বিশ্ব এইডস দিবস উপলক্ষে শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বি ব্লকের সামনে বটতলা থেকে “এইচআইভি পরীক্ষা করুন; নিজেকে জানুন” প্রতিপাদ্য নিয়ে একটি সচেতনতামূলক বর্ণাঢ্য র্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রধান অতিথি হিসেবে উক্ত র্যালির উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া।
র্যালি শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশে চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রথম ও প্রধান পোস্ট গ্রাজুয়েট বিশ্ববিদ্যালয়, যেখান থেকে বিভিন্ন বিভাগের মাধ্যমে রোগীদের কম্প্রিহেনসিভ স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা হয়। ১৯৮৯ সালে অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগে দেশের প্রথম এইচআইভি সনাক্ত করা হয় এবং তা অব্যাহত আছে। ২০১৩ সালের আগ পর্যন্ত সরকারী স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত গর্ভবতী মায়েদের যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল না।
বাংলাদেশে সরকারী পর্যায়ে প্রথমবারের মতো গত ১৬ মে ২০১৩ থেকে এইচআইভি আক্রান্ত গর্ভবতী মায়েদের সেবা প্রদান অবস্ এন্ড গাইনী বিভাগের মাধ্যমে এই বিশ্ববিদ্যালয় শুরু করেছে এবং এ সেবা অব্যাহতভাবে চলছে। এই সেবার অধীনে এই পর্যন্ত মোট ৫৮ জন গর্ভবতী মা সুস্থ সন্তান প্রসব করেছে। এতে ৫৮টি সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এইচআইভিতে আক্রান্ত সকল রোগীদের জন্য অত্র বিশ্ববিদ্যালয় তার সেবার পরিধি বৃদ্ধি করেছে, যা স্ট্রেনদেনিং অফ এইচআইভি সার্ভিসেস নামে গত বছরে শুরু হয়েছে। অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সেবামূলক কার্যক্রমটি জাতীয় এইডস এবং এসটিডি প্রোগ্রাম ও ইউনিসেফের সহযোগিতায় পরিচালিত হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, এইচআইভি পরীক্ষার লজ্জার কিছু নাই। “এইচআইভি পরীক্ষা করুন; নিজেকে জানুন” এবারের প্রতিপাদ্য অত্যন্ত যথার্থ। তবে সবক্ষেত্রেই প্রতিরোধের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। প্রতিরোধের জন্য জনসচেতনতা সৃষ্টিতে গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। এইচআইভি সনাক্ত হলে সমন্বিত চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর গুরুত্ব দিতে হবে।
উপাচার্য আরো বলেন, বাংলাদেশে অবস্থানরত মায়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মাঝে এইআইভি/এইডস বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।
অন্য বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বিনামূল্যে এআরভি প্রদান ও সকল রোগের যথাযথ চিকিৎসা সেবার পথ উন্মুক্ত হয়েছে। অত্র বিশ্ববিদ্যালয় হতে সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী এআরভি নিচ্ছেন। গত ২৫ শে নভেম্বর পর্যন্ত মোট ১০৪৬ জন রোগী এআরভি নিয়েছেন। তাদের সকল পরীক্ষা ও চিকিৎস সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে এবং এই সেবাও অব্যাহত থাকবে।
অনুষ্ঠানে উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মোঃ শহীদুল্লাহ সিকদার, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. সাহানা আখতার রহমান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলম, শিশু অনুষদের ডীন অধ্যাপক ডা. চৌধুরী ইয়াকুব জামাল, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল হান্নান, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোজাফফর আহমেদ, পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ আব্দুল্লাহ আল হারুন, বিশ্ব এইডস দিবস উদযাপন কমিটি ২০১৮-এর সভাপতি, অবস এন্ড গাইনী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সালেহা বেগম চৌধুরী, অতিরিক্ত পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. নামজুল করিম মানিক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। র্যালিটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অংশ প্রদক্ষিণ করে সি বøকের সামনে গিয়ে শেষ হয়।