ভারতীয় রাজনীতিতে আরও এক নক্ষত্রপতন। সুষমা স্বরাজের পর বিজেপির আরও এক শীর্ষ নেতার জীবনাবসান। শুধু একজন নেতা বা মন্ত্রীই নন, বিজেপির অন্যতম ভরসার জায়গা ছিলেন তিনি।
গত কয়েকদিন ধরে এইমস হাসপাতালে চলিল লড়াই। অবশেষে হার মানলেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর।
অসুস্থতার কারণেই এবছর নির্বাচন ও মন্ত্রিসভা থেকে দূরে ছিলেন তিনি। গত পাঁচ বছরের মোদী সরকারের মন্ত্রিসভায় তিনি ছিলেন অর্থমন্ত্রী। শুধু অর্থমন্ত্রীই নন, কিছুদিনের জন্য প্রতিরক্ষামন্ত্রকের দায়িত্বও সামলেছিলেন তিনি। শুধু নিছক মন্ত্রীই নন, মোদী-অমিত শাহের অন্যতম ভরসা ছিলেন জেটলি।
দীর্ঘদিন ধরেই তাঁর চিকিৎসা চলছিল। তবে গত ৯ আগস্ট গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে এইমস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে রাখা হয়েছিল। লাইফ সাপোর্টে ছিলেন তিনি। গত কয়েকদিনে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বিজেপির সব শীর্ষস্তরের নেতাই তাঁকে দেখতে ছুটেছিলেন এইমসে।
রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হলেও পেশাগত ভাবে আইনজীবী ছিলেন অরুণ জেটলি। প্রথম মোদী সরকারের অর্থমন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। এছাড়াও প্রতিরক্ষামন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়ও সামলেছেন বিভিন্ন সময়ে। সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট ছিলেন তিনি।
শুধু মন্ত্রিত্বই সামলাননি তিনি, ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত অরুণ জেটলি। এবিভিপি করতেন দিল্লি ইউনিভার্সিটিতে।
১৯৫২ সালের ২৮ ডিসেম্বর দিল্লিতে জন্ম তাঁর। সেন্ট জেভিয়ার্সে পড়াশোনা শেষ করে শ্রী রাম কলেজ থেকে বি কম পাশ করেন তিনি। এরপর দিল্লি ইউনিভার্সিটি থেকে আইন নিয়ে পড়াশোনা করে এলএলবি ডিগ্রি পান। সেখানেই রাজনতির শুরু। ছাত্র সংসদের প্রেসিডেন্টও হয়েছিলেন তিনি। এমার্জেন্সির সময় আটক করা হয়েছিল তাঁকে। ১৯ মাস জেলে ছিলেন তিনি। এছাড়া, দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাজ নারায়ণ ও জয়প্রকাশ নারাণ যে লড়াই শুরু করেছিলেন, তাতেও ছিলেন জেটলি। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে জন সঙ্ঘের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি।
প্রথমে দিল্লি এবিভিপি-র প্রেসিডেন্ট ও এবিভিপি-র অল ইন্ডিয়া সেক্রেটারি করা হয় তাঁকে। এরপর যুব বিজেপির দিল্লির ইউনিটের সেক্রেটারিও হয়েছিলেন।
আইনজীবী হিসেবে তিনি প্র্যাকটিস করেছেন সুপ্রিম কোর্টে। কাজ করেছেন দিল্লি হাইকোর্টেও। একাধিক বইও লিখেছেন তিনি। পেপসিকো, কোকা কোলার মত সংস্থার জন্য আইনি লড়াই করেছে তিনি।
১৯৯৯ লোকসভা নির্বাচনের সময় বিজেপির মুখপাত্র নির্বাচিত হন জেটলি। ৯৯-তে বাজপেয়ী সরকারের আমলে প্রতিমন্ত্রী করা হয় তাঁকে। ২০০০ সালে আইন মন্ত্রীর ভূমিকা পালন করেন তিনি। ২০০০-এই তিনি পূর্ণমন্ত্রী হন। আইনমন্ত্রী, জাহাজমন্ত্রীও ছিলেন তিনি।
২০০৯-এ তাঁকে রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা নির্বাচিত করেন আদবানী। ২০১৪-তে কংগ্রেসের কাছে ভোটে হেরে যান তিনি। রাজ্যসভায় নির্বাচিত হন।
মোদী সরকারের অর্থমন্ত্রী করা হয় তাঁকে। এরপর মনোহর পারিক্কর অসুস্থ থাকাকালীন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলেছিলেন তিনি। ২০১৯-এ অসুস্থতার জন্য ভোটে লড়েননি তিনি।
জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী গিরধারী লাল ডোগরার মেয়ে সঙ্গীতাকে বিয়ে করেন জেটলি। তাঁদের দুই সন্তান- রোহন ও সোনালি। দু’জনেই পেশায় আইনজীবী।