লবণ ছাড়া খাবারের স্বাদ আসে না। তবে বেশি লবণ খাওয়া অনেক ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যার মধ্যে ফেলে। তাই খাবারে কম লবণ ব্যবহারের পরামর্শই দেন বিশেষজ্ঞরা। এক চামচ লবণে থাকে দুই হাজার মিলিগ্রাম সোডিয়াম। বলা হয়, একজন ব্যক্তির প্রতিদিন দুই হাজার ৩০০ মিলিগ্রামের নিচে লবণ খাওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া প্রক্রিয়াজাত খাবার, প্যাকেটজাত খাবার, ফাস্টফুডেও অনেক লবণ ব্যবহার করা হয়। এই খাবারগুলো এড়িয়ে যাওয়াই ভালো বলে মতামত গবেষকদের।
অতিরিক্ত লবণ খাওয়া শরীরের স্বল্পমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে। এটি রক্তচাপ বাড়ানো, হাড়কে দুর্বল করে দেওয়া ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করে।
বেশি লবণ খেলে শরীরের কী ক্ষতি হয় সে কথা।
১. উচ্চ রক্তচাপ:
উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের অতিরিক্ত লবণ খেতে নিষেধ করা হয়। কারণ এটি রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে। উচ্চ রক্তচাপের কারণে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, কিডনি ফেইলুরের মতো সমস্যা হতে পারে।
২. হাড় দুর্বল করে:
বেশি মাত্রায় লবণ খেলে হাড়ের ক্যালসিয়াম প্রস্রাবের মাধ্যমে বেরিয়ে যায়। এতে হাড় দুর্বল এবং ভঙ্গুর হয়ে যায়। বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদি মাসিক বন্ধের পর, যখন নারীদের হাড়ের ক্যালসিয়াম কমে যায়, তখন বেশি লবণ খাওয়া পরিহার করা প্রয়োজন। এ ছাড়া অতিরিক্ত লবণ খাওয়া কিডনিতে পাথর তৈরি করতে পারে।
৩. হৃদরোগের ঝুঁকি:
সোডিয়াম শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় একটি উপদান। তবে অতিরিক্ত সোডিয়াম সঙ্গে আনে বিভিন্ন ক্ষতিকর প্রভাব, যেমন- হৃদরোগ।
হৃদযন্ত্রের রক্তনালীতে ব্লক, হৃদযন্ত্রের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়া, স্ট্রোক ইত্যাদি রোগের আশঙ্কা দ্বিগুণ করে দেয় অতিরিক্ত লবণ। ধূমপায়ী, বৃদ্ধ, ডায়বেটিসে আক্রান্ত রোগী এবং উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তিদের হৃদরোগ বেশি হয়। তাই এসব সমস্যা থাকলে লবণ খাওয়ার প্রতি সতর্ক থাকতে হবে।
৪. স্ট্রোকের সম্ভাবনা:
বেশি লবণ গ্রহণ করা মানেই শরীরে অতিরিক্ত সোডিয়াম। যা থেকে হতে পারে উচ্চ রক্তচাপ। আর সেখান থেকে স্ট্রোক। তাই লবণ খাওয়া কমিয়ে শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা ঠিক রেখে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমানো যায়।
৫. বুদ্ধিমত্তা কমে যাওয়া:
রক্তচাপ বাড়লে মস্তিষ্কেও সমস্যা দেখা দিতে পারে। যারা বেশি লবণ খায় এবং অধিকাংশ সময় বসে সময় পার করেন তাদের বুদ্ধিমত্তা হ্রাস পায় ক্রমেই। তাই অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার খাওয়া কমাতে হবে এবং প্রতিদিন কমপক্ষে এক ঘণ্টা ব্যায়াম করতে হবে।
৬. বৃক্কজনীত সমস্যা:
রক্ত থেকে বর্জ্যপদার্থ দূর করতে বৃক্ক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। বৃক্কে সমস্যা হলে রক্তে তরল্যের ভারসাম্য নষ্ট হয়। আর রক্তচাপ বাড়লে রক্তনালীতে চাপ পড়ে। ফলে বৃক্ক নষ্টও হয়ে যেতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের বৃক্কে সমস্যা আছে, তারা লবণ খাওয়া কমালে বৃক্কের উন্নতি ঘটে। অর্থাৎ লবণ খাওয়া কমালে বৃক্ক ভালো থাকে।
৭. শরীর ফোলা:
অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার কারণে দেহে সোডিয়ামের পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে শরীর বেশি পানি শোষণ করে এবং ফুলে ওঠে। তাই লবণ খাওয়া কমাতে হবে।