ভোলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মাধ্যমে গত অর্থবছর (২০১৬-১৭) জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের ৩৫ হাজার ৬৫১টি পরিবারের মাঝে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। আর এর জন্য বিদ্যুতের লাইন নির্মাণ করা হয়েছে মোট ৮০৬ দশমিক ৯১ কিলোমিটার। ব্যয় হয়েছে ৮০ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
জানা গেছে, এই জেলায় ২০১৮ সালের মধ্যে প্রত্যেক ঘরে শতভাগ বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। ফলে বিগত অর্থবছরে জেলায় পল্লী অঞ্চলের অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর মাঝে ব্যাপক বিদ্যুতায়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১’শ ৫৯ দশমিক ৭৩ কি.মি. বিদ্যুৎ লাইন দিয়ে ৯ হাজার ২২৮টি পরিবারকে আলোকিত করা হয়েছে। দৌলতখান উপজেলায় ৮৮ দশমিক ২৩ কি.মি. লাইন স্থাপন করা হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে ৬ হাজার ৩৮০ জন গ্রাহকের মাঝে।
একইভাবে বোরহানউদ্দিনে ৮৬ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার লাইন নির্মাণ করে বিদ্যুৎ দেয়া হয়েছে ৪ হাজার ৩৪১ জন গ্রাহকের মাঝে। লালমোহনে ৮৪ দশমিক ৬৭ কি.মি. বিদ্যুৎ লাইন দিয়ে ৫ হাজার ১৭৬ টি পরিবারকে আলোকিত করা হয়েছে। তজুমুদ্দিনে ৯১ দশমিক ১৭ কি.মি. লাইনে বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়েছে ২ হাজার ৭২৮টি পরিবার। চরফ্যাসনে ২৮৩ দশমিক ৫৪ কি.মি. লাইন নির্মাণ করে ৭ হাজার ৭৯৮ জন গ্রহককের ঘর বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত করা হয়েছে।
জেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মো. কেফায়েত উল্লাহ জানান, সমগ্র জেলাকে শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় আনতে একটি মহা পরিকল্পনার মাধ্যমে কাজ করা হচ্ছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে দৌলতখান উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা হবে। পর্যায়ক্রমে সদরসহ অন্যন্য উপজেলাকেও শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় আনা হবে। এখানে ব্যাপক বিদ্যুতায়নের ফলে শহর ও গ্রামের ব্যবধান কমছে ও মানুষের জীবনমান উন্নত হচ্ছে।
এদিকে গত বছরে জেলায় নতুন নতুন এলাকায় বিদ্যুতায়ন করায় মানুষের মাঝে কর্মচাঞ্চল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে পূর্বে যেখানে সন্ধ্যার পর পরই ব্যবসা-বাণিজ্য, দোকান-পাট, হাট-বাজার বন্ধ হয়ে যেত। এক কথায় রাত ৮টার মধ্যেই গ্রামীণ জীবন ঘুমিয়ে পড়ত। আর এখন অন্ধকারের অভিশাপ কেটে গিয়ে আলোকিত গ্রামের পর গ্রাম। বিদ্যুতের আলোয় রাত ১১টার পরেও জমজমাট থাকে হাট-বাজার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো। শিক্ষার্থীরা রাত জেগে পড়া-লেখার সুযোগ পাচ্ছে। এতে করে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থারও পরিবর্তন আসছে।
বোরহানউদ্দিন উপজেলার কাচীয়া ইউনিয়নের চকঢোশ গ্রামের বাসিন্দা কাঞ্চন হাওলাদার, বশির কাজী, লুৎফর হোসেন ও কামাল গাজী বলেন, গত জানুয়ারি মাসে তাদের এখানে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। একসময় অন্ধকারের মধ্যে অনেক কষ্ট করলেও এখন তাদের সে কষ্ট কেটে গেছে। ছেলে মেয়েরা বিদ্যুতের আলোয় রাত জেগে লোখা-পড়া করছে। প্রচন্ড গরমে বৈদ্যুতিক পাখার বাতাসে আরাম করে ঘুমাতে পারছেন তারা।