অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সূচকে ৯ ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বের ১৮৬ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৮তম এবং এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে ২৮তম। এ বছরের সূচকে বাংলাদেশ প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানকে অতিক্রম করে ৫৫ পয়েন্ট অর্জন করেছে, যা গত বছরের চেয়ে ১.৭ পয়েন্ট বেশি। ২০১৬ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৩৭তম। বৈশ্বিক এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যৌথভাবে আমেরিকান থিংক ট্যাঙ্ক হেরিটেজ ফাউন্ডেশন এবং ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি দেশের উন্নয়ন তখনই সম্ভব যখন অর্থনৈতিক স্বাধীনতা তৈরি হয় এবং ব্যক্তি সুযোগ বাড়ে। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা হচ্ছে ব্যবসায়িক পরিবেশের চেয়ে বেশি কিছু। অর্থাৎ এমন পরিবেশ নিশ্চিত করা যেখানে উদ্যোক্তারা মুক্তভাবে তাদের কর্মকাণ্ড করতে পারবে এবং দেশের অগ্রগতি ত্বরান্বিত হবে। অর্থনৈতিক স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে মানুষের ক্ষমতায়ন হবে এবং সর্বশ্রেণির মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে।
অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সূচক তৈরিতে আইনের শাসন, সরকারি আয়-ব্যয়ের পরিমাণ, নিয়ন্ত্রণগত দক্ষতা এবং মুক্তবাজার এ চারটি বিষয়কে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এদের প্রত্যেকটিকে আবার তিনটি সূচকে মূল্যায়ন করে মোট ১২টি মাপকাঠির মাধ্যমে একটি দেশের অবস্থান ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ১২টি মাপকাঠির মধ্যে আইনের শাসনের অধীনে রয়েছে সম্পদের অধিকার, বিচারিক কার্যকারিতা ও সরকারের শুদ্ধতা। সরকারি আয়-ব্যয়ের মধ্যে রয়েছে করের বোঝা, সরকারি ব্যয় ও রাজস্ব অবস্থা। নিয়ন্ত্রণগত দক্ষতার মধ্যে রয়েছে ব্যবসায়িক স্বাধীনতা, শ্রমিক অধিকার ও মুদ্রানীতির স্বাধীনতা। মুক্ত বাজারের মধ্যে রয়েছে বাণিজ্যিক সুযোগ, বিনিয়োগ সুযোগ এবং আর্থিক সুযোগ।
এ ১২টি সূচকের মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে রাজস্ব সক্ষমতায়। এতে বাংলাদেশের প্রাপ্ত স্কোর ৯৭.৪ পয়েন্ট। আর সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে বিচারিক কার্যকারিতায়। এতে বাংলাদেশ পেয়েছে মাত্র ৩৩ পয়েন্ট।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। ভারতের অবস্থান ১৪৩তম, পাকিস্তান ১৪১তম। তবে পিছিয়ে রয়েছে ১১২তম হওয়া শ্রীলঙ্কা, ১১২তম হওয়া ভুটান ও ১২৫তম হওয়া নেপালের চেয়ে।
প্রতিবেদনে অর্থনৈতিক অগ্রগতির পেছনে প্রবৃদ্ধিকে মূল কারণ হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। আর উন্নয়ন ব্যাহত হওয়ার পেছনে ‘আইনের শাসন’-এর অভাবকেই কারণ বলছে। বলা হয়, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও এ উন্নতির নেপথ্যে রয়েছে গত এক দশকের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দুর্দান্ত গতি, যা দারিদ্র্য মুক্তিতে বড় ভূমিকা রেখেছে। বিপরীতে আইনের শাসনের নাজুক অবস্থার কারণে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ব্যাহত হয়েছে।
অর্থনৈতিক স্বাধীনতার দিক থেকে বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে হংকং। দেশটির প্রাপ্ত স্কোর ৮৯.৮ পয়েন্ট। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সিঙ্গাপুর। এ দেশটির প্রাপ্ত স্কোর ৮৮.৬ পয়েন্ট। শীর্ষ দশে থাকা বাকি দেশগুলো হচ্ছে যথাক্রমে নিউজিল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, এস্তোনিয়া, কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, আয়ারল্যান্ড এবং চিলি। এ সূচকে ১৭তম অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ১১১তম অবস্থানে রয়েছে চীন।
সূত্র-কালেরকন্ঠ