প্যারিস, ভেনিস, সুইজারল্যান্ডে তো সবাই যায়। কিন্তু পৃথিবীতে এমন অনেক জায়গা আছে যেগুলো জনসাধারণের চোখে এখনও সেভাবে পড়েনি। কেউ বা না চায় প্রিয় মানুষটিকে একটু চমকে দিতে? তাই আপনার যদি পর্যাপ্ত সময় এবং অর্থ থাকে একটু অন্যরকম কিছু করার, বা এমন কোনো জায়গায় যাওয়ার যেখানে কেউ খুব বেশি যায়নি; তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য। চলুন জেনে আসা যাক, বিশ্বের অদেখা কিছু রোমান্টিক জায়গা।
১. বো ব্রীজ, সেন্ট্রাল পার্ক, নিউ ইয়র্ক সিটি:
এম্পায়ার স্টেট অব বিল্ডিংয়ের সেই টিপিক্যাল ম্যারেজ স্পটের কথা ভুলে যান। কেননা একই স্পটের সামনে দাঁড়িয়ে ঐ একঘেঁয়ে পোজে দম্পতির ছবি তোলা বড্ড সেকেলে হয়ে গেছে। তাই নতুন কিছু করতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন সেন্ট্রাল পার্কের মাঝে অবস্থিত বো ব্রীজে।
২. রুফ টপ অব টেরাস হোটেল, প্যারিস:
প্যারিসে দর্শনীয় স্থানের অভাব নেই। পুরো শহরই যেন রোমান্স দিয়ে ভরপুর। কিন্তু আপনি যদি আপনার সঙ্গীকে চমকে দিতে চান তাহলে সোজা মনমার্টে, টেরাস হোটেলের ছাদে চলে যান। সেখানে দেখতে পাবেন গোটা প্যারিস শহরের অভূতপূর্ব দৃশ্য। সেই সাথে পেয়ে যাবেন একদম সাশ্রয়ী মূল্যের সুস্বাদু খাবারও। চুটিয়ে প্রেম করার উপযুক্ত জায়গায়ই বটে!
লন্ডন কিন্তু বেশ বড় শহর, প্যারিসের চেয়ে ১০ গুণ বড়! সুসজ্জিত দালানকোঠা, দর্শনীয় স্থান, পার্ক, শপিং মল কী নেই এখানে? কোনটা রেখে কোনটায় যাবেন ভাবা মুশকিল। হয়তো প্রিয়তমাকে নিয়ে পুরো লন্ডন ঘুরে দেখার সময়ও আপনার নেই। চাইলেই কিন্তু আপনারা একদিনেই দেখে আসতে পারবেন পুরো লন্ডন। সেজন্য আপনাকে যেতে হবে লন্ডন শহরের সবচেয়ে উঁচু বিল্ডিং ‘দ্য শার্ড’ এ। ডেটিংয়ের জন্য সবচেয়ে সুন্দর স্থান দ্যা শার্ডের ছাদ। প্রায় নির্জন এই জায়গায় সঙ্গিনী নিয়ে উপভোগ করুন রাতের লন্ডন।
৪. ক্লিফস অব মোহের, আয়ারল্যান্ড:
আয়ারল্যান্ডের দক্ষিণ প্রান্তে আছে ক্লিফস অব মোহের, যা সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৮ কি.মি. উঁচুতে অবস্থিত। এটি আয়ারল্যান্ডের সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা। কেননা এরকম দৃশ্য পৃথিবীর আর কোথাও আপনার চোখে পড়বে না। সমুদ্রের এই বিশালতার সামনে দাঁড়িয়ে আপনার প্রিয়তমার হাত সারাজীবন ধরে রাখার প্রতিজ্ঞা করুন। সেও আপনার হাত আর কখনোই ছাড়বে না!
