে ৫ জন সেনাবাহিনীর সদস্যসহ ১৬৬ জন নিহত এবং ২২৭ জন আহত হয়েছেন। এরমধ্যে রাঙ্গামাটি জেলায় ১১৩ জন নিহত ও ২০০ আহত হন। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় এ পর্যন্ত ওই এলাকায় ১০৫১ মেট্রিক টন চাল ও ৮৮ লক্ষ টাকা, ৫০০ বান্ডিল ঢেউটিন ও প্রতি বান্ডিলের জন্য ৩ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
নিহত প্রত্যেকটি লোকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে এবং আহত ব্যক্তিদের ৫ থেকে-১৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে এবং ৮৩টি মেডিক্যাল টিম আহত ব্যক্তিদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দিচ্ছেন।
সভায় জানানো হয়, সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, স্থানীয় প্রশাসন ও নেতৃবৃন্দ সবাই পাহাড় ধসে হতাহত ব্যক্তিদের উদ্ধার ও আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। এ বছরের ন্যায় এতো বৃষ্টিপাত কখনো হয়নি। এর ফলে এবছর পাহাড় ধস এতো মারাত্মক আকার ধারন করেছে। পার্বত্য চট্রগ্রামের পাহাড় ধস প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য ২৭ সদস্যের একটি কমিটি কাজ শুরু করেছে। সভায় স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পণা উপস্থাপন করা হয়। বিশেষত একটি সুষ্ঠু পাহাড় ব্যবস্থাপনা নীতিমালা প্রনয়ন ও পাহাড় ব্যবস্থাপনার জন্য আলাদা স্বেচ্ছাসেবক দল গঠনের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়। পুরা পাহাড়ে নতুন করে বনায়নের জন্য সভায় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়।