ওয়েলথ এক্স সবচেয়ে বেশি ধনী বসবাসের যে ২০ শহরের তালিকা করেছে তার শীর্ষ ১০ এ রয়েছে নিউইয়র্ক, হংকং, সানফ্রান্সিসকো, মস্কো, লন্ডন, বেইজিং, সিঙ্গাপুর, দুবাই, মুম্বাই, শেনজেন।
জরিপে আরো দেখা গেছে, বিশ্বের যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বিলিওনিয়ার বসবাস করেন, সেরকম শীর্ষস্থানীয় ১০টি দেশের অর্ধেকই উন্নয়নশীল দেশের শহর। আর এসব দেশেই সামাজিক বৈষম্য সবচেয়ে বেশি। রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, শত কোটিপতির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে এই বিশ্বে সম্পদের পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে। জরিপের রেকর্ডে দেখা যায় ২০১৭ সালে সারা বিশ্বে যারা ১০০ কোটি ডলার বা তারচেয়েও বেশি পরিমাণ অর্থের মালিক, তাদের সংখ্যা ২,৭৫৪ জন।
তাদের মোট সম্পদের পরিমাণ ৯ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন যা কীনা যৌথভাবে জার্মানি ও জাপানের মোট জাতীয় উৎপাদন বা জিডিপির চেয়েও বেশি।
শত কোটিপতির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে সমাজে তার কী ধরনের প্রভাব পড়ছে সেটা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য রয়েছে। একটি পক্ষ জোর দিচ্ছে এর ফলে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের আয়ের বৈষম্য বেড়ে যাওয়ার নৈতিকতার দিকটির ওপর।
বিশ্বব্যাংকের অর্থনীতিবিদ ক্যারোলিন ফ্রয়েন্ড ২০১৬ সালে একটি বই লিখেছেন ‘ধনী ব্যক্তি: গরিব দেশ’ নামে।
বিবিসিকে তিনি বলেছেন: ‘সব ধনী ব্যক্তিকে একই চোখে দেখলে হবে না। একটা প্রবণতা আছে যে বিত্তশালীরা সম্পদের অপব্যবহার করে থাকেন। নানাভাবেই সম্পদ গড়ে তোলা যায়। আর সেই সম্পদ কী ধরনের তার ওপরেও নির্ভর করে সমাজে তার কী প্রভাব পড়তে পারে।’
তিনি আরো বলেন, যেসব বিলিওনিয়ার নিজের চেষ্টায় ধনী হয়েছেন, যারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন, তাদের কাছ থেকে অন্যরা লাভবান হয়ে থাকেন। কিন্তু যারা রাষ্ট্রীয় সম্পত্তির ব্যক্তি মালিকানার মাধ্যমে ধনী হয়েছেন তাদের মাধ্যমে সমাজে খুব একটা উপকার আসে না।
যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা সংক্রান্ত ম্যাগাজিন ফোর্বস বলছে, এই শত কোটিপতিরা এখন বিশ্বের ৭২টি দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন। চীন, ভারত এবং হংকং-এ তাদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হারে বাড়ছে।
এশিয়ার বিলিওনিয়ার ক্লাবে সদস্য সংখ্যা ৭৮৪। উত্তর অ্যামেরিকায় ৭২৭। এই প্রথম এশিয়ায় শত কোটিপতির সংখ্যা উত্তর আমেরিকার শত কোটিপতির সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে।
আফ্রিকাতে বিলিওনিয়ারের সংখ্যা বর্তমানে ৪৪। তাদের মোট সম্পদের পরিমাণ ৯,৩০০ কোটি ডলার। বলা হচ্ছে, এসব ধনী ব্যক্তি যদি নিজেরা একটি দেশ গঠন করেন তাহলে তাদের দেশের জিডিপি হবে আফ্রিকার ৫৪টি দেশের তালিকার আট নম্বরে। তাদের মাথাপিছু আয় ‘মাত্র’ ২১১ কোটি ডলার। কিন্তু আফ্রিকায় সাধারণ মানুষের মাথাপিছু আয় ২০১৭ সালে ছিল ১,৮২৫ ডলার।
ভারতেও বিত্তশালীদের সংখ্যা দ্রুত গতিতে বেড়েছে। নব্বই- এর দশকের মাঝামাঝি ফোর্বসে ধনীদের তালিকায় মাত্র দুজন ছিলেন ভারতীয়। কিন্তু ২০১৬ সালে এই তাদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৪ জনে। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের হিসেবে ভারতে ২৮ কোটিরও বেশি মানুষ বাস করে দারিদ্রসীমার নিচে।
অর্থনীতিবিদ ফ্রয়েন্ড বলছেন, ‘যেসব দেশের খুব বেশি সম্পদ নেই সেসব দেশে বিত্তশালী ব্যক্তির সংখ্যা বৃদ্ধি, যারা কঠোর পরিশ্রম করে অল্প অর্থ উপার্জন করেন, তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু দরিদ্র দেশে ধনী মানুষ ও ধনী কোম্পানির সংখ্যা বাড়লে সেটা ভালো অর্থনীতির ইঙ্গিত দেয়। উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে জীবন-মানও উন্নত হয়।’
ফ্রয়েন্ড দেখিয়েছেন চীনের নির্মাণ শিল্পে বড় বড় কোম্পানি গড়ে ওঠার কারণে শ্রমিকদের গড় মজুরি ২০০৯ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে তিনগুণ বেড়েছে। এসব কোম্পানিতে কাজ করছে প্রচুর মানুষ।
সূত্র: বিবিসি বাংলা