মোবাইল ফোন ও টাওয়ারের ক্ষতিকর রেডিয়েশনের পরিমান মাপতে উদ্যোগ নিয়েছে বিটিআরসি। মোবাইল ফোনের টাওয়ার ও হ্যান্ডসেট থেকে নির্গত রেডিয়েশনের (বিকিরণ) মাত্রা পরিমাপ করার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কিনতে এবং একটি বিশেষ ভ্রাম্যমাণ ল্যাব প্রস্তুত করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। ওই ল্যাবের মাধ্যমে বিদেশ থেকে আমদানি করা মোবাইল ফোন হ্যান্ডসেটের গুণগত মানও পরীক্ষা করা হবে।
এরই মধ্যে স্পেসিফিকেশন তৈরি, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি ও টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করে যন্ত্রপাতি কেনা এবং সংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়নের করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। টেকনিক্যাল সাব-কমিটিতে আণবিক শক্তি কমিশন এবং বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপযুক্ত প্রতিনিধি সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করাসহ বিশেষজ্ঞ মতামত নেওয়ার জন্য বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিটিআরসির সর্বশেষ সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
বিটিআরসির সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, মোবাইল ফোন অপারেটরের বেজ ট্রান্সসিভার স্টেশন (বিটিএস) এবং হাই ফ্রিকোয়েন্সির কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি থেকে ক্ষতিকর ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক ফিল্ড (ইএমএফ) তৈরি হতে পারে। বাংলাদেশের মতো ঘন বসতিপূর্ণ দেশে ক্ষতিকর ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক ফিল্ড ছড়ানোর ঝুঁকি রয়েছে।
ইএমএফ-সংক্রান্ত গাইডলাইন প্রণয়ন এবং নিয়ন্ত্রণের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বিটিআরসির প্রতি হাইকোর্টের নির্দেশনাও রয়েছে। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী গাইডলাইন প্রণয়নের কাজ করছে বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন বিভাগ। এ ছাড়া মোবাইল ফোন অপারেটরদের টুজি, থ্রিজি লাইসেন্সের গাইডলাইনের বিভিন্ন অনুচ্ছেদে ক্ষতিকর ইএমএফ যেগুলো মানবদেহ ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর তা নিয়ন্ত্রণ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এর পরও কোথাও কোনো ক্ষতিকর ইএমএফ রেডিয়েশন বা অন্য কোনো হাই ফ্রিকোয়েন্সির যন্ত্র থেকে ক্ষতিকর ইএমএফ নিঃসরণ হচ্ছে কি না তা পরিমাপ করার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিটিআরসি।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ‘রেডিয়েশন পরিমাপের জন্য আমাদের ভ্রাম্যমাণ ল্যাবটি হবে আন্তর্জাতিকমানের। এ সংক্রান্ত একটি প্রপোজাল (প্রস্তাব) একনেকে অনুমোদনের জন্য শিগগির পাঠানো হবে। ’
বিটিআরসি চেয়ারম্যান আরো বলেন, ‘মোবাইল ফোন অপারেটরদের থ্রিজি লাইসেন্সের গাইডলাইনে বলা আছে, রেডিয়েশন এমন পর্যায়ে রাখতে হবে যাতে সাধারণ মানুষের ক্ষতি না হয়। আমরা ফোরজি লাইসেন্সের গাইডলাইনে এটি আরো স্পষ্ট করে দিতে যাচ্ছি। এতে এ বিষয়ে আইটিইউর স্ট্যান্ডার্ড রক্ষার শর্ত উল্লেখ থাকবে। এ ছাড়া আমরা প্রত্যেক মোবাইল ফোন অপারেটরকে চিঠি দিয়েছি, তাদের টাওয়ার থেকে নিঃসৃত রেডিয়েশন সহনীয় মাত্রায় রাখার ব্যবস্থা নিতে। ’
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, রেডিয়েশন পরিমাপক যন্ত্র দিয়ে মোবাইল ফোনের একটি টাওয়ারের রেডিয়েশন মাত্রা পরিমাপ করতে সময় লাগবে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। এ জন্য বিটিআরসি দুটি ইউনিট রেডিয়েশন পরিমাপক যন্ত্র কিনছে। দুটি টুলস বা যন্ত্রের দাম পড়বে প্রায় আড়াই কোটি টাকা। এ ছাড়া ওই যন্ত্র দুটি বহন করার জন্য এক কোটি টাকা মূল্যের দুটি গাড়ি কেনারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিটিআরসি।
গত ২২ মার্চ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে হাইকোর্টে দাখিল করা এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, বাংলাদেশে মোবাইল ফোন কম্পানির টাওয়ার থেকে নিঃসৃত রেডিয়েশনের মাত্রা উচ্চ পর্যায়ের, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এটা জনগণের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলছে। এ প্রেক্ষাপটে এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা জানাতে বিটিআরসির প্রতি নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট।
এর আগে মোবাইল ফোন টাওয়ারের রেডিয়েশন নিঃসরণ নিয়ে ২০১২ সালে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়েছিল এইচআরপিবির পক্ষ থেকে। আদালত রেডিয়েশনের মাত্রা এবং এর স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত প্রভাব খতিয়ে দেখতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যানকে বিভিন্ন মোবাইল ফোন কম্পানির কয়েকটি টাওয়ার পরিদর্শন করে রেডিয়েশন বিষয়ে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।