ডিএমপি নিউজঃ রাজধানীর মালিবাগ এলাকা থেকে ভুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, তার সহযোগী ও চারজন ভুয়া এমবিবিএস ডাক্তারকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এর গোয়েন্দা ওয়ারী বিভাগ।
গ্রেফতারকৃতরা হলো ভুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ডাঃ মোঃ নুরুল হক সরকার ওরফে শেখ গনি সরকার ও তার সহযোগী মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন। আর ভুয়া ডাক্তাররা হলো ডাঃ মোঃ সাইদুর রহমান ওরফে নজরুল, ডাঃ মোঃ মাহফুজুর রহমান ওরফে মাহফুজ, ডাঃ মোঃ আমান উল্ল্যাহ ও ডাঃ দেবাশীষ কুন্ডু।
এসময় তাদের হেফাজত থেকে ভুয়া সনদপত্র, টেস্টিমোনিয়াল, ট্রান্সক্রিপ্ট, রেজিস্ট্রেশন কার্ড, এ্যাডমিট কার্ড, নকল সিল, ৪টি বিভিন্ন ব্যাংকের চেক, ভুয়া সনদ প্রদানের চটকদার বিজ্ঞাপনের পেপার কাটিং ও লিফলেট, প্রেসক্রিপশন, ভিজিটিং কার্ড, নব দিগন্ত ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড ডক্টর্স চেম্বারের প্যাডের এক কপি, ১টি সিপিইউ, একটি মনিটর, একটি কিবোর্ড ও একটি প্রিন্টার জব্দ করা হয়। কম্পিউটারটি এসকল ভুয়া সনদপত্র তৈরি ও ছাপার কাজে ব্যবহৃত হতো।
বুধবার (৬ এপ্রিল ২০২২) রাজধানীর মালিবাগের প্যারামাউন্ট টাওয়ারে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা ওয়ারী বিভাগের ওয়ারী জোনাল টিম।
আজ বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল ২০২২) দুপুর ১২:৩০টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার, বিপিএম (বার)।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, গ্রেফতারকৃত প্রতারক চক্রটি বিগত প্রায় দুই দশক ধরে ‘প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলোজি’ নামক ভুয়া প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সার্টিফিকেট বিক্রয়ের ব্যবসা করতো। প্রতারণার উদ্দেশ্যে তারা ভুয়া ওয়েবসাইটে এবং বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চটকদার বিজ্ঞাপন দিতো। বিজ্ঞাপনে কম্পিউটারাইজড ক্যাম্পাসের কথা উল্লেখ থাকতো, যা বাস্তবে অস্তিত্বহীন। তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভুয়া আদেশ ও একটি হাইকোর্টের জাল রিট প্রদর্শন করতো। তাদের রোগী দেখার চেম্বার ছিল অত্যাধুনিক উপায়ে সজ্জিত। নামফলক ছিল নানান গুরুত্বপূর্ণ ডিগ্রি সম্বলিত। তারা MBBS, BDS, MPhil, PHD, Engineering, Advocateship এই ধরনের ১৪৪টি বিষয়ের উপরে অসংখ্য সার্টিফিকেট প্রদান করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে।
তিনি বলেন, বাস্তবে ‘Premier university of technology’ এর কোন অস্তিত্ব নাই। একইভাবে ডাঃ মোঃ নুরুল হক সরকার নিজেকে Pitch Blende university of Science and technology (PUST) এবং Peace Land university নামক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতো।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, ডাঃ মোঃ সাইদুর রহমান ওরফে নজরুল, দেবাশীষ কুণ্ডু, ডাঃ মোঃ আমান উল্ল্যাহ, মোঃ মাহফুজুর রহমান ওরফে মাহফুজসহ অসংখ্য ব্যক্তিদেরকে ভুয়া ডাক্তারি সনদপত্রসহ অন্যান্য বহু বিষয়ে ভুয়া সনদপত্র প্রদান করেছে। ভুয়া ডাক্তার এমএন হক তার পরিবারের সদস্যসহ অন্যান্য সহযোগীদের সহায়তায় ভুয়া সনদপত্র প্রদানের একটি সংঘবদ্ধ চক্র গড়ে তোলে। যে চক্রটি কোন রকম পরীক্ষা, ক্লাস ও বৈধ অনুমোদন ছাড়াই টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন বিষয়ে ভুয়া ও জাল সার্টিফিকেট বিক্রয় করেছে।
বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের চিকিৎসা গ্রহণ ও নিজেদের সন্তানদের যেকোন মেডিক্যাল অথবা ডেন্টাল কলেজে ভর্তির আগে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) এর ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন নাম্বার ক্ষেত্র বিশেষে UGC (University Grants Commission) এর অনুমোদিত কি-না তা যাচাই করার পরামর্শ প্রদান করেন তিনি।
ভুয়া ডাক্তারি সনদ নিয়ে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়া ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে চক্রের সাথে জড়িত অন্যান্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে মর্মে জানান ডিবির এ কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে রমনা থানায় মামলা রুজু হয়েছে।
গোয়েন্দা ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন, পিপিএম এর নির্দেশনায় অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ তরিকুর রহমান এর সার্বিক তদারকিতে গোয়েন্দা ওয়ারী জোনাল টিম এর ইনচার্জ অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ আবু আশরাফ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে অভিযানটি পরিচালিত হয়।