মানব দেহ সুস্থ ও শক্তিশালী রাখতে প্রোটিন অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। প্রোটিনের মাত্রা বেড়ে গেলেও যেমন শরীরে নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়, তেমনই প্রোটিনের ঘাটতি হলেও শরীরে নানা জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি কিছু কিছু লক্ষণের মাধ্যমে এই উপসর্গ প্রকাশ পায়। যেমন-
১. প্রোটিনের অভাবে হঠাৎ প্রচুর পরিমাণে চুল ঝরতে পারে।
২. শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি হলে লালাগ্রন্থি ফুলে যায়। এতে হঠাৎ গাল, মুখ ফুলে যেতে পারে।
৩. শরীরের প্রোটিনে ঘাটতি হলে সারাক্ষণ ক্লান্ত লাগে। সামান্য পরিশ্রমেই হাঁপিয়ে যেতে পারেন। সব সময় ঘুম ঘুম ভাব বা ঝিমুনি ভাবও দেখা দেয়।
৪. প্রোটিন শরীরে নতুন কোষ তৈরিতে সাহায্য করে। তাই প্রোটিনের ঘাটতি হলে শরীরে পানির আধিক্য দেখা দেয়। তখন শরীরের বিভিন্ন অংশে অস্বাভাবিক ফোলাভাব তৈরি হয়।
৫. হঠাৎ করে ত্বক শুষ্ক, রুক্ষ বা খসখসে হয়ে যায়।
৬. প্রোটিনের অভাবে নখের রং ফ্যাকাশে হয়ে যেতে পারে। তখন নখ দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে যায়।
৭. শরীরে প্রোটিনের অভাবে হলে রক্তরস কমে আসে। এতে চোখের চারপাশ অস্বাভাবিকভাবে ফুলে যেতে পারে।
প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করবেন যেভাবেঃ
১) ডিমঃ
ডিম মাংসপেশি গঠনকারী সবচাইতে উপযুক্ত প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। ডিমের কুসুমে যে কলেস্টোরল পাওয়া যায় তা স্টেরোয়েড হরমোন হিসেবে কাজ করে এবং ডিমের আধা গ্রাম লেউসিন মাংসপেশি গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। একই সাথে মাত্র ৬০ ক্যালোরির ও ৫/৬ গ্রাম প্রোটিন সমৃদ্ধ ডিম আপনার দেহে ফ্যাট না জমিয়ে শুধুই মাংসপেশি গঠনে সহায়তা করে বলে মাংসপেশি সুদৃঢ় ভাবে গঠনে বেশ জনপ্রিয় একটি খাবার।
২) বাদামঃ
মাত্র ১ গ্রাম কাজু বা কাঠবাদামে রয়েছে ১৫০-১৭০ ক্যালরি। বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এবং ফাইবার যা মাংসপেশি গঠনে সহায়তা করে কোনো ধরণের বাড়তি ক্যালরি ছাড়াই। মাত্র ১/৪ কাপ বাদামে রয়েছে প্রায় ৮ গ্রাম প্রোটিন। এটি মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট ও ম্যাগনেসিয়ামের বেশ ভালো উৎস যা দেহের মাংসপেশি গঠনে সহায়তা করে।
৩) চীজ বা পনিরঃ
পনিরে রয়েছে উচ্চ মাত্রার ক্যাসেইন যা রক্তের অ্যামিনো এসিডের মাত্রা ধীরে ধরে বৃদ্ধি করে। এছাড়াও এতে রয়েছে ভালো ব্যাকটেরিয়া যা দেহকে সকল খাবারের পুষ্টি সঠিকভাবে শোষণ করতে সহায়তা করবে। মাত্র আধা কাপ পনিরে রয়েছে ১৪ গ্রাম প্রোটিন এবং ৮০ ক্যালরি। সুতরাং আপনি যদি ফ্যাট ছাড়া শুধুমাত্র মাংপেশি বৃদ্ধি করতে চান তবে পনির বেশ ভালো একটি খাবার।
৪) ছোলা/বুটঃ
সকাল কিংবা বিকেলের নাস্তায় ছোলা বা বুট রাখুন সুদৃঢ় ভাবে মাংসপেশি গঠন করতে। উচ্চ মাত্রার প্রোটিন সমৃদ্ধ এই খাবারটির মাত্র ১ কাপ পরিমানে রয়েছে ৪৫ গ্রাম স্লো আক্টিং কার্ব এবং ১২ গ্রাম ফাইবার। আপনি অনায়েসে ভাত এবং আটার রুটির পরিবর্তে খাদ্যতালিকায় এই ছোলা বা বুট রাখতে পারেন।
৫) গরুর মাংসঃ
অ্যামিনো অ্যাসিড, বি ভিটামিন এবং ক্রিয়েটিনে ভরপুর গরুর মাংসকে ধরা হয় মাংসপেশি গঠনের সব চাইতে কার্যকরী খাবার। বিশেষ করে প্রোটিনের বেশ ভালো উৎস এই গরুর মাংস। মাত্র ১০০ গ্রাম গরুর মাংসে রয়েছে ২৭ গ্রাম প্রোটিন। তবে এর পাশাপাশি রয়েছে ১১ গ্রাম ফ্যাট ও ২০০ ক্যালরি। এছাড়াও গরুর মাংসে রয়েছে বি১২ ভিটামিন, জিংক, এবং আয়রন যা মাংপেশি গঠনে বিশেষভাবে কার্যকরী।
৬) ডালঃ
মাংসপেশি গঠনে সব চাইতে ভালো উদ্ভিজ প্রোটিন হচ্ছে ডাল। ১ কাপ পরিমাণে রান্না করে ডালে রয়েছে ১৮ গ্রাম প্রোটিন এবং খুব ভালো মাত্রার কার্বোহাইড্রেট। যারা বডি বিল্ডিংএর ব্যাপারে আগ্রহী তারা ডালের স্যুপ বেশি করে খেতে পারেন।