ডিএমপি নিউজঃ প্রত্যেকেই নাইজেরিয়ার নাগরিক, বর্তমানে বসবাস করেন বাংলাদেশে। বাংলাদেশে বসে নানা প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেন তারা। প্রতারণার মূল হাতিয়ার নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন দেশের নাগরিকদের তথ্য ও ছবি ব্যবহার করে প্রথমে ফেইক আইডি খুলেন তারা। অতঃপর সেসব আইডি থেকে রিকুয়েস্ট দিয়ে নানা আলাপচারিতায় জড়িয়ে বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন সম্ভাব্য ভিকটিমদের সাথে। তারপর কখনো মূল্যবান উপহার পাঠানোর কথা বলে, কখনো বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার আগ্রহ দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে করেন প্রতারিত। এছাড়াও এসব নাইজেরীয় কখনো প্রতারণার পদ্ধতি হিসেবে বেছে নেন ডলার ট্রিক অর্থ্যাৎ ডলার ব্যবহার উপযোগী করার মেশিন দেখিয়ে প্রতরণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাত করেন তারা।
এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ১ বাংলাদেশিসহ ১১ নাইজেরীয়কে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এর গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ ।
গ্রেফতারকৃতদের নাম- হেনরি ওচিতা ওকোচোকো, চিছম হিমানুয়েল অভিযুলু, ওকেকে পিটার, ওবিনা সান্ডে, অনেকা এম্বা, চিছম এনটনি ইকুয়েঞ্জ, ওকেয়া আজুবাইক, অনুয়ারাহ অজুইমেনা ডানিয়েল, অনুরুকা জিনিকা ফানসিন্স, লকি,ডেমাডা চিনেডো ও চাঁদনী আক্তার । এসময় তাদের হেফাজত থেকে ১টি ড্রলার ট্রিক মেশিন, সিলভার কাপড়ে মোড়ানো আঠারোটি বান্ডেল, ২টি ল্যাপটপ, ১৭টি মোবাইল ফোন, ৫ বোতল কেমিক্যাল উদ্ধারমূলে জব্দ করা হয়।
আজ বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল ২০২২) দুপুর ১২টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার, বিপিএম (বার)।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, সম্প্রতি গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় কতিপয় নাইজেরিয়ান নাগরিক কিছু অসাধু ব্যক্তির সহযোগিতায় সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ব্যবহার করে মানুষকে প্রতরণা করে আসছে। এই বিষয় নিয়ে কাজ করেন গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান, বিপিএম(বার), পিপিএম-সেবা। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় বুধবার (২০ এপ্রিল ২০২২) ধারাবাহিক অভিযানে রাজধানীর পল্লবী ও ভাটারা এলাকা থেকে এই চক্রের সদস্যদেরকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিম।
তিনি বলেন, এই আফ্রিকান নাগরিকরা খেলোয়াড় এবং বিজনেস ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে এসে পরবর্তীতে অবৈধভাবে অবস্থানের মাধ্যমে প্রতারণা করে। এ চক্রটির প্রধান নাইজেরিয়ান নাগরিক হেনরি ওসিতা ওকেচুকু এবং চিসম ইমানুয়েল। এই দুইজনই মূলত বাংলাদেশি সহযোগীদের সাথে সক্রিয় যোগাযোগ রাখতো ও প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাতকৃত টাকা গ্রহণ করতো। তারা কাস্টমস অফিসারের কাজের জন্য বাংলাদেশি নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রতারণার কাজে নিয়োজিত করতো। অন্যান্য বিদেশি সদস্যরা বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় বাংলাদেশি নাগরিকদেরকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠায় এবং মেসেজ রিকুয়েস্ট পাঠিয়ে পূর্বপরিকল্পিত সুন্দর আকর্ষণীয় কথোপকথনের মাধ্যমে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করে চক্রের হোতাদের মাধ্যমে প্রতারণা করে থাকে। প্রাথমিকভাবে ওকেচুকু’র ডিভাইসে পাঁচটি ফেসবুক একাউন্ট এবং চিসমের ডিভাইসে ৩২ টি ফেসবুকের অ্যাকাউন্টের তথ্য পাওয়া গেছে। চারটি উপায়ে চক্রটি প্রতারণা করে- উপহার/পার্সেল প্রেরণ করে, ব্যবসায়িক পার্টনার ও বিনিয়োগের কথা বলে এবং ডলার ট্রিক/ডলার ব্যবহার উপযোগী করার মেশিন দেখিয়ে।
তিনি বলেন, চক্রের অন্য এক সদস্য নিজেকে কাস্টমস অফিসার বলে পরিচয় দিয়ে ভিকটিমকে ফোন করে বলতো স্যার আমি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কাস্টমস অফিসার বলছি। আপনার নামে একটি পার্সেল এসেছে। আপনার গিফট ছাড়ানোর জন্য কাস্টমস ফি হিসেবে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পরিশোধ করতে হবে। টাকা পরিশোধের জন্য তারা ভিকটিমকে বাংলাদেশি ব্যাংক একাউন্ট নম্বর দিতো। ব্যাংক একাউন্ট নম্বর পেয়ে ভিকটিমরা সরল মনে টাকা পাঠাতো। এই চক্রটি এভাবে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এ চক্রটি টাকার বিনিময়ে ভ্যান চালক ও গার্মেন্টস কর্মীদের এজেন্ট ব্যাংকিং একাউন্ট কিনে নেয়। পরবর্তীতে সেই একাউন্টগুলোতে চক্রটি লক্ষ লক্ষ টাকা লেনদেন করে।
ফেসবুকে কোন সুন্দরী রমনীর আইডি থেকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট আসলে তা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ প্রদান করেন ডিবির এ কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে পল্লবী থানায় মামলা রুজু করা হয়েছে।
গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান, বিপিএম(বার), পিপিএম-সেবা এর নিদের্শনায় অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ কামরুজ্জামান সরদার এর তত্ত্বাবধানে সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিমের সহকারী পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ খলিলুর রহমানের নেতৃত্বে অভিযানটি পরিচালিত হয়।