সাম্প্রতিক সৌদি আরব সফর নিয়ে আজ বিকেলে গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর সাম্প্রতিক সৌদি আরব সফরকে অত্যন্ত সফল আখ্যায়িত করে বলেছেন, ‘আমার এ সফর দু’দেশের সম্পর্ক বৃদ্ধি বিশেষতঃ বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষায় সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। এই সফরের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশে সৌদি বিনিয়োগের নবধারা সূচিত হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সৌদি আরবে ইতোপূর্বে উচ্চপর্যায়ের সফরগুলোতে সেদেশের শ্রমবাজারে বাংলাদেশীদের নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়টি প্রাধান্য পেত। কিন্তু, এবারের সফরে গতানুগতিক ধারার বাইরে অভিন্ন অর্থনৈতিক স্বার্থরক্ষায় কার্যকর অংশিদারিত্ব প্রতিষ্ঠা, মুসলিম বিশ্বে স্থিতিশীলতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতামূলক তৎপরতা বৃদ্ধি, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা খাতে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গঠনমূলক আলোচনা হয়।’
এ সফরকালে সৌদি আরবের বাদশাহ তাঁর সকল সফরসঙ্গীদের রাজকীয় আতিথেয়তা প্রদান করেন বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
সফর সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় রিয়াদে পৌঁছলে দু’দেশের জাতীয় পতাকা শোভিত মোটর শোভাযাত্রা সহযোগে অতিথিদের কিং সৌদ গেস্ট প্যালেসে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৭ অক্টোরব দুপুরে তিনি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজের সঙ্গে রিয়াদের আরগায় রাজপ্রাসাদে ঘণ্টাব্যাপী দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। বৈঠকে সৌদি আরবের পক্ষে অন্যান্যের মধ্যে রিয়াদের গভর্নর, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বাদশাহ’র পরামর্শক সভার প্রতিমন্ত্রী, রয়াল কোর্টের উপদেষ্টা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, ‘দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের শুরুতেই বাদশাহ আমাকে স্বাগত জানান। তিনি সৌদি আরবকে আমার দ্বিতীয় বাড়ি হিসেবে উল্লেখ করে বলেন এখানে আপনি সব সময়ের জন্য স্বাগত। বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের সম্পর্কের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অভূতপূর্ব গতি সঞ্চারিত হওয়ায় বাদশাহ সন্তোষ প্রকাশ করেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সৌদি বাদশাহ আগামী দিনগুলোতে এ সম্পর্ক আরও সম্প্রসারণে দ্বিপাক্ষিক যোগাযোগ ও সহযোগিতার ধারা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন। বিশেষতঃ বাণিজ্য, বিনিয়োগ, সংস্কৃৃতি, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তাখাতে দু’দেশের সহযোগিতার সুযোগগুলো আরও কাজে লাগানোর উপর তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন।
সরকার প্রধান বলেন, বাদশাহ বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন। এক পর্যায়ে তিনি বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা ও দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা রক্ষায় আগামীতে আমাদের সরকারের ধারাবাহিকতার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি এ সময় সৌদি আরবের বাদশাহকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানালে তিনি তা সাদরে গ্রহণ করেন এবং নিকট ভবিষ্যতে বাংলাদেশ সফরের আগ্রহ ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঐদিন সন্ধ্যায় তিনি সৌদি আরবের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বিন আব্দুল আজিজের সঙ্গে বৈঠক করেন। অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে সেই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বাংলাদেশের উন্নয়নে বিশেষতঃ খাদ্য নিরাপত্তা, আবাসন, শিক্ষা, দারিদ্র্য দূরীকরণের ক্ষেত্রে আমার সরকারের গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগের বিষয় তুলে ধরি। যুবরাজ বাংলাদেশের উন্নয়নের অংশীদার হওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি বাংলাদেশে আরও অধিক পরিমাণে সৌদি বিনিয়োগের আহ্বান জানাই। এ পর্যায়ে সৌদি যুবরাজ বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিষয়ে গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং এ লক্ষ্যে তিনি আগামী দু’মাসের মধ্যে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে পাঠাবেন বলে জানান।’
তিনি বলেন, সৌদি আরবের সীমান্ত এলাকায় মাইন-অপসারণ, প্রশিক্ষণ ও সামরিক এলাকায় নির্মাণ কাজে সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশের আগ্রহের কথা তাঁকে অবহিত করলে তিনি এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানান। সৌদি যুবরাজকে প্রধানমন্ত্রী এসময় বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানালে তিনি তা গ্রহণ করেন এবং দু’দেশের সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, এরআগে সকালে তিনি রিয়াদে ব্যবসায়ীদের এক সভায় অংশগ্রহণ করেন। কাউন্সিল অব সৌদি চেম্বারস এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। সভায় সৌদি আরব এবং বাংলাদেশের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। সভায় দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির উপায় ও কৌশল নিয়ে মত বিনিময় হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সৌদি ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশে অধিক হারে বিনিয়োগে গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেন। এ সভা শেষে বাংলাদেশে সৌদি বিনিয়োগে সিমেন্ট কারখানা, ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট করখানা, ‘সৌদি-বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ প্রতিষ্ঠা, সৌর বিদ্যুৎ ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম উৎপাদন কারখানা স্থাপন ইত্যাদি বিষয়ে মোট ৫টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী সৌদি বাদশাহ এবং সৌদি আরবে অবস্থিত দুই পবিত্র মসজিদের জিম্মাদার সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল-সৌদ-এর আমন্ত্রণে ১৬ থেকে ১৯ অক্টোবর সৌদি আরবে ৪ দিনের সরকারি সফর করেন।
সফরে সৌদি বাদশাহ এবং ক্রাউন প্রিন্সের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকসহ প্রধানমন্ত্রী মদীনা শরীফে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর পবিত্র রওজা মোবারক জিয়ারাত করেন এবং সফরসঙ্গীগণ মক্কা শরীফে পবিত্র ওমরাহ পালন করেন। বাসস।