বিলুপ্ত প্রজাতির হলদে পা হরিয়াল পাখির সন্ধান পাওয়া গেছে। সম্প্রতি মেহেরপুরের মুজিবনগরে প্রায় বিলুপ্তির পথে যাওয়া এ পাখি দেখা গেছে। এখন এ পাখি পাওয়া যায়না। পাখি গবেষকরা সম্প্রতি এ পাখির সন্ধান পান। শীতকালে পাখির খোঁজে মুজিবনগর উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম দারিয়াপুরের মেঠো পথের ধারে একটি বটগাছ থেকে কয়েকদিন আগে সকালে এ পাখি দেখতে পান। আসলে এসব পাখি উপযুক্ত বসবাসের জায়গা না পাওয়ায় আজ হুমকীর সম্মুখীন।
পরিবেশ নিয়ে কাজ করে একটি বেসরকারী সংগঠন সুবাহ সামাজিক উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তারা বলেন হলদে-পা হরিয়াল পাখি আগে গ্রাম অঞ্চলে বড় বড় বট গাছ ও বিভিন্ন ফলদ বৃক্ষে দল বেঁধে পাকা ফল খেতে দেখেছি। অনেক অবিবেচক শিকারীকে বন্দুক দিয়ে মারতেও দেখেছি। অনেক বছর হলো এই সুন্দর প্রকৃতির পাখিগুলি আমাদের চোখের আড়াল হয়ে গেছে। এর কারণ হিসাবে তিনি বলেন তাদের নিরাপদে বাসযোগ্য গাছ কেটে ফেলা।
পাখি নিয়ে কাজ করেন এমন বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলেন আমাদের দেশে অনুক’ল পরিবেশ না থাকায় হলদে পা হরিয়াল পাখি প্রকৃতি থেকে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। মানুষ প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে বট পাকুড় সহ অন্যান্য গাছ কেটে ফেলার কারণে তাদের নিরাপদ আবাস স্থল ধ্বংশ হয়ে যাচ্ছে। গাছ সংরক্ষণ ও গণসচেতনতা গড়ে তুলতে পারলে এই বিলুপ্ত প্রজাতির পাখি সংরক্ষণ সম্ভব হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
হলদে-পা হরিয়াল আমাদের দেশের আবাসিক পাখি । এই পাখি বাংলাদেশের গ্রাম অঞ্চলে হরিকল বা বটকল আঞ্চলিক নামে পরিচিত। হলদে-পা হরিয়ালের দেহ কোমল কলাপাতা-সবুজ রঙের। এরা বৃক্ষচারী পাখি। অধিক মাত্রায় এরা গাছ পালার উপর নির্ভরশীল। তবে প্রাকৃতিক ফলদ গাছ ধ্বংশ হওয়ার কারণে এরা খুব সংকটের মধ্যে আছে। হলদে-পা হরিয়ালের দৈর্ঘ ৩২-৩৪ সেন্টিমিটার, হলদে সবুজ দেহ। হালকা সাদাটে লম্বা ঠোঁট। লেজ ও ডানার প্রান্তে কালো ও সাদা আছে। মাথা ছায় রঙের। গলাবুক ও চঞ্চুতে হলুদ রং আছে। লেজের তলে আছে কালো আঁইশের দাগ। স্ত্রীপাখি পুরুষ পাখির চেয়ে অনুজ্জ্বল।
পা দেখতে হলুদ বলেই ইংরেজিতে এর নামকরণ করা হয়েছে ইয়েলো ফুটেড গ্রীণ পিজিওন। বৈজ্ঞানিক নাম হলো ট্রেরোনফোয়েনিকোপটেরা এবং গ্রোত্রের নাম হলো কলাম্বিদি। এরা ফলের কাঁদিতে ঝুলে ঝুলে ফল খায়। বট পাকুড় নাকুড় খেজুর ও ডুমুর গাছের ফল ওদেও প্রিয় খাবার। এরা ভোরে ও বিকেলে বেশি চঞ্চল থাকে। মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত এই সময়টা ওদেও প্রজনন কাল। এরা বাসা বাঁধে গাছের উঁচু ডালে ঘন পাতার আড়ালে। ডিম পাড়ে ২টি। এই সময় ওদের মধুর সুরে ডাকতে শোনা যায়। এরা বনেরপাখি। বাংলাদেশের বিভিন্ন গ্রাম অঞ্চলের বনে এদের দেখা খুব কম মেলে। বাংলাদেশ ভারত নেপাল শ্রীলংকা থাইল্যান্ড ভিয়েতনাম সহ দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় পাখিটির বিস্তৃতি রয়েছে।