মসজিদ শুধু ইবাদতই নয়, ইসলামি শাসনামলে মসজিদ থেকেই পরিচালিত হতো রাষ্ট্রের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড। ইসলামের বিস্তৃতির সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীতে নির্মিত হয়েছে বহু মসজিদ। বিশ্বের সেরা মসজিদগুলোর ইতিহাস ও নির্মাণশৈলী নিয়ে মানুষের মনে কৌতূহলের শেষ নেই। মসজিদ মুসলিমদের প্রধান উপসনালয় হলেও একেক দেশের একেক রকমের সংস্কৃতির ছাপ বিশ্বের একাধিক মসজিদের নির্মাণশৈলীতে ঠাঁই পেয়েছে। চলুন দেখে নিই বিশ্বের সেরা দশটি মসজিদ সম্পর্কে।
মসজিদ আল হারাম- কাবা শরীফ
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মসজিদ হলো মসজিদুল হারাম। ইসলাম ধর্মের সবচেয়ে পবিত্র স্থান ‘কাবা’কে ঘিরে সৌদি আরবের মক্কা নগরীরতে এর অবস্থান। ৮৮.২ একর জায়গার ওপর স্থাপিত মসজিদুল হারাম সৌদি আরবের মক্কায় অবস্থিত। বিশ্বের সর্ববৃহৎ মসজিদ হলো এই হারাম শরিফ। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ এই মসজিদটির সাধারণ প্রায় নয় লাখ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ পড়ে। তবে হজের সময় এর পরিমাণ বেড়ে ৩০ লাখে পৌঁছায়। ১৯৫৫ সালের পর সৌদি বাদশাহ আব্দুল আজিজ মসজিদটির ব্যাপক সংস্কারকাজে হাত দেন। তার পরে বাদশাহ ফাহাদ হারাম শরিফের বাহিরের দিকে সংস্কার করেন। কাজ এখনো চলছে যা ২০২০ সালে শেষ হওয়ার কথা।
মসজিদে নববি
হজরত মোহাম্মাদ (সা.) এর নিজ হাতে ৬২২ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত হয় মসজিদে নববি বা আল-মাসজিদুন-নাবি। অর্থাৎ নবির মসজিদ। এই মসজিদেই ছিল রাসুল (সা.) এর বাসস্থান। সৌদি আরবের মদিনা শহরে এই মসজিদটি অবস্থিত। মসজিদটিতে ছয় লাখ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারে। তবে মসজিদটি হজরত মোহাম্মাদ (স.)- এর রওজা সংলগ্ন হওয়ায় হজের সময় প্রায় ১০ লাখ মুসল্লি একত্রে নামাজ আদায় করার রেকর্ড রয়েছে। মসজিদের ১০টি মিনারের মধ্যে সবচেয়ে উঁচু মিনারটির উচ্চতা ১০৫ মিটার। এই মসজিদের এক অংশেই রয়েছে রাসুল (সা.) এর রওজা মোবারক। রয়েছে ইসলামের প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর (রা.) ও দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর (রা.) এর রওজা মোবারকও।
হারামে ইমাম রেজা
শিয়া সম্প্রদায়ের ১২ ইমামের অষ্টম ইমাম, ইমাম রেজা এই মসজিদটি নির্মাণ করেন বলে ‘হারামে ইমাম রেজা’ মসজিদটি ‘ইমাম রেজা মসজিদ’ নামেই সর্বাধিক পরিচিত। ইরানের খোরসান প্রদেশের রাজধানী মসনদে অবস্থিত এই মসজিদটি। প্রায় তিন লাখ ৩১ হাজার ৫৭৮ বর্গমিটার জমির ওপরে অবস্থিত এই মসজিদটিতে প্রায় পাঁচ লাখ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারে। ৮১৮ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত এই মসজিদটির আটটি মিনার রয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ মিনারের উচ্চতা ৪১ মিটার।
ইসতিকলাল মসজিদ
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বড় মসজিদ ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় অবস্থিত। মসজিদটির নাম ইসতিকলাল মসজিদ। এটি ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় মসজিদ। ১৯৭৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মসজিদটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। ১৯৪৯ সালে নেদারল্যান্ডস এর পরাধীনতা থেকে মুক্ত হয়ে তৎকালীন সরকার একটা জাতীয় মসজিদ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেন। ১৭ বছরের দীর্ঘ ব্যবধানে মসজিদটি নির্মিত হয়। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সুহার্তো মসজিদটি উদ্বোধন করেন। মসজিদ নির্মাণে ব্যয় হয় ১২ মিলিয়ন ইউএস ডলার। আর মসজিদটির ধারণক্ষমতা দুই লাখ।
