ট্রান্স-এশিয়ান রেল রুটের অর্ন্তভুক্তির ভারতের অর্থায়নের মৌলভীবাজারের কুলাউড়া থেকে শাহবাজপুর পর্যন্ত ৫২ দশমিক ৫৪ কিলোমিটার রেলপথ পুনঃনির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৭৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভারত প্রথম লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি)’র আওতায় ৫৫৬ কোটি টাকা প্রকল্পে ব্যয় হবে। এছাড়া বাকী ১২২ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে। প্রকল্প নির্মাণে সময় ধরা হয়েছে ২ বছর। রেলপথটি নির্মাণে বুধবার রেলভবনে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে রেলওয়ে।
চুক্তিতে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক আব্দুল হাই ও ভারতীয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ‘কালিন্দী রেল কনস্ট্রাকশন’ এর ভাইস প্রেসিডেন্ট (ওভারসিস প্রজেক্ট) শারদ শর্মা স্বাক্ষর করেন। এ সময় রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক, রেলওয়ে মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শশী কুমার সিংহ সহ রেলওয়ে ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে রেলমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার রেল খাত উন্নয়নে একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় ভারতের অর্থায়নে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া থেকে শাহবাজপুর রেলপথ নির্মাণে ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হলো। এ ছাড়া আরও অনেক প্রকল্প চলমান আছে। এগুলো শেষ হলে জনগন রেলের মাধ্যমে আরও উন্নত সেবা পাবে। তবে রেলপথটি দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের প্রতি আহবান জানান মন্ত্রী।
রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন বলেন, চুক্তি অনুযায়ী প্রায় ৫৪৫ কোটি টাকা ব্যয় কালিন্দী রেল আগামী দুই বছরের মধ্যে ৫২ দশমিক ৫৪ কিলোমিটার রেল লাইন নির্মাণ কাজ শেষ শেষ করবে। এছাড়া নির্মাণ করা হবে ৫৯টি ছোট-বড় সেতু ও ছয়টি স্টেশন (জুড়ী, দক্ষিণভাগ, কাঁঠালতলী, বড়লেখা, মুড়াউল ও শাহবাজপুর)। ভারতের লাইন অব ক্রেডিট এর অর্থায়নে প্রকল্পটি নির্মিত হচ্ছে। ১৯১০ সালে চালু হওয়া কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশন ২০০২ সালে বিএনপি সরকারের সময় বন্ধ হয়ে যায়।
প্রকল্প সূত্র জানায়, ২০১৫ সালে কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ অংশের পুনর্বাসনে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানকে পরামর্শক নিয়োগ দেয় রেলপথ মন্ত্রণালয়। বিদ্যমান ৫২ কিলোমিটারের রেলপথটিকে ডুয়েলগেজে রূপান্তরিত করে আরো ৯ কিলোমিটার বাড়িয়ে ভারতের করিমগঞ্জ পর্যন্ত নেওয়া হলে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে আঞ্চলিক ও ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে।
এর আগে কুলাউড়া থেকে শাহবাজপুর পর্যন্ত ৪২ কিলোমিটার রেলপথে ‘লাতুর ট্রেন’ চলাচল করত। যাত্রীদের সুবিধার্থে শাহবাজপুর, মুড়াউল, বড়লেখা, কাঁঠালতলী, দক্ষিণভাগ ও জুড়ীতে স্টেশন ছিল। এ রেলপথ দিয়ে ভারতের করিমগঞ্জ পর্যন্ত মালামাল বহন করা যেত। ২০০২ সালের ৭ জুলাই বিএনপি সরকার লোকসান দেখিয়ে লাতুর ট্রেনটি বন্ধ করে দেয়। ফলে ব্যবসায়ী ও যাত্রীরা পড়েন বিপাকে।
বেহাত হয়ে যায় রেলওয়ের ভূমি। তবে আন্তর্জাতিক কানেক্টিভিটির বিষয়টি বিবেচনা করে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথটিকে পুনরায় চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বর্তমান সরকার। এ জন্য ৬৭৮ কোটি টাকার একটি সংশোধিত প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। এ ব্যয়ের মধ্যে সরকার দেবে ১২২ কোটি টাকা। বাকি ৫৫৬ কোটি টাকা ভারত সরকার বাংলাদেশকে ঋণ হিসেবে দেবে। প্রাথমিকভাবে মিটারগেজ রেলপথ চালুর পরিকল্পনা নেয়া হলেও বর্তমানে তা ডুয়েলগেজ করা হচ্ছে। এজন্য ৬০ কেজির রেলপাত ব্যবহার করা হচ্ছে বলে রেল-মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়।