ডিএমপি নিউজ: বাংলাদেশের অন্যতম উঁচু পর্বত শৃঙ্গের চূড়া থেকে নেমে যে গ্রামটি দেখা যায় তার নাম পাসিং পাড়া। বান্দরবানের রুমা উপজেলায় অবস্থিত কেওক্রাডং পাহাড়েরর চূড়া থেকে পশ্চিম দিকে কয়েক ফুট নিচে নেমে দক্ষিন দিকে যে পথ গেছে, সেই পথ ধরে কয়েক মিনিট হেটে গেলেই চোখে পড়বে এই গ্রামটি। গ্রামটি বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু গ্রাম বলে পরিচিত। গ্রামটির প্রবেশ দ্বার কাঠ-বাঁশ ও বেড়া দিয়ে আটকানো। প্রবেশের জন্য বানানো আছে একটি ফটক।
এই গ্রামটিতে এখন আর পর্যটকরা যেতে পারে না, এখানে বাহিরাগতদের প্রবেশ নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে। যদিও এক সময় এখানে অনেকেই আসতেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আদেশে নিরাপত্তাজনিত কারণে এখন সেখানে সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষেধ।
৩ হাজার ৬৫ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই গ্রামটি। আমাদের দেশে এতো উঁচুতে আর কোন গ্রাম নেই। তাই পাসিং পাড়াকেই দেশের সবচেয়ে উঁচু গ্রাম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গ্রামটির কারবারি বা পাড়া প্রধান পাসিং ম্রোর নাম অনুসারে এই গ্রামের নাম পাসিং পাড়া হয়েছে। এই গ্রামে বাস করে ৫০ থেকে ৬০টি পরিবার। গ্রামের সবাই ম্রো সম্প্রদায়ের মানুষ।
আগে এই গ্রামে পর্যটকরা বেড়াতে আসতে পারলেও এখন আর সেই সুযোগ নাই। গ্রামে পর্যটকদের প্রবেশ অনুমতি নেই। পর্যটকদের নিরাপত্তার অভাবের কথা বলেই এই গ্রামে প্রবেশ নিষেধ করা হয়েছে। তাই গত কয়েক বছর যাবৎ পর্যটকদের কেওক্রাডংয়ের চূড়ায় এসে থেমে যেতে হয়। মাত্র একশো ফুট নিচেই ছবির মতো সুন্দর এই গ্রামে তারা আর যেতে পারেন না।
এই গ্রামের মানুষ খুবই সহজ-সরল এবং পরিশ্রমী। তারা জীবিকার জন্য মূলত জুম চাষের উপর নির্ভরশীল। কেউ কেউ শিকারও করেন। মেনদ্রো ম্রো, ৭০ বছর বয়সী এই বৃদ্ধ এই গ্রামের প্রবীণদের একজন। তিনি এক সময় বিজিবিতে কর্মরত ছিলেন। ম্রো জাতির জন্য ক্রামা ধর্মের প্রবর্তন করেছিলেন মেনলে ম্রো। মাত্র ৩৫ বছর আগে এই জনপদে ক্রামা নামে নতুন একটি ধর্মের আর্বিভাব হয় ম্রো বর্ণমালাসহ! ম্রো সম্প্রদায়ের অনেক মানুষই এই ধর্মের অনুসারী। পাসিং পাড়ার ৩ ভাগের দুই ভাগ মানুষই ক্রামা ধর্মের অনুসারী। বাকিদের ভেতর অর্ধেক খ্রিস্টান এবং অর্ধেক বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী। মেনদ্রো গ্রামের ক্রামা ধর্মের ধর্মগুরু। ছোট একটি প্রার্থনালয়ও আছে তাদের।
ম্রো সমাজে জুম চাষ শেষ হলে যখন কাজ থাকে না তখন গ্রামের বৃদ্ধরা গল্প শোনায় শিশু-কিশোর-তরুণদের। এই গল্প শুধু রূপকথাই না, এই গল্পে গল্পে মূলত সামাজিক শিক্ষা দিয়ে থাকেন। ম্রো সমাজের অনেক রীতিনীতি সংস্কৃতি উঠে আসে এইসব গল্পে। গ্রামের এই গল্প কথক বৃদ্ধদের অনেকটা সামাজিক শিক্ষক বলা যায়। মেনদ্রো ম্রো তেমনই একজন। যদিও এখন আগের চেয়ে কমে গেছে এসব গল্প বলার প্রচলন।
সুন্দর ছিমছাম গোছানো পরিচ্ছন্ন একটি গ্রাম! এখানে বারো মাসই মেঘ ঘুরে বেড়ায়। উঠানে শিশুরা খেলে সাথে খেলে মেঘও, মেঘের সাথে রয়েছে তাদের নিত্যদিনের বন্ধুত্ব। মেঘ এই পাড়ার অতিথি না, সহবাসিন্দা। প্রতিবেশী। এক সাথেই থাকেন তারা! চারিদিকে সবুজ পাহাড় আর পাহাড়। ওই সব পাহাড়ে আছে নানা রকম বন্য প্রাণী। গ্রামের কেউ কেউ গোদা বন্দুক নিয়ে মাঝে মাঝেই শিকারে যায়। মুহূর্তে মুহূর্তে দৃশ্যের জন্ম হয় এখানে।