মাটির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সেচের ব্যয় পর্যায়ক্রমে কমিয়ে আনতে খরাপ্রবণ বরেন্দ্রাঞ্চলে উদ্ভাবিত বিভিন্ন ধরনের সাশ্রয়ী প্রযুক্তি উন্নীত করা হচ্ছে।
গত রবি মৌসুমে তানোর, গোদাগাড়ি ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় চাষিরা কম পানি সেচের প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে। গোদাগাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ এলাকার চাষি ইফতেখার আহমেদ মুন্না গত কয়েক বছর ধরে আট বিঘা জমিতে চাষাবাদ করে আসছে। সে তার জমিতে প্রতি সপ্তাহে ৫০ থেকে ৬০ লিটার ডিজেল কিনত। অতিরিক্ত সেচ ব্যয় কমাতে ইন্টিগ্রেটেড ওয়াটার রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট (আইডব্লিউআরএমব) প্রকল্পের মাধ্যমে তার পেয়ারা বাগানে সেচের জন্য সোলার প্যানেলের মাধ্যমে সেচ পাম্প প্রযুক্তি স্থাপন করেছে। এখন সেচের খরচ নেই। কিন্তু এর আগে প্রতিমাসে তার সেচ খরচ বাবদ ১৩ হাজার টাকা লাগত। আইডব্লিউআরএম প্রকল্প থেকে এটি স্থাপনে ৮০ শতাংশ এবং অবশিষ্ট ২০ শতাংশ অর্থাৎ সাড়ে ৫ লাখ টাকা নিজ থেকে দিয়েছে। শুধু মুন্নার বাগানে নয়, আরো চারটি ড্রিপ ইউনিটের মাধ্যমে ৪০ বিঘা জমিতেও এর মাধ্যমে সেচ দেয়া হচ্ছে।
প্রকল্পটির সহকারী প্রকল্প সমন্বয়ক জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, সুইস রেডক্রস এবং ডিএএসসিওএইচ যৌথভাবে আইডব্লিউআরএম প্রকল্পটির মাধ্যমে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ৩৫ টি ইউনিয়ন, চারটি পৌরসভায় ২০১৫ সাল থেকে বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটির অর্থায়ন করছে সুইস এজিন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট এন্ড কে-অপারেশন।
মাঠ পর্যায়ে খরা সহনশীল ফসলের জাত ও পানি সংরক্ষণের প্রযুক্তি উন্নিত করার লক্ষ্যে গত বছর নভেম্বরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনিস্টিটিউট (বারি) এবং আইডব্লিউআরএম এর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।
বারির বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় ড্রিপ পদ্ধতিতে সেচে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ কম পানি খরচ হয়। সৌর শক্তির মাধ্যমে চালিত পাম্প বছরে ২ হাজার বিঘারও বেশি ফসলি জমিতে সেচ সুবিধা দিতে পারে।
এই পদ্ধতির মাধ্যমে সারের ব্যবহার ৪৫ শতাংশ সার ব্যবহার কমিয়ে আনতে পারে। এছাড়া এই পদ্ধতিটি জ্বালানী সাশ্রয়ী হওয়ায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অতএব, বরেন্দ্রাঞ্চলে এই পদ্ধতি সম্প্রসারণ করার এখন সময় এসেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনি বিভাগের অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানী দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কার্বন দূষণ করে, যার ফলে দূষিত করে পরিবেশ।
তবে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন একটি নতুন ধারণা, যা রিনিউয়েবল যোগ্য, কম উৎপাদন খরচ এবং কার্বন মুক্ত। সার্বিকভাবে পর্যায়ক্রমে বিদ্যুতের ওপর চাপ কমিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে সৌর বিদ্যুৎ ব্যবস্থা একটি উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে।
তিনি বলেন, সৌর সেচ ব্যবস্থা সফল হলে ফসল উৎপাদনে সেচের জন্য চাষিদের বিদ্যুতের ওপর নির্ভর করতে হবে না।