প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতা নেয়ার পর দূর্নীতি ও কালোটাকা রুখতে ভারতে চলমান পাঁচশত ও হাজার টাকার নোট বাতিল ঘোষণা করেন। ৮ নভেম্বর ভারতে পাঁচশ’ ও এক হাজার টাকার নোট বাতিলের বর্ষপূর্তি হতে যাচ্ছে ।এই বর্ষপূর্তিতে সরকার পক্ষ ও বিরোধীদলীয় জোট পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
আগামী ৮ নভেম্বর ওই দিন ‘কালো দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ১৮ বিরোধী দলের সমন্বয় কমিটি। অন্যদিকে সরকার ও বিজেপি’র পক্ষ থেকে ‘কালো দিবস-’র পাল্টা ‘কালো টাকা বিরোধী দিবস’ পালনের ডাক দেয়া হয়েছে।
নোট বাতিলের সিদ্ধান্তে সাধারণ মানুষ যে ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ও নোট বাতিলের মূল উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হয়েছে তা বোঝাতেই কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীরা ‘কালো দিবস’পালনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন বলে দাবি করা হয়।
ওই ইস্যুতে গতকাল (বুধবার) সরকারপক্ষ ও বিরোধীদলীয় নেতাদের পক্ষ থেকে পাল্টাপাল্টি বিবৃতি দেয়া হয়েছে।
সিপিআইএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত কালো টাকার মালিকদের কালো টাকা (অবৈধ টাকা) সাদা করার সুযোগ করে দিয়েছে।
অন্যদিকে, কংগ্রেসের মুখপাত্র আনন্দ শর্মা বলেছেন, দেশবাসীর কাছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ক্ষমা চাওয়া উচিত। অর্থনীতি সম্পর্কে দেশবাসীকে যা বলা হচ্ছে তা ঠিক নয়।
কংগ্রেসের দাবি, গায়ের জোরে চাপিয়ে দেয়া ওই সিদ্ধান্তে অর্থনীতির কোমর ভেঙে গেছে। বিশেষ করে অসংগঠিত ক্ষেত্রে বহু চাষি, শ্রমিক, মজদুররেরা কাজ হারিয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘নোট বাতিল সবচেয়ে বড় দুর্নীতি, এর তদন্ত হওয়া উচিত। নোট বাতিলে কালো টাকা আজ পর্যন্ত উদ্ধার হয়নি। দুর্নীতি বন্ধ হয়নি, সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধ হয়নি। নোট বাতিলের ফলে সকলের ক্ষতি হয়েছে, লাভ শুধু একটা দলেরই হয়েছে, তাদের যত ব্ল্যাক মানি সব সাদা হয়ে গেছে। নিজেদের টাকা বিদেশে মজুত করেছে।’
‘কালো দিবস-’র পাল্টা ‘কালো টাকা বিরোধী দিবস’ পালনের ডাক দিয়েছে বিজেপি। আজ (বৃহস্পতিবার) থেকে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত রোজই নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জনমত গঠন ও নোট বাতিলের সুফল তুলে ধরবেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা।
বিজেপি’র সিনিয়র নেতা ও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেছেন, ‘কালো টাকা আটকাতেই ওই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। কংগ্রেস এখন সোচ্চার হলেও, ক্ষমতায় থাকাকালীন তারা কালো টাকা রুখতে একটি পদক্ষেপও করেননি কেন?’ জেটলি বলেন, নগদের পরিমাণ কমানো, করের পরিধি বাড়ানো, সন্ত্রাসীদের তহবিলের জোগান কমানো ও ডিজিটাল লেনদেন বাড়ানোই উদ্দেশ্য ছিল। নোট বাতিলের উদ্দেশ্য সার্বিকভাবে সফল হয়েছে বলে তিনি দাবি করেছেন।
কিন্তু জেটলির সাফাইকে নাকচ করে দিয়ে কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা আনন্দ শর্মা বলেন, ‘কালো টাকা উদ্ধারের উদ্দেশ্যে যদি নোট বাতিল করা হয় তাহলে সেই কালো টাকা গেল কোথায়? সরকারই প্রকারান্তরে স্বীকার করেছে ৯৯ শতাংশ টাকা ফিরে এসেছে।’
‘মানুষকে পথে বসিয়ে, জুলুম করে সরকার এখন উৎসব পালন করতে চাচ্ছে এবং মানুষই তার বিচার করবে’ বলেও আনন্দ শর্মা মন্তব্য করেছেন।