ডিএমপি নিউজঃ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে শুরু হলো পাঁচ দিনের পুলিশ সপ্তাহ ২০১৮। ‘জঙ্গি মাদকের প্রতিকার, বাংলাদেশ পুলিশের অঙ্গীকার’ প্রতিপাদ্য নিয়ে এবারের পুলিশ সপ্তাহ শুরু হয়েছে।
আজ সকালে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মাঠে বর্ণাঢ্য পুলিশ প্যারেডের মধ্য দিয়ে পুলিশ সপ্তাহ ২০১৮ এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ সময় সারাদেশের বিভিন্ন পুলিশ ইউনিটের সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত ১১টি কন্টিনজেন্ট, সুসজ্জিত বাদকদল, অশ্বারোহীদল ও পতাকাবাহী দলের নয়নাভিরাম প্যারেড পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী। অভিবাদন গ্রহন শেষে ১৮২ জন পুলিশ সদস্যকে বিপিএম ও পিপিএম পদক পড়িয়ে দেন তিনি।
২০১৭ সালে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে এবার ১৮২ জন সদস্যকে দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (বিপিএম) ও প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল (পিপিএম)।
পদকের মধ্যে ৩০ জন পুলিশ সদস্য বিপিএম-সাহসিকতা, ৭১ জন পিপিএম সাহসকিতা, গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদ্ঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণের মাধ্যমে প্রশংসনীয় অবদানের জন্য ২৮ জন পুলিশ সদস্য বিপিএম সেবা ও ৫৩ জন পেয়েছেন পিপিএম সেবা পদক।
জঙ্গি ও সন্ত্রাস মোকাবিলায় শহীদ লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ, শহীদ ইন্সপেক্টর চৌধুরী মো. আবু কয়ছর ও শহীদ ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ মনিরুল ইসলামকে বিপিএম-মরণোত্তর পদক প্রদান করা হয়। তাঁদের পক্ষে পদক গ্রহণ করেন তাঁদের স্ত্রীরা।
পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের শান্তি, নিরাপত্তা ও শৃংখলার প্রতীক বাংলাদেশ পুলিশ। দেশের সকল সংকটকালে বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা সাহসিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করছে। এদেশের মাটিতে কোন জঙ্গি, সন্ত্রাস ও যুদ্ধাপরাধীদের ঠাঁই হবে না। আমরা চাই বাংলাদেশ জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদমুক্ত হবে। শান্তির দেশ হবে। আমরা বাংলার মাটি থেকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূল করে দেশের শান্তি নিশ্চিত করতে চাই। তাই সব গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ করে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে নির্মূল করতে হবে। আমরা চাই প্রতিটি পরিবার তাদের সন্তানদের নজরদারিতে রাখুক। তারা কোথায় যাচ্ছে, কী করছে তার খোঁজ রাখতে হবে। কারণ জন সম্পৃক্ততা থাকলে পুলিশের পক্ষে জঙ্গিবাদ মোকাবিলা করা সহজ হবে।
তিনি আরো বলেন, আমরা অত্যান্ত দক্ষতার সাথে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় সক্ষম হয়েছি। এজন্য পুলিশ বাহিনীর রয়েছে বিরাট ভূমিকা সেজন্য তাদেরকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। ২০১৬ সালে গুলশান ও শোলাকিয়ার ঘটনার পর পুলিশ দক্ষতার সঙ্গে জঙ্গিদের নির্মূলে কাজ করে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত যেসব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য জঙ্গিবাদ নির্মুলে শহীদ হয়েছেন তাদের ত্যাগ জাতি কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করবে। জঙ্গিবাদ নির্মুলে পুলিশের শক্তি বৃদ্ধিতে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ পুলিশ এন্টি টেরোরিজম ইউনিট গঠন করা হয়েছে। এই ইউনিট জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমন করে এদের মদদ দাতাদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্থিতিশীল্ আইনশৃংখলা পরিস্থিতি দেশের উন্নয়নের পূর্ব শর্ত। আইনশৃঙ্খলা খাতের খরচকে ব্যয় হিসেব নেয়া হয় না। আমরা মনে করি এটা বিনিযোগ। আমরা ক্ষমতায় আসার পর সকলের বেতন যে পরিমাণ বাড়িয়েছি পৃথিবীর কোনও দেশের সরকার এটা পারেনি। আমরা পেরেছি কারণ আমাদের অর্থনীতি যথেষ্ট গতিশীল ও শক্তিশালী।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন অপরাধ দমনে পুলিশের সাহসিকতার পরিচয় তুলে ধরে বলেন, অপরাধ দমনে প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পুলিশ নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সেই সাথে বেড়েছে প্রযুক্তির ব্যবহার । অনলাইন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, মেবাইল এ্যাপস, বিডি পুলিশ হেল্প লাইন, ই-প্রসিকিউশন, সিআইএমএস, সিডিএমএসসহ নানান প্রযুক্তি পুলিশ বাহিনীতে সংযুক্ত করায় তাদেরকে স্বাগত জানাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিকভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আমরা ক্ষুধামুক্ত ও দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়তে চাই। হাত পেতে নয়, মাথা নিচু করে নয়, স্বাধীন দেশ হিসেবে এগিয়ে যেতে চাই। মাথা উঁচু করে দেশকে এগিয়ে নিতে চাই। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
পদকপ্রাপ্ত সদস্যদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতো বিশাল সংখ্যক পদক পাওয়া অতিথে কখনও হয়নি। আপনারা স্বস্ব কর্মস্থলে অনেক দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিশেষ করে জঙ্গিবাদ দমনে আপনাদের ভূমিকা প্রশংসনীয়। আমি মনে করি এই পদক আপনাদের কাজের স্বীকৃতির পাশাপাশি ভবিষ্যতে আরো পেশাদারিত্ব ও আন্তরিকতার সাথে দেশ ও জাতির সেবায় কাজ করতে অনুপ্রেরণা জোগাবে। মনোমুগ্ধকর প্যারেড প্রদর্শন করায় সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে পুলিশ সপ্তাহ ২০১৮ এই উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।