দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সেবা প্রাপ্তি সহজ করতে ‘ওয়ান-স্টপ সার্ভিস’ চালু করতে যাচ্ছে সরকার। এতে একই ছাদের নিচে ১৬ ধরনের সেবা পাবেন দেশে-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। এজন্য ‘ওয়ান-স্টপ সার্ভিস আইন, ২০১৭’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে রবিবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এই খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এ অনুমোদনের কথা জানিয়ে বলেন, ‘দেশে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগগুলোকে উৎসাহিত করার জন্য দেশি-বিদেশি বিনিয়োগগুলোকে ফ্যাসিলেটেড করার জন্য এই আইনটা আনা হয়েছে। আগের ওয়ান-স্টপ সার্ভিস কার্যকরী হয়নি। কারণ ওটার আইনি কাঠামো ছিল না। এখন আইনের ফ্রেমওয়ার্কে চলে আসবে। কেউ যদি ফেল করে তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা যাবে।’
‘গ্লোবালি ডুয়িং বিজনেস’ ক্যাটাগরিতে ১৮৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৬তম উল্লেখ করে শফিউল আলম বলেন, ‘সরকারের পলিসি হল আগামী ৫ বছরের মধ্যে (এই র্যাঙ্ক) একশ’র নিচে, অন্তত ৯৯ এ নিয়ে আসা। সেটা করতে গেলে বিনিয়োগ পরিবেশ ভালো করতে হবে, বিনিয়োগবান্ধব করতে হবে, তার জন্য একটা শর্ত ছিল যে ওয়ান-স্টপ সার্ভিস আইনটা প্রবর্তন করা।’
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নতুন এই খসড়া আইনটি উত্থাপন করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এটা ছোট্ট প্যাকেজ আইন। এটাতে মূলত ওয়ান-স্টপ সার্ভিসটা কীভাবে পরিচালিত হবে সেটার একটা আইডিয়া দেওয়া হয়েছে। এই আইন অনুযায়ী বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ, রফতানি প্রক্রিয়াকরণ কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ কেন্দ্রীয় ওয়ান স্টপ সার্ভিস কর্র্তৃপক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে’ ।
এই কর্তৃপক্ষ সাধারণভাবে ১৬ ধরনের সেবা দেবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ট্রেড লাইসেন্স, জমি রেজিস্ট্রেশন, নামজারি, পরিবেশ ছাড়পত্র, নির্মাণ অনুমোদন, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সংযোগ, টেলিফোন-ইন্টারনেট সংযোগ, বিস্ফোরক লাইসেন্স, বয়লার সার্টিফিকেটসহ ২৭টি ক্যাটাগরিতে কমনলি (সাধারণভাবে) ১৬টি সেবা দেওয়া হবে। এগুলো যেন এক জায়গায় বসে পেতে পারে সেজন্য এই আইনটি করা হচ্ছে।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘জয়েন্ট স্টক কোম্পানি দেবে নাম ছাড়পত্র, নিবাসী-অনিবাসী ভিসা দেবে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘোষণা দেবে বেজা বা হাইটেক পার্ক। আর অর্থনৈতিক রফতানি প্রক্রিয়া এলাকা দেবে বেপজা। ওয়ার্ক পারমিট দেবে বেজা, বেপজা বা হাইটেক পার্ক। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান যেমন সিটি করপোরেশন, পৌরসভা দেবে ট্রেড লাইসেন্স।’
ভূমি অধিগ্রহণ ভূমি মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসন করবে জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, ‘ভূমি ক্রয় ও লিজ রেজিস্ট্রেশন করবে রেজিস্ট্রেশন বিভাগ, নামজারী ভূমি অফিস, পরিবেশগত ছাড়পত্র পরিবেশ অধিদফতর, নির্মাণ অনুমতি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন বিদ্যু কর্তৃপক্ষ। বিদ্যুৎ সংযোগ বিদ্যুৎ বিভাগ, গ্যাস সংযোগ দেবে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।’
এছাড়া ওয়াসা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা দেবে পানি সংযোগ এবং টেলিফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ দেবে বিটিসিএল। আর অগ্নিনিরোধ সংক্রান্ত সেবা দেবে ফায়ার সার্ভিস। ওয়ান-স্টপ সার্ভিসে এ দফতরগুলোর লোকজন থাকবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের কোন সেবা কত দিনের মধ্যে দিতে হবে তা বিধি দিয়ে নির্ধারণ করা হবে। বিধি না মানলে আইন ও বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিদেশিদের জন্য ভিসা ও ইমিগ্রেশন সুবিধা প্রক্রিয়া সহজ করতে কিছু সুবিধা রাখা হয়েছে বলেও জানান সচিব।