বিপর্যয়ের পর কীভাবে অসহায় আত্মসমপর্ণ করতে হয় তাই যেন দেখাল বাংলাদেশ । অথচ বিপর্যয়ের পর বুক চিতিয়ে লড়াই করে কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হয়, আফগানিস্তান তা ভালোভাবে করে দেখাল। তাইতো জয়টা তাদের প্রাপ্য।
১৬৫ রানের লক্ষ্য তাড়ায় বাংলাদেশের রান চার উইকেটে ৫৯। শেষ ১০ ওভারে আফগানিস্তান পেল ১০৪, বাংলাদেশ ৮০। ২৫ রানের পরাজয়ে স্পষ্ট দুই দলের শ্রেষ্ঠত্ব।
টস জিতে আফগানিস্তানের ব্যাটিং নেওয়ার সিদ্ধান্তকে যথার্থ প্রমাণ করতে পারেননি টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা। প্রথম ১০ ওভারে আফগানিস্তানের রান ৬০। ৪০ রান তুলতেই তাদের চার ব্যাটসম্যান সাজঘরে। বাংলাদেশ আফগানিস্তানের ইনিংসের প্রথম অর্ধ পর্যন্ত ম্যাচ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল।
সাইফউদ্দিন প্রথমে বলে উইকেট উপড়ে ফেলেন রহমানউল্লাহ গুরবাজের। সাকিব দ্বিতীয় ওভারে তুলে নেন হজরতউল্লাহ জাজাইয়ের উইকেট। তৃতীয় ওভারে সাইফউদ্দিনের দ্বিতীয় শিকার নজিব তারাকাই। তিন ওভারে তিন উইকেট হারিয়ে শুরুতেই চাপে আফগানরা। পাওয়ার প্লে’র শেষ ওভারে সাকিব বিপজ্জনক নজিবুল্লাহ জাদরানের উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেন।
দ্রুত চার উইকেট হারিয়ে আফগানিস্তান পিছিয়ে পড়লেও তাদের টেনে তোলার দায়িত্ব নেন দুই সিনিয়র ক্রিকেটার মোহাম্দ নবী ও আসগর আফগান।
শুরুর বিপর্যয় সামলে শেষ ১০ ওভারে আফগানিস্তান পেল ১০৪ রান। পুরোটা কৃতিত্ব নবীর। ডানহাতি ব্যাটসম্যানের বিস্ফোরক ইনিংসে এলোমেলো বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণ। ডেথ ওভারে বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণের দুর্বল চিত্র আরো একবার ফুটে উঠল। মাত্র ৫৪ বলে তিন চার ও সাত ছক্কায় ৮৪ রান করেন ম্যাচসেরা নির্বাচিত হওয়া নবী।
লক্ষ্য তাড়ায় বাংলাদেশের চমক ছিল মুশফিককে ওপেনিংয়ে পাঠানো। স্পিনার মুজিবকে সামলানোর জন্য প্রথমবারের মতো ইনিংসের শুরুতে মুশফিক। কিন্তু অপরপ্রান্তে লিটন উইকেট বিলিয়ে আসেন দ্বিতীয় বলে। মুশফিকও অবশ্য বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ফরিদ মালিককে দারুণ কভার ড্রাইভে চার মারার পরের বলে স্কুপ করতে গিয়ে বোল্ড হন পাঁচ রানে।
সাকিবের জন্য জাল বিছিয়েছিলেন রশিদ খান। অফস্পিনে আক্রমণের বিরুদ্ধে বারবার শাফল করে মিড উইকেটে খেলতে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। সেখানেই সাকিব ক্যাচ দিয়ে আটকে গেলেন। বাজে এক শটে ক্যাচ দেন রশিদ খানের হাতে। সৌম্য ক্যারিয়ারের তৃতীয় গোল্ডেন ডাক ও সপ্তম ডাকের তিক্ত স্বাদ নিয়ে ফেরেন মুজিবের বলে।
৩৪ রানে চার উইকেট হারানোর পর মাহমুদউল্লাহ ও সাব্বির জুটি বেঁধেছিলেন। কিন্তু তাদের ৫৮ রানের জুটিতে রানের চাকা সচল রাখে শুধু। ২২ গজে যে আগ্রাসন, যে লড়াই দেখানোর কথা ছিল তা করতে পারেননি দুজনের কেউ। ফলে লাফিয়ে লাফিয়ের বলের সঙ্গে রানের ব্যবধান বাড়তে থাকে। সেই ব্যবধান পরবর্তীতে কমাতে পারেননি কেউ।
মাহমুদউল্লাহ ৩৯ বলে পাঁচ চারে সর্বোচ্চ ৪৪ রান করেন। সাব্বিরের ব্যাট থেকে আসে ২৭ বলে ২৪ রান। আগের দিনের নায়ক আফিফ হোসেন ১৬ রানের বেশি করতে পারেননি। শেষ দিকে মুস্তাফিজ সাত বলে দুই চার ও এক ছক্কায় ১৫ রান তুলে দর্শকদের বিনোদন দেন। মাত্র ১৫ রান দিয়ে চার উইকেট নেন মুজিব। তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে আফগানিস্তান আরও একবার বাংলাদেশকে বিরাট লজ্জা দিল।