লন্ডনের পাতাল রেলে ঘরে তৈরি বোমার বিস্ফোরণের পর আরও হামলার আশঙ্কায় ব্রিটেনজুড়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে সেনা ও সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে ব্রিটেনে ‘সংকটকালীন’ সর্বোচ্চ সতর্কতা মাত্রা জারি করেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স।মে মাসে আরিয়ানা গ্রান্ডের কনসার্টে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ২২ জন নিহতের পর সর্বশেষ এ ধরণের সতর্কতা জারি হয়েছিল। টেলিভিশনে প্রচারিত ভাষণে মে ব্রিটেনের রাস্তায় সশস্ত্র পুলিশ দেখে জনগণকে আতঙ্কিত না হতে অনুরোধ করেছেন।
ব্রিটেনের রাস্তায় সচরাচর এ দৃশ্য দেখা যায় না। “এটি (সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি) অত্যন্ত যৌক্তিক ও বিচক্ষণ পদক্ষেপ যা বোমা হামলার তদন্তের মধ্যেও অতিরিক্ত নিরাপত্তা ও ভরসা যোগাবে,” বলেন তিনি। সতর্কতার মাত্রা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পর শনিবার ওয়েস্টমিনস্টারের সরকারি বিভাগগুলোর কাছাকাছি লন্ডনের রাস্তায় সশস্ত্র পুলিশকে টহল দিতে দেখা গেছে। ওয়েম্বলির ন্যাশনাল স্টেডিয়ামসহ প্রিমিয়ার লীগের ফুটবল ম্যাচের মাঠগুলোর চারপাশেও ছিল কড়া নিরাপত্তা।
জনগণকে আশ্বস্ত করতে ব্রিটিশ পুলিশের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা ক্রেসিডা ডিকও টেমস নদীর দক্ষিণ তীরসংলগ্ন এন্টারটেইনমেন্ট জেলাগুলোর টহলে সহকর্মীদের সঙ্গে যোগ দেন। “গতকাল আমরা একটি কাপুরুষোচিত ও নির্বিচার হামলা লক্ষ্য করেছি, যা অনেক লোকের প্রাণ কেড়ে নিতে পারতো; অন্য হামলাগুলো লন্ডনকে দমাতে পারেনি, এটাও পারবে না,” বলেন তিনি। হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পুলিশ শনিবার ডোবারের একটি বন্দরের বহির্গমন এলাকা থেকে ১৮ বছর বয়সী এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে।
দক্ষিণপূর্ব উপকূলের এই ফেরি পোর্টটি থেকে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মধ্যে চলাচলকারী যাত্রীবাহী জাহাজগুলো ছাড়ে। ওই যুবককে গ্রেপ্তারের পর কর্মকর্তারা বন্দর এলাকার একাংশ খালি করে ফেলেন এবং কিছু জিনিস উদ্ধার করেন; যদিও এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি পুলিশ।এর কয়েক ঘণ্টা পর পুলিশ দক্ষিণ-পশ্চিম লন্ডনের একটি বাড়িতেও অভিযান চালায়। সতর্কতার অংশ হিসেবে ওই বাড়িটির আশপাশের এলাকাও খালি করে ফেলা হয়।
সানবেরির সুবারবান স্ট্রিটের ছিমছাম ওই বাড়িতে ফরেনসিক কর্মকর্তাদের প্রবেশ করতে দেখা যায়। সানবেরি থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরেই পারসন্স গ্রিন ট্রেন স্টেশন, যেখানে শুক্রবার সকালে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটে। ওই বিস্ফোরণে কেউ নিহত না হলেও অগ্নিদগ্ধ ও হুড়োহুড়িতে অন্তত ৩০ জন আহত হন।
ঘরে তৈরি বোমাটি একটি টাইমারের সঙ্গে আটকানো ছিল বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে; বিস্ফোরণের পর সেখানে আগুন ধরে যায়। বোমাটি পুরো মাত্রায় বিস্ফোরিত হলে তা অনেকেরই প্রাণ কেড়ে নিত বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা। বিভিন্ন ছবিতে ট্রেনের বগির মেঝেতে সামান্য জ্বলে যাওয়া প্লাস্টিকের একটি বালতিতে বিস্ফোরকটি দেখা গেছে, যার উপরের শপিং ব্যাগ দিয়ে মোড়ানো অংশ থেকে বেরিয়ে রয়েছে বেশ কয়েকটি তার।
বোমা হামলার সঙ্গে একাধিক ব্যক্তি জড়িত ছিল কি না তা খুঁজে দেখছে পুলিশ।“যদি আরও কেউ এই হামলার সঙ্গে জড়িত থাকে তবে তাকে খুঁজে বের করা আমাদের দায়িত্ব এবং এখনকার ‘সংকটকালীন’ অবস্থার অন্যতম কারণও এটি,” বলেন ব্রিটিশ পুলিশের সন্ত্রাসবিরোধী ইউনিটের জ্যেষ্ঠ জাতীয় সমন্বয়ক নেইল বাসু। হামলার সঙ্গে জড়িতসন্দেহে একজনের গ্রেপ্তারে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাম্বার রুড।
“গ্রেপ্তারের ঘটনাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশের অগ্রগতি বেশ ভালো, যদিও অভিযান এখনো শেষ হয়নি।শুক্রবারের হামলায় ব্যবহৃত বিস্ফোরকটি শক্তিশালী আইইডি (ইম্প্রোভাইজ এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) ছিল বলেও জানান মন্ত্রী। “ভাগ্য ভালো যে ক্ষতির পরিমাণ ছিল সামান্য,” বলেন তিনি।