বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা সেবার মান বাড়াতে নানামুখী উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রূপসী বাংলা হোটেলের সামনে নিজস্ব জমিতে একটি আধুনিক কনভেনশন সেণ্টার ও বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষনা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। নতুন করে ছাত্রদের জন্য আবাসিক হল,চিকিৎসক ,কর্মকর্তা ও নার্সদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ, ওয়ান পয়েণ্ট চেকআপ সেণ্টার চালু, নতুন করে আরও একাধিক অপারেশন থিয়েটার ও বৃহৎ পোস্ট অপারেটিভ সেণ্টার চালু, সাধারণ ইমাজেন্সি চালুসহ মাস্টারপ্ল্যান হাতে নেয়া হয়েছে। শিগগিরই তা বাস্তবায়ন করা হবে। এই লক্ষ্যে কাজ চলছে। শাহবাগে হস্তান্তর করা রেডিও অফিসের জায়গায় শিগগিরই অফিস ভবন স্থানান্তর করে কাজের পরিধি আরও বাড়ানো হবে।
মেডিকেল ভার্সিটি থেকে জানা গেছে, মেডিকেল ভার্সিটির উন্নয়নে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ যুগোপযোগী মাস্টারপ্ল্যান তৈরী করা হয়েছে। এর মধ্যে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য স্বয়ংসম্পূর্ণ ব্রোন ম্যারো ট্রান্সপ্লানটেশন চালু , সেণ্টার অব এক্সিলেন্স এর তৃতীয় পর্যায়ে কাজ শুরু। রোগীদের জন্য সি ব্লকে আরো ১৭ শয্যা বিশিষ্ট আইসিইউ ও এইচডিইউ চালু, শিশুদের জন্য পেডিয়েট্রিক আইসিইউ চালুর ব্যবস্থা করা ও সাধারণ ইমাজেন্সি চালু ,একটি ওয়ান পয়েণ্ট চেক আপ সেণ্টার চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। ইতো মধ্যে বেবী ডে কেয়ার চালু করা হয়েছে।
সূত্র মতে, রোগীদের উন্নত চিকিৎসা ও সেবার মান বাড়াতে কেবিন ব্লকের ৪র্থ তলার পরে নতুন করে ১২ তলায় রূপান্তর করে আইসিইউ কমপ্লেক্স,ওটি কমপ্লেক্সসহ কেবিন ব্লকের বিছানা সংখ্যা বর্ধিত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন নিজস্ব জমিতে একটি ক্যান্সার ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। যা উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। ভার্সিটির বিভিন্ন অনুষদে বিভাগের সংখ্যা ৪২ থেকে বাড়িয়ে ৫১তে উন্নীত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহায়তায় মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সি ব্লকের উত্তর পাশ্বে ১২ বিঘা জমি নামেমাত্র মূল্যে বরাদ্ধ পাওয়া গেছে। সেখানে বাংলাদেশ সরকার,বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের অর্থায়নে ১ হাজার শয্যা বিশিষ্ট সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল করার প্রক্রিয়া চলছে। দেশে সুলভ মূল্যে সর্বোচ্চ স্বাস্থ্য সেবা পেতে পারেন সেই লক্ষ্যে ২০১৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি একনেক সভায় মেডিকেল ভার্সিটির সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল নামে প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়। বাংলাদেশে এই ধরনের হাসপাতাল এই প্রথম। এই হাসপাতালটি চালু হলে চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়া রোগীদের সংখ্যা আরো কমে আসবে।
