এক ইসরায়েলি সৈন্যকে চড় ও লাথি মারার দায়ে আট মাস কারাভোগের পর মুক্তি পেয়ে বাড়ি ফিরেছেন ফিলিস্তিনি তরুণী আহেদ তামিমি। ওই ঘটনার পর আহেদ ও তার মা নারিম্যান তামিমিকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। কিন্তু ঘটনাটির ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ার পর আহেদের বিচার ও শাস্তির বিষয়টি বিশ্বব্যাপী আলোচিত হতে থাকে। আট মাসের কারাভোগের সময় ১৭ বছর বয়সী আহেদ পরিণত হন ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনের নতুন প্রতীকে।
বিবিসির নিদা ইব্রাহিম জানান, এই মুহূর্তটির জন্যেই অপেক্ষায় ছিলেন আহেদ তামিমির পরিবার। তাকে স্বাগত জানানোর জন্য জেলের বাইরে জনতার ভিড় জমে যায়। পরিচিতজনরা তাকে পেয়ে জড়িয়ে ধরেন ও শুভেচ্ছা জানান। অনেকে ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ আন্দোলনের পক্ষে শ্লোগান দিচ্ছিলেন।
এ সময় সমবেত জনতার উদ্দেশে ছোট একটি বক্তৃতাও দেন আহেদ তামিমি। তিনি বলেন, আজ যারা এখানে সমবেত হয়েছেন, তাদের সবাইকে আমি ধন্যবাদ দিচ্ছি। আমি আশা করি সবাই সংবাদ সম্মেলনে আসবেন। যেখানে আমি আমার বার্তা তুলে ধরবো। কারাগারের অন্য যারা নারী বন্দী আছেন, আমি তাদের বার্তাও তুলে ধরবো। তারা চেয়েছেন, আমি যেন তাদের হয়ে কথা বলি।
গত বছরের ডিসেম্বর মাসে আহেদের বাড়ির বাইরেই ঘটেছিল ইসরায়েলি সৈন্যকে চড় মারার সেই ঘটনা। ওই ঘটনার ঘন্টাখানেক আগে ইসরায়েলি সৈন্যরা আহেদ তামিমির ১৫ বছর বয়সী এক কাজিনের মাথায় রাবার বুলেট ছোড়ে।
ঘটনার পর ইসরায়েলিরা আহেদ ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে প্রচারণা চালানোর অভিযোগ আনে। এ বিষয়ে আহেদ তামিমির বাবা ফিলিস্তিনি আন্দোলনকারী বাসেম তামিমি বলেছেন, প্রতিরোধ করাই তো স্বাভাবিক। প্রতিরোধ না করাটাই বরং অস্বাভাবিক। আপনি যদি দখলদারির বিরুদ্ধে চুপ করে থাকেন, তাহলে আপনার মনে অপরাধবোধ তৈরি হতে বাধ্য। আমরা আমাদের মর্যাদা আর অধিকারের জন্য যুদ্ধ করছি।
তিনি কি এখন চাইবেন যে তার মেয়ে যেন ঘরের মধ্যে নিরাপদে থাকে- এমন প্রশ্নের জবাবে বাসেম তামিমি বলেন, এখানে ঘর কি নিরাপদ? আমার তো মনে হয় না। ফিলিস্তিনে নিরাপদ জায়গা কোথায় আমি জানি না।
আহেদ তামিমিদের গ্রাম নাবি সালেহতে দীর্ঘদিন ধরেই ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি সংঘাত চলছে। এখানে ফিলিস্তিনিদের জমির ওপর তৈরি করা হয়েছে একটি ইসরায়েলি বসতি। এর বিরুদ্ধে এখানকার ফিলিস্তিনি বাসিন্দারা প্রতি সপ্তাহেই বিক্ষোভ করছেন।
বিবিসির সংবাদদাতা নিদা ইব্রাহিম বলছেন, আহেদ ও তার মা জেলে থাকার সময় বাসেম তামিমি তার বাড়িটির কিছু অংশ পুনর্রির্মাণ করেছেন তাদের মুক্তির প্রস্তুতি হিসেবে। আহেদ ফিরে এসেছেন নতুন বাড়িতে এক নতুন বাস্তবতায়। এখন তিনি ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনের এক নতুন প্রতীক।