ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে এক সময় যেখানে ছিল অথৈয় পানি, সেই ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে ও উপজেলার চরাঞ্চলে এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় অধিক জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে। উপজেলায় গত তিন সপ্তাহ ধরে বাদাম মাড়াইয়ের ধুম পড়েছে। বাম্পার ফলনের পাশাপাশি বাজার দর অত্যান্ত ভাল থাকায় কৃষকদের চোখে মুখে দেখা গেছে আন্দনের ঝিলিক। উপজেলার চরআলগী ইউনিয়নের চরমছলন্দ, বালুয়াকান্দা, জয়ারচর, চরকামারিয়া, নিধিয়ারচর, বগামারারচর ও পাঁচবাগ ইউনিয়নের খুরশিদমহল, গাভীশিমুল, নামকাইল, দিঘীরপাড়, চরশাঁখচূড়া, দুগাছিয়া ও দত্তেরবাজার এবং টাঙ্গাব অঞ্চলে প্রচুর বাদাম চাষ হয়।
বেলে মাটি বাদাম চাষের জন্য খুবই উপযোগী। তাই চরাঞ্চলের কৃষকগণ তাদের বেলে মাটির জমিতে বাদাম চাষ করছেন। চৈত্র মাসে বাদামের বীজ বপন করতে হয়। আড়াই থেকে তিন মাসের মধ্যে তা আবার কৃষকের ঘরে উঠে।
বিভিন্ন ইউনিয়নে কর্মরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি বছর বাদামের বাম্পার ফলন হওয়ায় উপজেলার অন্তত ৭ শতাধিক কৃষক ব্যাপক লাভবান হয়েছেন।
কৃষকরা জানান, খরচবিহীন এই ফসল কৃষককে দিচ্ছে প্রচুর অর্থ। সুস্বাদু ও ভিটামিন সমৃদ্ধ এই ফসল একদিকে যেমন মুখরোচক খাদ্যে জোগান দিয়ে থাকে অন্যদিকে তেলের চাহিদা পূরণ করে। বাদাম ক্ষেত থেকে কচিপাতা কেটে কৃষকরা তাদের গরু-ছাগলকে খাওয়ান। এতে গরু তাড়াতাড়ি স্বাস্থ্যবান হয় বলে কৃষকরা জানিয়েছেন।
চরকামারিয়া গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন জানান, তিনি এবার ২ একর জমিতে বাদাম চাষ করেছেন হেলাফেলা ভাবে। কেননা অন্যান্য ফসলের মত বাদামের জমিতে সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয় না। করতে হয় না বাড়তি নিরানির কাজ। শুধু সময়মত বীজ বুনে ফসলের অপেক্ষায় থাকা। কথা বলে জানা যায়, চরকামারিয়া গ্রামের সিরাজ উদ্দিন এক একর, চলআলগী গ্রামের ফজলুল হক এক একর, বালুয়া কান্দার সোহরাব উদ্দিন এক একর ও একই গ্রামের হান্নান তিন একর জমিতে বাদাম চাষ করেছেন। ফলনও হয়েছে বেশ ভাল। বাদাম ঘরে তোলার জন্য পুরুষের পাশাপাশি মাঠে নেমেছেন নারীরাও। গফরগাঁওয়ের প্রসিদ্ধ সালটিয়ার বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি মণ কাচা বাদাম (৪০ কেজি) ১ হাজার ৯০০ থেকে ২ হাজার ও শুকনো বাদম ২ হাজার ২ থেকে ২০০ হাজার ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার এস এস ফারহানা হোসেন জানান, গফরগাঁওয়ে চলতি মৌসুমে বাদামের বাম্পার ফলনের পাশাপাশি লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে গেছে। বাদাম আবাদে সেচ,সার ও শ্রমিক খরচ কম হওয়ায় কৃষকেরা দিন দিন বাদাম আবাদের দিকে দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। কৃষকরা দামও পাচ্ছেন ভালো।