চিকিৎসা সেবা, শিক্ষা ও গবেষণাকে আন্তর্জাতিক মানের উন্নীত করার অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস মঙ্গলবার উদযাপিত হয়। দেশের প্রথম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার এ দিনটি নানা কর্মসূচির মাধ্যমে পালন করা হয়। এর মধ্যে সকাল ৮টায় বি ব্লকে বঙ্গবন্ধুর ম্যূরালে পুষ্পস্তবক অপর্ণের মাধ্যমে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ, সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন,সকাল ৮টা ২০ মিনিটে পায়রা ও বেলুন উড়ানো, সকাল ৮টা ২০ মিনিটে র্যালির শুভ উদ্বোধন, সকাল ১০টায় বৈজ্ঞানিক অধিবেশন, দুপুর ১২টায় আলোচনা সভা এবং বিকাল ৩টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
সকালে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়ার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর ম্যূরালে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বস্তরের শিক্ষক, চিকিৎসক, ছাত্রছাত্রী, কর্মকর্তা, নার্স-ব্রাদার, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট, টেকনিশিয়ান ও কর্মচারীবৃন্দ। বঙ্গবন্ধুর ম্যূরালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকেও শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়। উপাচার্য এরপর একটি বর্ণাঢ্য র্যালির শুভ উদ্বোধন করেন। র্যালিটি এ ব্লকের সামনে বটতলা থেকে শুরু হয়ে টিসসি মোড় হয়ে পুনরায় বটতলা গিয়ে শেষ হয়। সেখানে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি উপস্থিত সকলকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়কে চিকিৎসা সেবা, শিক্ষা ও গবেষণাকে আন্তর্জাতিক মানের উন্নীত করতে নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথ পালনের আহ্বান জানান এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়কে সকল ক্ষেত্রে বিশ্বমানে উন্নীত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
সকাল ১০টায় শহীদ ডা. মিলন হলে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য অধ্যাপক ডা. এম এ কাদেরী স্যারকে উৎসর্গ করে “বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জনসমূহ ও স্বপ্ন” শীর্ষক বৈজ্ঞানিক অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর একই স্থানে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী জাহিদ মালেক এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মোঃ মুরাদ হাসান এমপি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. আ. ফ. ম. রুহুল হক এমপি, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী। সম্মানিত অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের অতিথি সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান, বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের মহাসচিব ডা. মোঃ ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ। সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শহীদুল্লাহ সিকদার। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. সাহানা আখতার রহমান, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলম, সম্মানিত কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান। এছাড়াও শিক্ষক, চিকিৎসক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, নার্স, মেডিক্যাল টোকনোলজিস্ট ও কর্মচারীদের পক্ষ থেকে স্ব স্ব প্রতিনিধিবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। এরপর বিকাল ৩টায় অডিটোরিয়াম, এ ব্লকের অডিটোরিয়ামে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ২২তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপিত হয়।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী জনাব জাহিদ মালেক এমপি বলেন, কিছু দিনের মধ্যেই ৫০০০ চিকিৎসক নিয়োগ করা হবে। চিকিৎসকদের কর্মস্থলে উপস্থিত থাকাটা জরুরি। কর্মস্থলে উপস্থিত না থাকলে দুর্নাম হয়। বাংলাদেশের চিকিৎসাসেবাকে এমন জায়গায় নিয়ে যেতে হবে যাতে করে রোগীরা আর দেশের বাইরে না যায়, বরং বিদেশ থেকে রোগীরা বাংলাদেশে চিকিৎসা সেবা নিতে আসতে উদ্ধুদ্ধ হয়। তিনি তাঁর বক্তব্যে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য চিকিৎসক সমাজের প্রতি আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মোঃ মুরাদ হাসান এমপি বলেন, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, যথাযথ সম্মান প্রদর্শন ও কাজের মধ্য দিয়ে সবকিছু অর্জন করতে হয়। তিনি তাঁর বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়কে সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসেবার প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. আ. ফ. ম. রুহুল হক এমপি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়কে সর্বশ্রেষ্ঠ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী তাঁর বক্তব্যে বর্তমান সরকারের স্বাস্থ্যখাতের অর্জনসমূহ তুলে ধরেন।
আলোচনা সভায় অতিথিবৃন্দ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়কে সত্যিকার অর্থেই “সেন্টার অফ এক্সিলেন্স” হিসেবে গড়ে তুলতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম যাতে বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ে সেদিকে আরো গুরুত্ব দিতে হবে। সেবার ব্রতর মানসিকতা নিয়ে রোগীদের সেবা দিতে হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হবে দেশের চিকিৎসাসেবার তীর্থস্থান।
সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে হবে এটাই হোক বিশ্ববিদ্যালয় দিবস ২০১৯-এর অঙ্গীকার। শ্রদ্ধাভরে যেকোনো সমালোচনা গ্রহণ করে সঠিক ভাবে পরিচালনার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হবে।