বাংলাদেশে নারীদের অর্থনৈতিকভাবে ক্ষমতায়নে অবকাঠামো প্রকল্পের বিপুল সম্ভাবনা আছে। নারীদের অর্থনৈতিকভাবে ক্ষমতায়নে লিঙ্গ বৈষম্য হ্রাসে সরকারের প্রয়াসকে আরো গতিশীল করার ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে বলে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) স্বাধীন মূল্যায়ন বিভাগ লিঙ্গ সহায়তা ও দেশের উন্নয়ন বিষয়ক এক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে এই অভিমত তুলে ধরেছে। সংবাদ সংস্থা বাসস থেকে পাওয়া তথ্য।
সোমবার রাজধানীর একটি পাঁচতারকা হোটেলে এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এডিবির স্বাধীন মূল্যায়ন বিভাগের মহাপরিচালক মারভিন টেইলর-ডরমন্ড এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমা বেগম বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর কাজুহিগো হিগোচি,মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্তি সচিব মাহমুদা শারমিন বেনু,বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো আনোয়ারা বেগম, অর্থমন্ত্রণালয়ের যুগ্ন সচিব রামেন্দ্র নাথ বিশ্বাস ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের প্রকল্প পরিচালক আন্না মিনজি। এতে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন এডিবির স্বাধীন মূল্যায়ন বিভাগের মূখ্য মূল্যায়ন বিশেষজ্ঞ হিঅন এইচ. সন।
মূল্যায়ন প্রতিবেদনের ওপর আলোকপাত করে মারভিন টেইলর-ডরমন্ড বলেন,‘বাংলাদেশে অবকাঠামোগত স্থাপনা কার্যক্রমে নারীদের সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ অব্যশই দিতে হবে। দেশে বিদ্যমান উচ্চ পর্যায়ের লিঙ্গ বৈষম্য হ্রাসে অবকাঠামো প্রকল্পের সিদ্ধান্ত গ্রহন ও বাস্তবায়নসহ সব ধাপগুলোতে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরী।’
২০০৫ থেকে ২০১৫ সাল এই এক দশকে এডিবি বাংলাদেশকে ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের যে প্রকল্প সহায়তা প্রদান করেছে,এর মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলার ছিল অবকাঠামো খাতে। এই সময়ের ওপর ভিত্তি করে মূল্যায়ন প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করেছে এডিবি।
প্রতিবেদনে বলা হয়,দীর্ঘ এক দশকের মূল্যায়নে দেখা গেছে-শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবায় লিঙ্গ সমতার যথেষ্ট উন্নতি হলেও জীবন-যাপনের সুযোগ প্রাপ্তি এবং অর্থনৈতিক সম্পদ মালিকানার ক্ষেত্রে নারীরা এখনও বৈষম্যর শিকার হচ্ছেন। গ্রামীণ অঞ্চলের মাত্র ৮ শতাংশ নারীর কার্যকর আর্থিক সম্পদের মালিকানা রয়েছে।
এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর কাজুহিগো হিগোচি বলেন,লিঙ্গ বৈষম্য হ্রাসে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবার পাশাপাশি নারীদের অর্থনৈতিকভাবে ক্ষমতায়ন করা জরুরী।এজন্য তিনি অবকাঠামো প্রকল্পে নারীদের অংশগ্রহণ আরো বাড়ানোর পরামর্শ দেন।
অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমা বেগম বলেন,দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৫০ শতাংশ নারী।এই নারীদের উন্নয়ন ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়,সরকার এই উপলব্ধি থেকে নারীদের অর্থনৈতিক কার্ষক্রমে অধিকহারে সম্পৃক্তকরণের প্রয়াস গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন,এজন্য ২৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এর আওতায় শিক্ষাকতা যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মমূখী প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। পাশাপাশি নগদ অর্থ সহায়তা দিয়ে তাদেরকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে।
নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে সরকার বিভিন্ন ধরনের সচেতনতামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে বলে তিনি জানান।
হিঅন এইচ. সন প্রতিবেদন উপস্থাপন করে বলেন,প্রাকৃতিক দূর্যোগে বাংলাদেশে নারীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অর্থনৈতিকভাবে তাদেরকে ক্ষমতায়ন করতে পারলে দূর্যোগের অভিঘাত মোকাবেলা করার সক্ষমতা তৈরি হবে। এক্ষেত্রে অবকাঠামো প্রকল্পে নারীদের অংশগ্রহণ বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।