জাপান আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা (জাইকা) বাংলাদেশে তাদের উন্নয়ন সহযোগিতা অব্যাহত রাখার বিষয়টি পুনরায় আশ্বস্ত করে বলেছে, জাইকা কখনও বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা বন্ধ করবে না।
জাইকার সভাপতি ড. শিনিচি কিতাওকা গতকাল সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং জাপানের মধ্যে অত্যন্ত সুসম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে এবং জাইকা কখনোই ঢাকার সঙ্গে সহযোগিতা বন্ধ করবে না।’
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের ব্রিফকালে জাইকার সভাপতিকে উদ্ধৃত করে এ কথা বলেন।
ড. শিনিচি কিতাওকা বৈঠকে গতবছর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারীতে সন্ত্রাসী হামলার পর বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত সন্ত্রাস ও জঙ্গি বিরোধী পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ‘হলি আর্টিজান বেকারীতে জঙ্গি হামলার পর আপনার সন্ত্রাস ও জঙ্গি বিরোধী কার্যক্রমে আমরা খুবই সন্তুষ্ট।’
জাইকা সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ নির্মূলে সকল শ্রেণী পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে সামাজিক ব্যাধি নির্মূলে সরকারের ভূমিকা প্রশংসনীয়।
তিনি বলেন, জনগণের দৃষ্টিশক্তি উপেক্ষা করা সহজ নয় এবং আপনার এ পদক্ষেপটি যথার্থ হয়েছে।
জাইকা সভাপতি এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নেরও ভূয়সী প্রশংসা করেন।
তিনি বলেন, আপনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন দেখে আমি অভিভূত… আপনি অনেক বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে আজকের এ অবস্থানে এসেছেন এবং আমরাও বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে পেরে খুবই আনন্দিত।
জাইকা সভাপতি বাংলাদেশের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনের প্রশংসা করে বলেন, আমরা বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন এবং শিক্ষা খাতে সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক। তিনি বলেন, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার মুসলিমরা জাপানের সঙ্গে দীর্ঘদিন অত্যন্ত সুনামের সাথে কাজ করে আসছে এবং তারা কোথাও কোনো বিঘ্নের সৃষ্টি করছে না।
প্রধানমন্ত্রী গত বছর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারীতে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ৭ জাপানী নাগরিকের পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সহানুভূতি প্রকাশ করেন।
সন্ত্রাসবাদকে বৈশ্বিক সমস্যা আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য সকল ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাস ও জঙ্গিবিরোধী প্রচারের অংশ হিসেবে দেশের সকল বিভাগের সকল শ্রেণি পেশার নাগরিকদের সঙ্গে সরাসরি ভিডিও কনফারেন্স করে তাদের মধ্যে এই সমাজিক ব্যাধি বিরোধী সচেতনতা সৃষ্টিতেও তাঁর সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের এই প্রচারের ফলে দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে।
এই সামাজিক ক্ষত দু’টি সারাতে এর অর্থের উৎস এবং অস্ত্রের জোগান বন্ধের ওপরও প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বারোপ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের কোন দেশ নেই, কোন ধর্ম নেই, একজন সন্ত্রাসীর পরিচয় সে কেবলই একজন সন্ত্রাসী।’
দেশের সকল নাগরিকের নিরাপত্তা বিধানে তাঁর সরকার সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় থাকার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ধর্ম যার যার হলেও উৎসব সবার। এদেশে সকল ধর্ম মতের মানুষ নানা ধর্মীয় উৎসব এক সঙ্গে পালন করে থাকে।
১৯৭৩ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জাপান সফরের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, জাপানের জন্য তাঁর হৃদয়ে সবসময়ই একটি বিশেষ স্থান রয়েছে।
তাঁর সরকারের গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকারের একমাত্র লক্ষ্যই সমাজের হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর ভাগ্যের পরিবর্তন এবং তাদের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার মত মৌলিক চাহিদাগুলোর সংস্থান করা।
পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট জাইকা প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন জাইকা প্রেসিডেন্ট ড. শিনিচি কিতাওকা। বাংলাদেশে জাইকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ এবং গুলশানে সন্ত্রাসী হামলার পর সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যালোচনায় দলটি তিন দিনের সফরে বুধবার বাংলাদেশে এসেছে।