ফয়সাল মসজিদ
পাকিস্তানের ইসলামাবাদে অবস্থিত ফয়সাল মসজিদ দেশটির সর্ববৃহৎ মসজিদ। মসজিদটি দেখতে অনেকটা মরুভূমির বেদুইনদের তাবুর মতো। হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত এই মসজিদটি পাকিস্তানের জাতীয় মসজিদ। ১৯৮৬ সালে সমাপ্ত হওয়া মসজিদটির নির্মাণ ব্যয় বহন করেন সৌদি বাদশাহ ফয়সাল। আর তার নাম অনুসারেই মসজিদটির নামকরণ হয় ফয়সাল মসজিদ। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত এটিই ছিল বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ মসজিদ। এটি নির্মাণে ব্যয় হয় ১২০ মিলিয়ন ইউএস ডলার। মসজিদটির ভেতরে ৫৪ হাজার স্কয়ার ফিট জায়গা রয়েছে আর ধারণক্ষমতা দুই লাখ। ৩০০ ফিট উচ্চতার চারটি সুন্দর মিনার মসজিদটির আকর্ষণ বাড়িয়েছে।
মসজিদুল হাসান–আল শানী
মসজিদুল হাসান-আল শানী স্থানীয়দের কাছে ক্যাসাবালাঙ্কা হাজ বা হাসান মসজিদ নামে পরিচিত। মরক্কোর সবচেয়ে বড় শহর ক্যাসাবালাঙ্কায় আটলান্টিক মহাসাগরের তীরে অবস্থিত মসজিদটি। অনেকটা মোঘল স্থাপত্যের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত এই মসজিদটির অবস্থান প্রায় ২১ হাজার বর্গমিটার জমির ওপরে। প্রায় ৪০ হাজার হাজার মুসল্লি একত্রে নামাজ আদায় করতে পারে এই মসজিদটিতে।
তাজুল মসজিদ
ভারতের সর্ববৃহৎ মসজিদ হলো তাজুল মজজিদ। মোঘল সম্রাট বাহদুর শাহ জাফর এর শাসনামলে নবাব শাহ জাহান বেগম কর্তৃক নির্মিত হয় তাজুল মসজিদ। কিন্তু তিনি পুরোপুরি নির্মাণ কাজ শেষ করে যেতে পারেননি। পরবর্তী সময়ে তার মেয়ে সুলতানা জাহান বেগম তার জীবদ্দশায় এর কাজ এগিয়ে নিয়ে যান। পুনরায় নির্মাণ কাজ ১৯৭১ সালে আল্লামা মুহাম্মাদ ইমরান খান নদভী আজহারি এবং মাওলানা সাইয়্যেদ হাসমত আলী সাহেব শুরু করেন। ১৯৮৫ সালে নির্মাণ শেষ হয়। মসজিদটির তিনটি গম্বুজ ও দুটি সুউচ্চ মিনার। মসজিদের ভেতর ও বাহিরে মিলে এক লাখ ৭৫ হাজার লোক একসাথে নামাজ পড়তে পারে।
বাদশাহী মসজিদ
মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। ১৬৭১-১৬৭৩ সালের মধ্যে পাকিস্তানের লাহোরে এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। সামনের বিশাল চত্বরসহ মসজিদটির আয়তন প্রায় দুই লাখ ৭৬ হাজার স্কয়ার ফিট। ১৯৬ ফিট উচ্চতার সুদৃশ্য আটটি মিনার রয়েছে। আর রয়েছে তিনটি গম্বুজ। সিঁড়ির ২২টি ধাপ পেরিয়ে মূল ফটকে পৌঁছাতে হয়। এই মসজিদের ধারণক্ষমতা এক লাখ।
শেখ জায়েদ গ্রান্ড মসজিদ
আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে অবস্থিত এই মসজিদটি বিশ্বের সেরা দশটি মসজিদের মধ্যে অন্যতম। মসজিদটি নির্মাণকাল ১৯৯৬ থেকে ২০০৭ সাল। এটি আরব আমিরাতের সবচেয়ে বড় মসজিদ। মসজিদটি ৩০ একর জমির উপর নির্মিত। বিভিন্ন সাইজের সাতটি গম্বুজ রয়েছে, যার উচ্চতা ২৭৯ ফিট। রয়েছে ৩৫১ ফিট উচ্চতার চারটি মিনার। মুসল্লি ধারণক্ষমতা ৪১ হাজার। তিন হাজারের বেশি শ্রমিক মিলে তৈরি করেছে এই বিখ্যাত মসজিদটি।
বায়তুল মোকাররম
মসজিদের শহর বলা হয় ঢাকাকে। বিশ্বের সেরা দশটি মসজিদের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম। ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই মসজিদটির নির্মাণ শেষ হয় ১৯৬৮ সালে। মসজিদের প্রবেশদ্বার রয়েছে বেশ কয়েকটি। বর্তমানে এই মসজিদে একসঙ্গে ৪০ হাজার লোক নামাজ পড়তে পারে।
এছাড়াও বিশ্বে অনেক সুন্দর ও চমৎকার দৃষ্টিনন্দনীয় মসজিদ রয়েছে।