বাল্যবিবাহ বা শিশুবিবাহ বলতে ঐ বিবাহকে বোঝানো হয়, যেখানে বর ও কনে উভয়ে বা যে কোনো একজন শিশু। বর-কনে দুজনেরই বা একজনের বয়স বিয়ের জন্য আইন দ্বারা নির্ধারিত বয়সের কম হলে তা আইনের চোখে বাল্যবিবাহ বলে চিহ্নিত হবে। সদ্যপ্রণীত বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ অনুসারে বাল্যবিবাহ বলতে ১৮ বছরের কম বয়সের কোন মেয়ের সাথে ২১ বছরের কম বয়সি কোন ছেলের বিয়েকে বোঝানো হয়েছে।
বাল্যবিবাহ যে সমাজের জন্য একটা বিষফোঁড়া এবং অভিশাপও তার বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়ার অপেক্ষা রাখে না। সমাজকে এই অভিশাপ মুক্ত করার জন্য শুধু নারীদের সচেতন হলেই চলবে না। সমাজের সকলকে সচেতন হতে হবে ।
সমাজের অধিকাংশ মানুষই আমরা পারিবারিক শিক্ষা বলতে কেবল ধর্মীয় অনুশাসনকে বুঝে থাকি। অথচ জীবন বাস্তবতা, নানামুখী অভিজ্ঞতা, দাম্পত্য জীবনের সম্ভাব্য সমস্যা আর সমাধানমূলক শিক্ষাও যে পারিবারিক শিক্ষার মধ্যে পড়ে তা আমরা অনেকেই মানতে রাজি নই। যার নেতিবাচক প্রভাব হতে পারে মারাত্মক! আমাদের সমাজে এক সময় নামাজ আর আরবিতে কোরআন শিক্ষা ছাড়া কন্যা সন্তানকে ধর্মীয় শিক্ষা খুব একটা দেয়া হতো না বলেলেই চলে। যথাযথ ভাবে বাংলা অর্থসহ কোরআন শিক্ষা এবং সহীহ হাদিস চর্চা করানো হলে সেখানে গোঁড়ামী, অসচেতনা, বিশৃঙ্খলতার জায়গা কমে আসবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।
তবে সন্তানকে এসব শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি পিতামাতা বা পরিবারের অন্যান্য সদস্যকেও তা অর্জন করতে হবে। অন্যথায় বিশৃঙ্খলতা ও গোঁড়ামীর অবসান ঘটবে না। দ্বন্দ্ব ও সংঘাত লেগেই থাকবে। মূলত জ্ঞানচর্চা ব্যতীত চিন্ত-চেতনা, মেধা ও মননের প্রসারতা অসম্ভব এবং সেই জ্ঞান কেবল ধর্মীয় জ্ঞানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেই চলবে না। প্রতিটি মানুষকে অর্জন করতে হবে বিশ্বসাহিত্যের পাঠ, নিতে হবে জীবনমুখী শিক্ষা।
বাবা-মা’র অসচেতনতামূলক দায়-দায়িত্ব থেকে মুক্ত হওয়ার বাসনা এই বাল্যবিবাহে ধ্বংস হয় একটি মন, একটি পরিবার, একটি সমাজ, সর্বোপরি একটি রাষ্ট্র। আর বর্তমান পৃথিবী হারাচ্ছে আগামীর পৃথিবীকে, এবং দেশ হারাচ্ছে উন্নয়নশীল দেশ গড়ার হাতিয়ারগুলো। এক কথায় বলা যায় বাল্যবিবাহে নষ্ট হচ্ছে দেশের সুন্দর একটা ভবিষ্যৎ।
এ ছাড়াও তারা যখন প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে উঠবে, তখন সম্পর্কের প্রতি তাদের ভেতর একটা ভয় ও নেতিবাচক ধারণা কাজ করতে পারে, যা তাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথে বাঁধা প্রদান করতে পারে, মানসিক শান্তি বিনষ্ট করতে পারে, জীবনের প্রতি তিক্ততারও জন্ম দিতে পারে।
অনেক সময় তারা আত্মহত্যার মতো জঘন্য ও অযৌক্তিক সিদ্ধান্তও নিতে পারে। মূলত পিতামাতা সন্তানের জন্য এমন একটি ভরসা, স্নেহ, মায়া মমতা, ভালোবাসা ও আদর্শের জায়গা যার বিকল্প আজও পৃথিবীতে আবিষ্কৃত হয়নি, কোনদিন হবে বলেও মনে হয় না।