রাজধানীর বনানী বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে কিংবদন্তি অভিনেতা নায়করাজ রাজ্জাকের দাফন সম্পন্ন হয়েছে । নায়কের মেজ ছেলে রওশন হোসেন বাপ্পি না পৌছানোয় গতকাল দাফন স্থগিত করা হয়েছিল। গতকাল এফডিসি ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে নায়করাজের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে গুলশানের আজাদ মসজিদে। সেখানে বাদ যোহর জানাজা সম্পন্ন হয়। এরপর আসরের পর বনানী বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হবে জানানো হয়েছিল।
নায়কের মেজ ছেলে রওশন হোসেন বাপ্পি কানাডা থেকে দেশে পৌছানোর কথা ছিল, তবে বাপ্পি না পৌছতে পারায় বিকালে দাফন স্থগিত করা হয়। আজ বুধবার সকাল ১০টায় তার দাফন সম্পন্ন হবে বলেও জানানো হয়েছিল।
সোমবার হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পরে রাজ্জাককে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেয়ার পরে সেখানে সন্ধ্যা ৬টা ১৩ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মঙ্গলবার সকাল ১১টার পর এফডিসিতে জানাজা শেষে নায়করাজের মরদেহ নেয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে সড়ক পরিবহন ও সেতু-মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, শাকিব খান, জয়া আহসান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সদস্যরা, অভিনয় শিল্পী সংঘ ও চলচ্চিত্র পরিবারের সদস্যরা শেষ শ্রদ্ধা জানান।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের এই কিংবদন্তি অভিনেতা দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগসহ শারীরিক নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। নায়করাজ রাজ্জাক বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে স্থাপন করেছেন অনেক মাইলফলক। ‘অনন্ত প্রেম’ ছবি দিয়ে সূচনা করেন রোমান্টিকতার এক নতুন যুগের। ‘রংবাজ’ ছবি দিয়ে শুরু করেন অ্যাকশন ঘরানার ছবি। এর আগে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ‘ওরা ১১ জন’ ছবিটি ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়ে প্রথম ছবি। স্বাধীনতার আগে ভাষা আন্দোলন নিয়ে তার অভিনীত ছবি ‘জীবন থেকে নেয়া’।
ময়নামতি, অশিক্ষিত, অভিযান, নীল আকাশের নিচে, অবুঝ মন, বেঈমানসহ বহু জনপ্রিয় ছবির এই অভিনেতা তার অভিনয় প্রতিভায় ঠায় করে নিয়েছেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্রপ্রেমীদের মনে।
১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের টালিগঞ্জে জন্ম নায়করাজ রাজ্জাকের। তার পারিবারিক নাম আবদুর রাজ্জাক। ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে পাড়ি জমান তিনি। প্রথম দিকে রাজ্জাক তৎকালীন পাকিস্তান টেলিভিশনে ‘ঘরোয়া’ নামের ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করে দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় হন। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে তিনি আব্দুল জব্বার খানের সাথে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান।
সালাউদ্দিন প্রোডাকশন্সের ‘তেরো নম্বর ফেকু ওস্তাগর লেন’ চলচ্চিত্রে ছোট একটি চরিত্রে অভিনয় করে সবার কাছে নিজ মেধার পরিচয় দেন রাজ্জাক। পরবর্তীতে ‘কার বউ’, ‘ডাক বাবু’, ‘আখেরী স্টেশন’-সহ বেশ কটি ছবিতে ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয়ও করে ফেলেন। পরে ‘বেহুলা’ চলচ্চিত্রে তিনি নায়ক হিসেবে ঢালিউডে উপস্থিত হন সদর্পে। এরপর আর তাকে পেছনের ফিরে তাকাতে হয়নি। একে এক জনপ্রিয় সব ছবি উপহার দিতে থাকেন দর্শককে।