কোনও প্লাস্টিক বর্জ্যকেই পড়ে থাকতে দিচ্ছে না। গোগ্রাসে প্লাস্টিক খেয়ে ফেলছে এনজাইম বা উৎসেচক! সব প্লাস্টিকই চলে যাচ্ছে সেই ‘প্লাস্টিক-খেকো’ এনজাইমের পেটে! এর আগে পাকিস্তানে আবর্জনার স্তূপে হদিশ মিলেছিল প্লাস্টিক-খেকো একটি বিশেষ প্রজাতির ছত্রাকের।
কোনও কল্পকাহিনী নয়, সায়েন্স ফিকশনও নয়। হালে সেই ‘প্লাস্টিক-খেকো’ এনজাইমের হদিশ পেয়েছেন ব্রিটেন ও আমেরিকার এক গবেষকদল।
তা হলে কি প্লাস্টিক বর্জ্যের দূষণ নিয়ে আমাদের উদ্বেগের দিন এ বার সত্যি-সত্যিই শেষ হতে চলেছে? উত্তরটা এখনও অজানা থাকলেও, সেই সম্ভাবনা যে একেবারে অসম্ভব নয়, এ বার তারই দিশা দেখালেন গবেষকরা।
তাঁরা এমন একটি এনজাইম বা উৎসেচকের হদিশ পেয়েছেন, যা গপাগপ করে প্লাস্টিক খেয়ে ফেলে। প্লাস্টিকের ওই বিশেষ যৌগটির নাম- ‘পলিইথিলিন টেরেফ্থ্যালেট’ (পিইটি বা ‘পেট’)। ওই প্লাস্টিক যৌগ গিয়ে বোতল বানানোর জন্য প্রথম পেটেন্ট হয়েছিল ১৯৪০-এর দশকে। বোতল বানানোর জন্য প্লাস্টিক পরিবারের ওই বিশেষ যৌগটিকে বেছে নেওয়া হয়েছিল একটাই কারণে, তা হল- ওই যৌগটি পরিবেশে লক্ষ লক্ষ বছর টিঁকে থাকতে পারে। হালের গবেষণায় এও দেখা গিয়েছে, প্লাস্টিকের এই বিশেষ যৌগ পলিইথিলিন টেরেফ্থ্যালেট-ই পৃথিবীর স্থল ও জলের বেশির ভাগ অংশে দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে উঠেছে।
অন্য একটি বিষয় নিয়ে গবেষণা করার সময়েই ব্রিটেনের পোর্টসমাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ও মার্কিন শক্তি মন্ত্রকের অধীনে থাকা ন্যাশনাল রিনিউয়েবল এনার্জি ল্যাবরেটরির (এনআরএএল) বিজ্ঞানীরা ওই এনজাইমটির হদিশ পেয়েছেন।
গবেষকরা দেখেছেন, ওই এনজাইমটি একটি বিশেষ ব্যাকটেরিয়াকে সাহায্য করে প্লাস্টিকের বিশেষ যৌগ ‘পেট’কে ভেঙে ফেলতে বা ‘খেয়ে হজম’ করে ফেলতে।
সহযোগী গবেষক, পোর্টসমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জন ম্যাকগিহান জানিয়েছেন, এনজাইমটির এই ক্ষমতার কথা জানতে পেরে তাঁরা সেই ক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা শুরু করেন। তার জন্য তাঁরা কয়েকটি অ্যামাইনো অ্যাসিড প্রয়োগ করে দেখেন, তাতে এনজাইমগুলি আরও দ্রুত প্লাস্টিক খেয়ে নিতে পারছে।
কোনও কোনও বিজ্ঞানী বলছেন, এনজাইম আদৌ বিষাক্ত নয় বলে এই পদ্ধতি খুবই কার্যকর হতে পারে ভবিষ্যতে, শিল্পজাত প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ কমাতে। তবে এ ব্যাপারে আরও গবেষণা দরকার।