ডিএমপি নিউজঃ প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পে বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে সারাদেশে গৃহহীন মানুষকে ঘর উপহার দিয়ে লাখ লাখ পরিবারকে আশ্রয় দিয়ে তিনি তাদের নতুন ঠিকানা উপহার দিচ্ছেন।
দিনাজপুর জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে ১৪ হাজার পঞ্চান্নটি গৃহহীন পরিবারের মধ্যে ইতিমধ্যেই ১০ হাজার ৬১৮ টি পরিবারকে তাদের আপন ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। কিছুদিন পূর্বেও যাদের ছিল না কোন মাথা গোঁজার ঠাই, তারা এখন রঙিন ঢেউটিন দিয়ে নির্মিত সেমি পাকা ঘরে বসবাস করছেন। তাদের নিজেদের আঙিনায় তারা শাকসবজি চাষ করছেন এবং কেউ কেউ করছেন হাঁস মুরগিসহ গরু পালন। ছেলেমেয়েদের তারা স্কুলে পাঠাচ্ছেন সংসারে নিয়ে আসছেন অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা এবং সুখের নির্ভরতা। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সমৃদ্ধ জীবনমানের নিশ্চয়তা দিতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন কার্যক্রম।
দিনাজপুর সদর উপজেলার চেহেলগাজী ইউনিয়নের বড়ইগ্রামের অসহায় নারী মুল্লিকা বেওয়ার স্বামী শেখ সোবহান চাকরি করতেন সরকারি কলেজে। এই দম্পতির ৪ ছেলের একজন থাকেন শ^শুর বাড়িতে। আরেক ছেলে কলেজ মোড়ের বস্তিতে। বাকী দুই ছেলেকে নিয়ে কলেজ মোড়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন মুল্লিকা। কিন্তু ৩০ বছর হলো স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে একাই সংসারের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে সন্তানদের বড় করেছেন। মুল্লিকার পৈত্রিক ভিটা ঘরশুন্য। দেনার দায়ে উঠোনটুকুও সম্পত্তির শরীকরা বিক্রি করেছেন। শ^শুর বাড়ির সম্পত্তি থেকেও পারিবারিক কলহে জোটেনি এক কানি জমিও।
আর রহিমের জন্মস্থান রংপুরে। ২৫ বছর আগে পৈত্রিক বসতভিটা হারিয়ে ভাসতে ভাসতেই দিনাজপুরের সদর পল্লীতে এসেছিলো তার পরিবার। বিয়ের পর গুধিপাড়ায় শ^শুর বাড়িতেই বসবাস করতেন এই ভিটেমাটি হারা রহিম। নিজের চাল-চুলা না থাকায় কিছুটা সমর্পিত জীবনই কাটিয়েছেন তিনি। অন্যের আশ্রয়ে থাকার লজ্জা নিয়েই দু’জনের সংসারে বেড়েছে আরো ৩ সন্তান। যে বাড়তি বোঝা শ^শুর বাড়ির মানুষ নিতে পারেনি বলে শেষ আশ্রয়টুকুও ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন আব্দুর রহিম। সেই রহিম উপহারের ঘর থেকেই চালিয়ে নিচ্ছেন নিজের ছোট্ট ব্যবসা। জমি কেনা কিংবা ঘর বানানোর সামর্থ যার কখনোই ছিলো না, সেই মানুষটি এখন জমিসহ ঘরের মালিক।
মুল্লিকা বেওয়া বা আব্দুর রহিমের মত গৌরী রানী, ঠিকানা পরিচয়হীন সাধনা বালা, ভ্যানচালক আবু সাইদ বা পারভীন বেগমের স্থায়ী আশ্রয় হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ন প্রকল্পে।
ভিটেমাটি স্বজন হারা আশ্রয়ন প্রকল্পে ঠাই হওয়া এসব প্রত্যেক মানুষের ছিলো সংকটাপন্ন ও দুঃখের জীবনগাঁথা। কিন্তু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী বড়ইগ্রামের আশ্রয়নে স্থায়ী নিবাস পাওয়া এসব পরিবার এখন সুখী ও স্বাবলম্বী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন ভাবনার অন্তর্ভুক্তিমূলক চেতনার বাস্তব রূপ আশ্রয়ন প্রকল্প। গৃহায়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও পেশাভিত্তিক প্রশিক্ষণের মতো মৌলিক চাহিদার পুর্নাঙ্গ সংগতি যেমন হয়েছে, তেমনি পারিবারিক কল্যাণ ও সামাজিক উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় আরও এক ধাপ এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। জেন্ডার ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অসমতা দূর করে প্রতিষ্ঠা হয়েছে সার্বজনীন অধিকার। গুচ্ছভিত্তিক আবাসনে গ্রামীন অর্থনীতি চাঙ্গা হয়েছে। জাতীয় অর্থনীতিতে যার সুফল যুক্ত হয়েছে প্রতিটি পদক্ষেপে।
একটা মানবিক উদ্যোগ আর একটুখানি সহযোগিতায় সাধনার মতো পায়ের নিচে শক্ত মাটি পেয়েছে দেশের লাখো ভূমিহীন অসহায় মানুষ। অন্নসংস্থানে আশ্রয়নের প্রতিটি ঘরের আঙিনা হয়ে উঠেছে একেকটি শস্যক্ষেত্র। এই আঙিনায় পশুপালন এবং সবজি চাষে দিন পার হয়ে যাচ্ছে সমৃদ্ধ বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবনযাত্রা।
তথ্যসূত্র: একুশে টিভি