রোগশয্যায় দীর্ঘকাল কাটানোর পর আজ প্রয়াত হলেন কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি। সোমবার বেলা১২টা বেজে ১০ মিনিটে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন রায়গঞ্জ থেকে উঠে আসা এককালের এই দাপুটে ছাত্রনেতা।
২০০৮ সালের ১২ অক্টোবর হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। কার্যত সেই সময় থেকেই এদিন পর্যন্ত কোমায় আচ্ছন্ন ছিলেন তিনি। ২০০৮ থেকে ২০১১ পর্যন্ত দিল্লির এইমসে ভর্তি থেকেছেন প্রিয়রঞ্জন। অবস্থার তেমন উন্নতি না ঘটায় তাঁকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিত্সকরা। তারপর থেকেই কার্যত বাড়িতে আবদ্ধ ছিলেন তিনি। তবে, গত কয়েকদিন ধরে তাঁর অবস্থার অবনতি হতে থাকে আরও। এরপরই তাঁকে ভর্তি করা হয় দিল্লির অ্যাপলো হাসপাতালে। সেখানেই সোমবার বেলা ১২টা বেজে ১০ মিনিটে মৃত্যু হয় তাঁর। মৃত্যুকালে প্রিয়রঞ্জনের বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। মৃত্যুর সময় হাসপাতালে হাজির ছিলেন তাঁর স্ত্রী দীপা দাশমুন্সি ও একমাত্র ছেলে।
ছাত্রাবস্থা থেকেই সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি। ১৯৭০ সালে যুব কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্ব পান তিনি। ১৯৭১ সালে প্রথম সংসদীয় রাজনীতিতে প্রবেশ। ওই বছরই লোকসভা নির্বাচনে দক্ষিণ কলকাতা থেকে জয়ী হন প্রিয়রঞ্জন। ১৯৮৪ সালে ফের হাওড়া লোকসভা থেকেও জয়ী হয়েছিলে তিনি। যদিও ১৯৮৯ ও ১৯৯১ সালের নির্বাচনে হাওড়া থেকেই পরাজিত হয়ে ফিরতে হয় এই নেতাকে। এরপর ১৯৯৬ থেকে ২০০৪ সালের নির্বাচন পর্যন্ত টানা জিতে এসেছেন প্রিয়রঞ্জন। ১৯৯৬ সালে হাওড়া থেকে লড়াই করেন। তবে, ১৯৯৯ ও ২০০৪ সালে রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্র থেকে লড়াই করে জিতেছেন তিনি।
শুধুমাত্র সাংসদ নন, কেন্দ্রে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদ সামলেছেন প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি। ১৯৮৪ সালে তিনি প্রথমবার মন্ত্রী হন। বাণিজ্য বিষায়ক মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে সে সময়ে দায়িত্ব পেয়েছিলেন তিনি। এরপর ২০০৪ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ইউপিএ-১ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার এবং সংসদ বিষয়ক মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলান প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি। মন্ত্রী থাকাকালিনই ১২ অক্টোবর ২০০৮ সালে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। সেই থেকেই কোমায় আচ্ছন্ন ছিলেন প্রিয়রঞ্জন। ফুটবলঅন্ত প্রাণ হিসেবে সুপরিচিত এই বঙ্গসন্তান দীর্ঘ ২০ বছর ধরে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের সন্মানিক সভাপতির পদও অলঙ্কৃত করেছেন।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের দায়িত্বে থাকাকালিন তিনি তিন মাসের জন্য ভারতে দুটি বিদেশি বিনোদন চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করে দেন। সেখানে আপত্তিকর বিষয় দেখানো হচ্ছিল বলে অভিযোগ তুলেই তা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিতর্ক ছড়ায়। রাজ্যেও বাম শাসনকালে প্রিয়রঞ্জন ছিলেন প্রতিবাদের অন্যতম মুখ। তাঁর হাত ধরেই পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মতো বহু নেতা সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন।
প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে রাজনৈতিক মহলে। ঘরের ছেলেতে হারিয়ে বিশেষভাবে শোকগ্রস্থ ভারতের জাতীয় কংগ্রেস। তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।