৫. দ্য পাপ অব গ্লেনকো, স্কটল্যান্ড:
কোনটা বেশি কঠিন? আমি তোমাকে ভালোবাসি এটা বলা? নাকি পাহাড়ে চড়া? যদি দুটোই করতে চান তাহলে আপনাকে উঠতে হবে গ্লেনকোর চূড়ায়। এটি তর্কাতীতভাবে স্কটল্যান্ডের তো বটেই, সেই সাথে বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর উপত্যকাগুলোর একটি। ৫ ঘন্টা টানা ট্রাকিংয়ের পর পেছনে ছবির মতন সুন্দর গ্রাম রেখে প্রিয়তমাকে আপনি কতটা ভালোবাসেন তা বলার সুযোগ হাতছাড়া করবেন না কিন্তু!
৬. অরেঞ্জ ট্রি গার্ডেন, এভারটিন হিল, রোম, ইতালি:
রোমে কাউকে প্রপোজ করা মানে নিজের বিপদ ডেকে নিজেই ডেকে আনা। কেননা সঙ্গিনীর কাছ থেকে প্রেমের প্রস্তাবে ‘হ্যাঁ’ শোনার চেয়ে আপনাকে বেশি শুনতে হবে ‘ আমাকে ছবি তুলতে দাও তো!’ এত কষ্ট করে এত দূরে এসে নিশ্চয়ই এটি শুনতে চাইবেন না? তাই চলে যেতে পারেন এই বিখ্যাত কমলা বাগানে। পিকনিক স্পট এবং আংটি বদলের জন্য এর চাইতে ভাল জায়গা আর কোথাও পাবেন না।
৭. ইমেরোভিগলি, সান্তারিনি, গ্রীস:
সূর্যাস্তের সবচাইতে সুন্দর দৃশ্য দেখা যায় গ্রীসের সান্তারিনিতে। মাত্র ৪৭০টি বাড়ি রয়েছে এই জায়গায়। তাই সবসময়ই শান্ত-শীতল পরিবেশ এখানে বিরাজ করে। সঙ্গীর সাথে একদম একান্তে কিছু সময় কাটানোর জন্য একদম সঠিক জায়গা হলো এই নীল গম্বুজের শহরটি।
৮. লেক অব লাভ, বুর্জেস:
লেকসাইড পিকনিকের জন্য উপযুক্ত জায়গা হলো এই ‘লেক অব লাভ’। কেননা এই লেকের চারপাশ চূড়ার মতন বিল্ডিং এবং সবুজ গাছপালা দিয়ে ঘেরা। এই লেকের নামকরণের পেছনে একটি ইতিহাস রয়েছে। লোকমুখে শোনা যায়, অনেক দিন আগে মীনা নামের স্থানীয় এক মেয়ে তার বিরোধী উপজাতি দলের এক ছেলেকে ভালোবাসত। কিন্তু এই বংশের বিরোধীতা তাদের এক হতে দেয়নি। তাই তার ভগ্ন হৃদয় নিয়ে মেয়েটি এই লেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করে। প্রচলিত আছে যে, যদি কেউ লেকটি ব্রীজ দিয়ে পার হয়ে ওপারে গিয়ে নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে চুম্বন করে আসে, তাহলে তারা সারাজীবন একসাথে থাকবে।
আইসল্যান্ডের নর্দান লাইটসের নিচের জায়গাটি হলো প্রেমের প্রস্তাব দেওয়ার সবচাইতে উপযুক্ত জায়গা। তবে এখানে আসার আগে সময়টা ঠিকঠাক করে নিতে হবে। এখানে আসার উপযুক্ত সময় হলো সেপ্টেম্বর থেকে এপ্রিল মাস। কেননা এই সময় আকাশ একদম মেঘমুক্ত থাকে। আর আকাশে মেঘ যত কম হবে, তত বেশি আলোর খেলা আকাশে দেখা যাবে। প্রিয়র হাত ধরে এই আলোর মায়া দেখার চেয়ে শান্তির আর কিছুই নেই!