গত ১৮ জুলাই ২০১৭ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর কার্যালয়ে শাহবাগস্থ বেতারের জমি ও স্থাপনার দলিল মেডিকেল ভার্সিটির ভিসির কাছে হস্তান্তর করেন। নতুন করে বেবি ডে কেয়ার চালু করা হয়েছে।
মেডিকেল ভার্সিটির (গবেষনা ও উন্নয়ন) প্রো-ভিসি প্রফেসর ডাঃ শহীদুল্লাহ সিকদার বলেন, মেডিকেল ভার্সিটিতে প্রায় ২ হাজার গবেষনা কর্ম সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে গত ৩ বছরে প্রায় ১ হাজার গবেষনা কর্ম সম্পন্ন হয়েছে। এখন তাঁর নেতৃত্বে প্রতি বছর প্রায় ৮০০ গবেষণা কর্ম সম্পন্ন হয়। এতে চিকিৎসা ও শিক্ষার মান আরও বৃদ্ধি পায়।
সূত্র জানায়, গত ৩ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল ধরনের ভর্তি পরীক্ষায় কোন ধরনের অনিয়মের অভিযোগ ছাড়াই সুষ্ঠু, সুন্দরও স্বচ্ছ ভাবে যথাযথ নিয়মে সম্পন্ন ও দ্রুততার সঙ্গে ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। ভাসির্টিতে এমডি, এমএস.এমফিল ও ডিপ্লোমাসহ ৯৫টি পোস্ট গ্রাজুয়েট কোর্স চালু রয়েছে। যার মধ্যে ৬২টি রেডিডেন্সী কোর্স। এছাড়াও দেশে প্রথমবারের মত এমএসসি ইন নাসিং কোর্স চালু করা হয়েছে। এই ভাবে বর্তমান সরকারের আমলে ও গত ৩ বছরে নানামুখী উদোগ নেয়া হয়েছে। আরও নতুন নতুন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।
মেডিকেল ভার্সিটির জনসংযোগ শাখা থেকে বলা হয়েছে, বর্তমান ভিসি প্রফেসর ডাঃ কামরুল হাসান খান দায়িত্ব গ্রহণের পর গত প্রায় ৩ বছরে শিক্ষা ও গবেষনার সাফল্যসহ বহুমুখী কর্মকান্ডের ফলেই ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে স্কপাস ও স্পেনের সিমাগো রিচার্স গ্রুপ পরিচালিত জরিপে বিশ্ব সেরার তালিকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ৬৪০তম স্থান অর্জন করেছে। ওই জরিপে বাংলাদেশের ১১টি নেতৃত্বস্থানীয় বিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ৫ম স্থান অধিকার করে নিয়েছে। জরিপে দেখা গেছে, দক্ষিণ এশিয়ার চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভারতের একটি ইনস্টিটিউট এগিয়ে থাকলেও পিছিয়ে আছে অন্যান্য সকল চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষা, চিকিৎসা সেবা ও গবেষণায় গতিশীল নেতৃত্বের জন্য দেয়া হয় এশিয়ার অত্যান্ত মর্যাদা সম্পন্ন আন্তর্জাতিক পুরস্কার এডুকেশন লিডারশিপ এওয়ার্ড। ২০১৬ সালে অত্যান্ত মর্যাদা সম্পন্ন এই এওয়ার্ড দেয়া হয় মেডিকেল ভার্সিটির ভিসি প্রফেসর ডাঃ কামরুল হাসান খান।
মেডিকেল ভার্সিটির ৫১টি বিভাগ রয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালে বেডের সংখ্যা ১৯০৪টি। এর মধ্যে অর্ধেক বিনা ভাড়ার বিছানা। প্রতিদিন হাসপাতালের বহিঃবিভাগে ৮ হাজার রোগীর চিকিৎসা দেয়া হয়। আর বিকালে স্পেশালাইজড বহিঃবিভাগে প্রতিদিন ১ হাজার রোগীর সেবা দেয়া হয়। একই সঙ্গে পরীক্ষা নিরীক্ষার সব ধরনের সুযোগ সুবিধা রয়েছে। সিটি স্ক্যান,এমআরআই ব্যয়বহুল বহু পরীক্ষাও তুলনামূলক ভাবে কম খরচে চিকিৎসা দেয়া হয়।